সুকান্ত’র ডিজিখাতা-২

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 21 Feb 2015, 06:37 PM
Updated : 21 Feb 2015, 06:37 PM

টিভির খবরে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জনাব গহর রিজভির কথা শুনলাম। শুনে ভাল লাগলো। তিনি বললেন, "বিএনপি সন্ত্রাস বন্ধ করলে সংলাপ হবে"। এটা একটা ভাল ডেভেলপমেন্ট। গত প্রায় ৪৫ দিন ধরে দেশবাসী বিএনপি জোটের ডাকা হরতাল, অবরোধ আর সন্ত্রাসের কবলে আছে। এতদিন ধরে দুপক্ষেরই অবস্থান ছিল- নট নড়ন চড়ন, 'তালগাছটা আমার' ধরণের।

একটা গল্প বলি-

একবার এক বানরের সামনে একটা বড় সাইজের কাঁচা বেল রেখে তার পালনকারী বলল, দেখ বানর! বেলটা যেন পুড়া গেলোস না?- বলে সে চলে গেল। কতক্ষণ পর বানর ভাবলো এটা তাকে ঠকানোর কৌশল; তাই তাকে এটা গিলতে না করা হইছে। যেই ভাবা সেই কাজ; বানরটা টপ করে বেলটা গিলে ফেললো।

পরদিন সকালে দেখা গেল বানরটা সমানে লাফাচ্ছে আর নিজের পাছায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে কি যেন বের করার চেষ্টা করছে কিন্তু তা বের হচ্ছে না!

— আমাদের বড় দল দুটোই একটা করে কাঁচা বেল গিলেছে; তবে একটার সাইজ বড় ছিল!

১৯/০২/২০১৫ রাতঃ ৮.৩৪

হটাৎ করেই ঢাকায় মশার উপদ্রব ব্যাপক বেড়েছে। এদের কামড়ের ঠ্যালায় মশারী ছাড়া ঘরে থাকাই দায়। কয়েল আর এরোসলের গন্ধ আবার আমার ভাল লাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। আর কি এক অজানা কারণে মশা আমাকে খুব বেশী কামড়ায়। আমি দেখেছি- অনেক মানুষের মধ্যে একটা মশা থাকেলেও সেটা আমাকেই টার্গেট করে উড়াল দেয়; ক্ষেপণাস্ত্রের মত ধেয়ে আসে আমার দিকে!

বর্তমানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুইভাগ। আমি কোন ভাগে বাস করি সেটা জানিনা! উত্তর না দক্ষিণ? কোন ভাগে আমি? তয় নো ম্যানস ল্যান্ডে পড়লে গেছি। মশা রে, তুই আমাকে মাপ কর!

— লিখতে লিখতেই একটা মারলাম আর কয়েকটা কানের কাছে প্যাঁ প্যাঁ করছে।

১৯/০২/২০১৫ রাতঃ ৮.৪২

আমার ফেসবুক ওয়ালে নাসার পেজে শেয়ার করা একটা খবর ও ভিডিও দেখলাম। তা থেকে জানলাম- তারা শনি গ্রহের ক্যাসিনি উপগ্রহে একটা আণবিক শক্তি-চালিত ডুবোজাহাজ পাঠানোর প্ল্যান করছে। উদ্দেশ্য সেখানে থাকা সমুদ্রের তলদেশ সম্পর্কে জানা। এক্ষেত্রে আমার অভিমত সেই আগের মতই; কিছু গাছের বীজ এর সাথে পাঠানো হোক আর কিছু সামুদ্রিক প্রাণ।

বলা তো যায় না? একদিন দেখা যাবে সেখানেও গাছ জন্মাইছে বা জলের প্লান্টন খেয়ে মাছ লাফাচ্ছে! হয়ত সেটা হবে একশত কোটি বছর পর। তো কি হইছে? এলিয়েন না খুঁজে নিজেরাই এলিয়েন হয়ে গেলে সমস্যা কি? বাঘ-ভাল্লুকের কাছে মানুষ তো এলিয়েনই! সাদাসিধে বড় বড় ডোডো পাখিকে খেয়ে বিলুপ্ত করেছে কে?

— এই মানুষ!

১৯/০২/২০১৫ রাতঃ ৮.৫৯

মেয়েকে বললাম, মা একটু ছোট ছোট করে লেখ!
মেয়ে উত্তর দিলো, বাবা তোমার চোখ ছোট ছোট তো; তাই বড় বড় করে লিখি।

— আমি বললাম, আচ্ছা!

২১/০২/২০১৫ দুপুরঃ ২.০০

আমি সাধারণত শুক্রবার বাজার করি। এই শুক্রবারের বাজার দর (ঢাকা) –

আলুঃ ১৫ টাকা/কেজি, ছিমঃ ২০ থেকে ৩০ টাকা/কেজি (পদ ভেদে), ফুল কপিঃ ২০টাকা/পিস, বাঁধা কপিঃ ১৫ টাকা/পিস, মিস্টি কুমড়াঃ ২০ টাকা/কেজি, পেঁয়াজঃ দেশী- ৪৫টাকা/কেজি; ইন্ডিয়াঃ ৪০টাকা/কেজি, কাঁচা মরিচঃ ৪০টাকা/কেজি। (মাছ/মুরগী ফ্রিজে আছে তাই এ সপ্তাহে কেনা লাগে নাই)- মোটামুটি এই রকম।

শুক্রবার বলে দোকানীরা একটু দাম বেশী চায় কারণ এইদিন সুখী আর আরামী পুরুষগুলো বউদের ঠ্যালা খেয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে। তাই কেনাটাই মুখ্য তাদের কাছে; দাম নয়!

অবাক হয়ে খেয়াল করছি- এই টানা হরতাল-অবরোধেও ঢাকার কাঁচা বাজারে এর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। ঢাকার বাইরে থেকে প্রতিদিন টাটকা সবজি আসছে; তাই ধরে নেওয়া যায়, যেভাবেই হোক ঢাকার তথা বাংলাদেশের লাইফ লাইন ঠিক আছে। আর এটা যারা ঠিক রেখেছে তাদের সবাই গরীব খেটে খাওয়া 'অসাধারণ' সব মানুষ।

যারা গুলশানের অফিসে বসে আরামে চেখে চেখে খাবার খাচ্ছে; আর যারা সেই খাবার সেখানে যাওয়া ঠেকানো নিয়ে হায় হুতাশ করছে- তারা কি জানে সেই খাবারের কাঁচামাল যারা সাপ্লাই দিচ্ছে তাদের কতজন পেট্রোল বোমায় পুড়ে মারা গেছে? কতজন পঙ্গু হয়ে যাবে আগামী দিনে?

— আচ্ছা সেই খাবারে কি পোড়া মাংসের ফ্লেভার আসে?

২১/০২/২০১৫ রাতঃ ১১.০০

আমাদের মহল্লায় একটা বাকড়খানির দোকান হয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। সেখানে দারুণ সব নোনতা আর চিনি দেওয়া বাকড়খানি বানায়। কয়দিন ধরে বউ-বাচ্চা মিলে সমানে তা খাচ্ছি। অফিসে যেতে খাই, আসতে খাই, বাজার করতে খাই। এ এক যাতা অবস্থা।

— আজ সকালে খেলাম গরম দুধে ডুবিয়ে; দারুণ স্বাদে!

সুকান্ত'র ডিজিখাতা-১

২১/০২/২০১৫ রাতঃ ১১.০৬