জ্যাম-এ্যাপয়েন্টমেন্ট ভার্সেস একজন কর্মজীবী বাবা

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 13 Sept 2014, 07:45 PM
Updated : 13 Sept 2014, 07:45 PM

আজ, শনিবারেও যে ঢাকায় এত ট্র্যাফিক জ্যাম হবে সেটা আমি ভাবতে পারি নাই! দুই অক্তেই যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার দিয়ে ফ্লাই করেও কাজ শেষে সময়মত বাসায় ফিরতে পারলাম না। কারণ ফ্লাইওভারে গাড়ী ফ্লাই করলেও গাড়ীর চাকা ভূমি স্পর্শ করত: দেখলাম, যেই লাউ সেই কদু অবস্থা। সামনে শুধুই ধু ধু গাড়ী, ট্রাক আর রিক্সা। যাদের কেউ আছে ত্যাছড়া হয়ে দাঁড়িয়ে, কেউ কেউ ডানে-বামে ঘুরতে চেষ্টা করছে, কেউ আবার রং সাইড দিয়ে ঢুঁকে যাওয়ার যায়গা খুঁজছে, আর কেউ কেউ কিছু না পেড়ে জায়গায় দাঁড়িয়েই ড্রাইভ করার ঢংয়ে মোচড়ামুচড়ি খেলছে। কোথাও চোখ আঁটকে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত শুধু একই ছবি সব জায়গায়।

গাড়ীগুলোতে আঁটকে থাকা মানুষগুলোও বসে আছে অসীম ধৈর্য নিয়ে একেবারে নিরুপায় মুখে। কেউ কেউ গাড়ির জানালা দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে দিশাহীন পথে কোন ফাঁকফোকর পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখার জন্য- যাতে করে অন্তত নিজে ভাগা যায়! অপরদিকে গাড়ির বিকারহীন ড্রাইভাররা কোন আশা নাই জেনেও ক্রমাগত হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে- যেন এটা একটা মজার খেলা, চরম বিনোদন!

এই রকম অবস্থায়- আগে আমি রীতিমত গালিগালাজ করতাম, ট্রাফিক পুলিশ আর সরকারের গুষ্টি উদ্ধার করতাম। কিন্তু এখন আর তা করি না; কারণ আমি বুঝে গেছি আমরা নিজেরা; নিজ থেকে না বদলালে বা কেউ নিজের খেয়ে আমাদের পাছায় সকাল-বিকাল পালা করে কষে লাথি না মারলে- এই জ্যাম থেকে আগামী দুই, চার-পাঁচশো বছরেও আমাদের মুক্তি নাই!

আজ ছিল আমার মেয়েকে চোখের ডাক্তার দেখানোর দ্বিতীয় ধাপ। জ্যামে সময় লস করে তাড়াহুড়া করে বাসায় ফিরে; মেয়েকে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেখি ডাক্তার সাহেব নাই হয়ে গেছে, তখন বাজে সাড়ে ৫টার মত। হাসপাতালের সহকারীরা অনেক মায়া দেখিয়ে আমাকে আগামীকাল সকাল ৮ টায় বিনা এপয়েন্টমেন্টেই ডাক্তারের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দানের আশ্বাস দিলেন। এতে আমি কৃতার্থ হলাম এবং হাসিমুখে সেটা জানালামও তাদের!

আজকের জ্যামের কারণে আমি নগদ যে লসটা করলাম, সেটা হল মেয়ের চোখের ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্টটা মিস করলাম। যা আমি গত ১৫ দিন আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে অনেক ভেবেচিন্তে আজকের বিকাল সাড়ে ৪টায়  ঠিক করে রেখেছিলাম।

আবার কালকে যেতে হবে- এটা বলা যতটা সহজ, করাটা কিন্তু তত সহজ না; বিশেষ করে একজন বেসরকারি চাকুরীজীবী মানুষ হিসেবে। কর্মদাতার বরাদ্দকৃত কর্মের যথাযথ বাস্তবায়ন পূর্বক একজন পুরুষের বাবার ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করা আজ সত্যিই কঠিন। এরমধ্যে যদি ট্রাফিক জ্যামের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লস হয়, এপয়েন্টমেন্টের পর এপয়েন্টমেন্ট মিস করি।

আবার আমি আগামীকালও যে এটা মিস করবো না, তারই বা গ্যারান্টি কী?

১৩/০৯/২০১৪, রাত ১১.৫২