সুবীর
Published : 23 Dec 2011, 09:15 AM
Updated : 23 Dec 2011, 09:15 AM

অর্কিড (Orchid): Orchidaceae পরিবারভুক্ত যে কোন ফুল। যার নান্দনিক সৌন্দর্য ও দীর্ঘ সময় সতেজ থাকার গুন সৃষ্টিকর্তার একে মহিমা ছাড়া আর কিছুই না। এ জন্যই জগতে অর্কিড এর তুলনা শুধু অর্কিড-ই।

এদের গণ ও প্রজাতির সংখ্যা যথাক্রমে প্রায় ৭০০ ও ২০,০০০ এবং শীতলতম অঞ্চল ছাড়া গোটা বিশ্বে বিস্তৃত, আদ্র-ক্রান্তীয় এলাকায়ই অধিক। অর্কিড বহু বর্ষজীবী ঔষধী, পরাশ্রয়ী, ভুমিজ, কখনও শিলা-উভ্দিদ, মৃতজীবী। পরাশ্রয়ী সদস্যরা প্রধানত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের এবং ভুমিজ প্রজাতিগুলো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বাসিন্দা।
বাংলাদেশে প্রায় ২০০ প্রজাতির অর্কিডের বেশির ভাগই Dendrobium, Bulbophyllum, Elophia, Aeredis, Luisa, Vanda গণের অন্তর্ভুক্ত। সারা বছর কিছু কিছু অর্কিডে ফুল ফোটলেও জানুয়ারি-জুন হলো ফুল ফোটার সময় এবং সর্কাধিক মার্চ-এপ্রিল।

ব্যবসায়িক দিক থেকে লাভজনক হিসেবে বিবেচ্য প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে Dendrobium formosum, D. fumbriatum, D. primulinum, D. crepidatum, Rhyncostylis retusa, Aeredis odoratum.

কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী বিদেশী অর্কিড সংগ্রহ ও বিপণনে আগ্রহ দেখাচ্ছে।বাংলাদেশে যেসব অর্কিডের চাষ হয় তার মধ্যে ভূমিজ অর্কিড খুব সহজেই চাষ করা যায়। ভূমিজ অর্কিডের গুচ্ছমূল মাটিতে জন্মে এবং মাটি থেকেই রস ও খাদ্য গ্রহন করে।এ ধরনের অর্কিড কৃত্তিম অবস্থায় জন্মাতে হলে স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। যেমন যথোপযুক্ত উষ্ণতা, আদ্রতা ও ছায়াযুক্ততা বজায় রাখা এবং সুষ্ঠ জল নিকাশের ব্যবস্থা রাখা।

কয়েক প্রকার অর্কিডের বৈশিষ্ট্য:

ডেন্ড্রোবিয়াম (Dendrobium): এর অধিনে রয়েছে শতশত জাতি। অনেক গুলো ফুলের মাতার মতো মনে হয় এবং নিচের দিকে ঝুলে থাকে, এগুলোতকে সাধারণত ঝুলন্ত ঝুড়ি কিংবা টবে দেখা যায়।

এরান্ডিনা (Arundina) : এটি ভূমিজ অর্কিড, নলাকৃতি বিশিষ্ট। সেপ্টেম্বরে মোহনীয় গোলাপী ফুল ফোটে।

ভ্যানিলা (Vanilla) : টবে শ্যাওলায় ভালোভাবে জন্মানো যায়। এর বাউনির প্রয়োজন হয়। এর অনেক জাতি সবুজাভ সাদা ফুল দেয়। রাতে ফুলের সুগন্ধ ছড়ায়।

সিলোগাইন (Coelogyne): বাংলাদেশ ও ভারতের পাহাড়ে এটি দেখাযায়। এর ক্রিস্টেটা ও ওডোরেটিসিম জাতি বিশেষভাবে সুগন্ধযুক্ত ফুলের জন্য বিখ্যাত।

এপিডেন্ড্রাম (Epidendrum) : এরা প্রায় তিনশত জাতি রয়েছে। ফুলের াাকার ও সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। জাতিগুলো হচ্ছে নেমোরেল, স্কিনেরি ও প্রিজমেটি কার্পাস।

সাইর্টোপেরা (Cyrtopera) : বড় আকারের সোনালী ফুল ফোটে মে মাসে।

ভূমিজ অর্কিড চাষের পদ্ধতি:
ভূমিজ অর্কিডটব, পাত্র, ঝুলন্ত ঝুড়ি বা বাস্কেটে জন্মানো যায়। এসব টব বা বাস্কেট ১৫ সে.মি। গভীর হবে। এসব পাত্র থেকে জল বেড়িয়ে যাবার ব্যবস্থা রাখতে হবে। চাষের আগে পাত্রগুলো জীবানু মুক্ত করে নিতে হবে।

টব বা ঝুড়ির উপকরণ:
টব বা ঝুড়িতে কয়েক স্তরে উপকরণগুলো সাজাতে হবে।পাত্রের একেবারে তলায় থাকবে সুপারির আকারের কাঠকয়লা, তার উপরে থাকবে খোয়া বা সুরকি, তার উপরে পাথরকুচি তার পর নারকেলের ছোবড়া বিছিয়ে দিতে হবে। সর্বোপরে থাকবে বিশেষ ভাবে তৈরী মাটির মিশ্রণ। মিশ্রণটি টবের উপরের কানা হতে ৩ সে.মি. নিচে থাকতে হবে। এতে উপর থেকে জল দেয়ার সময় সার-মাটি নিচে পড়ে যাওয়ার আশংকা থাকবেনা।

সার-মাটির মিশ্রন তৈরী:
অর্কিড লাগানোর অন্তত ২৮-৩০ দিন আগে সার-মাটির মিশ্রণ তৈরী করে টবে ভরে রাখতে হবে। সার মিশানোর আগে মাটি চেলে নিতে হবে। মিশ্রণের অনুপাতহেবে নিন্মরূপ:
দো-আঁশ মাটি ১-১.৫ ভাগ,
পাতা পচাঁ সার ১ ভাগ,
গোবর সার ১ ভাগ,
হাড়ের গুড়া ৫ ভাগ।

চারা সংগ্রহ ও রোপণ:
অর্কিডের চারা সংগ্রহের জন্য কোন বিশ্বস্ত নার্সারী বেছে নিতে হবে। পাহাড়ি অঞ্চলে ভালো ভালো বিশ্বস্ত নার্সারীতে নানা ধরনের অর্কিডের চারা পাওয়া যায়। তাছারা মহানগরী ও তার আশে পাশেও চারা পাওয়া যায়।স্বয়ং পাহাড়ী এলাকা থেকেও অর্কিডের মূল বা কন্দ সংগ্রহ করা যায়।ঘড়ের মেঝেতে নারকেলের ছোবরা বিছিয়ে তাতে এগুলো বেশ কিছু দিন রেখে দিতে হবে। মাঝে মাঝে জল দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। ঘড়ের আবহাওয়া আদ্র রাখতে হবে, পরে মূল বা কন্দ থেকে নতুন কুঁড়ি বের হলে সেগুলো টবে বা ঝুড়িতে বসাতে হবে।
পরিচর্যা:

শীতকালে অর্কিডের বিশ্রাম কাল, এসময় অর্কিডের বৃদ্ধি বন্ধ থাকে। বর্ষাকালে অর্কিডের বৃদ্ধি ঘটে। শীতের পর প্রথম দিকে অল্প অল্প এবং পরে গাছ বাড়তে থাকলে স্প্রেয়ারের সাহায্যে প্রচুর জল সেচ দিতে হবে।

অর্কিডের ফুল ফোটা:
সাধারণত ফাল্গুনের শেষ সপ্তাহ থেকে চৈত্রের দিকে অর্কিডের ফুল ফোটে। ফুল আসার আগে গাছের গোড়ায় তরল জৈব সার দেওয়া ভালো। যেমন চাল ধোয়া জলে কিছু গোবর ও সরিষার খৈল সপ্তাহ খানেক পঁচাতে হবে। এই জলে ডিমের খোসা, মাছের আইঁশ, পিত্ত পচাঁ চা পাতাও মেশানো যায়। এক সপ্তাহ পর সার পচাঁ জল ছেকে অর্কিড প্রতি আধা লিটার করে প্রয়োগ করতে হবে।

অর্কিডের পোকাও বালাই দমন:
পিপঁড়া ও পোকা মাকড়ের উপদ্রপ থেকে অর্কিডকে বাচাতে হলে ক্লোরোপাইরাস বা সেভিন পাউডার ছড়িয়ে দিতে হবে।