আগে জীবন না জীবিকা – কোনটা?

সুবির চৌধুরী
Published : 5 August 2015, 04:02 AM
Updated : 5 August 2015, 04:02 AM

জীবিকার ক্ষতি হলে কি জীবন বাঁচে?

মূলত মধ্যবৃত্ত ও নিন্ম বৃত্ত পরিবারগুলো ত্রিচক্রযানের উপর নির্ভরশীল। মধ্যবৃত্তদের যুগযুগের মাধ্যম হলো ত্রিচক্রযান। আর নিম্নবৃত্তরা ত্রিচক্রযান চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।

যদি ৩০০০ কিলোমিটার রাস্তায় ত্রিচক্রযান বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এটা সরাসরি নিম্ন বৃত্তের উপার্জনে আঘাত হানবে। এই আঘাতের পরিমান টা হবে অনেক বড়। কারণ যে ৩০০০ কিলিমিটার রাস্তা বন্ধ করা হচ্ছে সেই ৩০০০ কিলোমিটার তাদের উপার্জনের প্রধান উত্স। তাই তাদের উপার্জন কমে যাবে। সেটা এমন কমতে পারে যে অনেকে হয়ত ওই পেশা টা ছেড়ে দিতে হবে।

মধ্য বৃত্তের জীবন টা চলে এক্কেবারে রুটিন অনুসারে। তাদের এই রুটিন জীবনে ত্রিচক্রযান একটা অপরিহার্য যানবাহনে পরিনত হয়েছে। এটা অপরিহার্য এই কারণে যে ত্রিচক্রযান বেবহার করে যে সুবিধা পায় তা অন্য কোনো যান বেবহার করে পাবে না। এই ত্রিচক্রযান তাদের সময় বাচায় ও খরচ অল্প হবার কারণে তাদের জন্য সুবিধা জনক হয়। তাই এটা বন্ধ হলে তাদের হয় যুগাযুগ সময় বাড়বে না হয় যোগাযোগ খরচ বাড়বে। মধ্য বৃত্তদের যেমন রুটিনে সামান্য বেয়াঘাত হলে সেটা মারাত্মক হয় তেমনি সামান্য খরচ বাড়লে সেটা মারাত্মক অর্থনৈতিক সমসার মুখোমুখি হতে হয়।

তাছাড়া দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ও কিছুটা হলেও এর প্রভাব পড়বে। যখন দুইটা শ্রেনীর কিছু অংশের উপার্জনে আঘাত আসবে তখন সেটা জাতীয় অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও ক্ষতিকর হবে।

আমার পরিচিত অনেক ত্রিচক্রযান চালক আছে যারা বেশিরভাগ সময় মহাসড়কে চালায়। এই অবস্তায় ও তাদের কে অনেক অভাব করতে হয়। আমি প্রায় সময় ত্রিচক্রযান বেবহার করি। আমাকেও বেশিরভাগ সময় মহাসড়ক দিয়া চলতে হয়।

সুতরাং উভয় কেতরে দেখা যাচ্ছে যে ত্রিচক্রযান বন্ধ হলে মধ্য ও নিম্ন বৃত্তরা তাদের উপার্জনে বাধার সম্মুখীন হবে। যখন একটা পরিবারের উপার্জন কমে যাবে তখন ওই পরিবারে বিভিন্ন ধরনের সমসসা শুরু হবে। যেমন পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, দুশ্চিন্তা, পরিবারের সদস্যদের লেখাপড়ায় বেঘাত ইত্যাদি হবে। একটা পরিবার যখন উপার্জন কমে যায় তখন ওই পরিবারে বিস্সৃন্গ্কল অবস্তা তৈরী হয়। অনেক পরিবারের পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হবে। খাদ্যের অভাব, দুশ্চিন্তা তাদের কে রোগা ক্রান্ত করবে। পরিনামে মৃত্যু ঘটাবে। এতে হয়ত ডাইরেক্ট মৃত্যু ঘটে না কিন্তু পরোক্ষভাবে হাজার হাজার মৃত্যু ঘটাতে পারে।

মাননীয় মন্ত্রী, আপনার যুক্তিটা খুবই ভালো। কিন্তু ইমোসনাল যুক্তি। আপনার উদ্দেস্য মহত। আমরা ও চাইনা সড়ক দুর্গতনায় কোনো মৃত্যু। কিন্তু একটা মৃত্যু রক্ষা করতে গিয়ে হাজার মৃত্যু কে ডেকে আনা নিশ্চয় ভালো নয়। আপনি ইমোসনাল হয়ে ডাইরেক্ট মৃত্যু দেখতেছেন কিন্তু ইনডাইরেক্ট মৃত্যু কে দেখতেছেন না।

মাননীয় মন্ত্রী, দয়া করে তার বিকল্প চিন্তা করেন। ত্রিচক্রযান বন্ধ করা কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। একটি চেষ্টা করলে হয়ত বিকল্প কিছু বার হবে। হতে পারে সেটা ত্রিচক্রযান ড্রাইভার দের কে রাষ্ট্রীয়ভাবে আরো দক্ষ করে তুলা, অতবা স্পিড লিমিট দেয়া, অথবা ত্রিচক্রযানের জন্য আলাদা লেন দেয়া। আমি এ বেপারে কোনো বিশেষজ্ঞ নয়। তাই আমার সমাধান হয়ত সঠিক হবে না। কিন্তু আপনারা বিশেষজ্ঞ, আপনারা কিছু একটা করতে পারবেন।

মাননীয় মন্ত্রী, শরীলের কথাও অসুখ হলেই সেটা কেটে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। প্রথমে দেখতে হবে অসুখ তা কোন লেভেলে আছে।যদি নিরাময়যোগ্য লেভেল এ থাকে তাহলে চিকিত্সা করানো উচিত। তারপর দেখতে হবে অসুখটা শরীলের কোন অঙ্গে – হাতে, পায়ে না মাথায়? হাতে বা পায়ে হলে হয়ত একটু সহজে কেটে ফেলা যায় কিন্তু মাথায় হলে এত সহজে কেটে ফেলা যায় না। তারপর দেখতে হবে ওই অসুখের বর্তমান চিখিত্সা কি? তারপর দেখতে হবে চিকিত্সা খরচ। এভাবে অনেক কিছু যাচাই করে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।