আজ সন্ধ্যা সোয়া আটটায় ট্র্যাফিক জ্যামে আঁটকে থাকতে থাকতে একসময় বিরক্ত হয়ে বাস থেকে নেমে পড়লাম। সামনে এগোতেই মিরপুর দশ নম্বর গোল চত্বরের আগে; উত্তরা সিটি কর্পোরেশনের ‘ময়লাটানা গাড়ি’ রাখার ডিপোটার সামনে একটা জটলা দেখে উঁকি দিলাম। দেখলাম, একজন মানুষের বিভৎস দেহ পড়ে আছে রাস্তার মাঝখানে। বাসের চাকায় থেঁতলে যাওয়া জলজ্যান্ত মানুষটির রক্তাক্ত দেহটার পাশে পড়ে আছে কাঁটা ডাবের মত মাথার খুলিটার অর্ধেকটা অংশ। তাজা রক্ত গড়িয়ে পাশের ড্রেনের দিকে যাচ্ছে। ছিন্নভিন্ন দেহটার পাশেই প্যাসেঞ্জার-ড্রাইভারবিহীন সেফটি পরিবহনের গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত এই গাড়ি থেকেই মানুষটি নেমেছিলেন কিন্তু বামদিক দিয়ে আরও একটা গাড়ী এসে তাকে চাপা দিয়ে গেছে।
অনেক মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে একের পর এক ছবি তুলছে; কেউ কেউ করছে ভিডিও। আমি পুড়োটা না দেখেই ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। একটু পরই দেখলাম একজন মধ্যবয়সী পুরুষ সেই মৃতদেহটি দেখে একের পর এক উটকি দিচ্ছে আর ঢুলতে ঢুলতে হাঁটছে; পড়তে পড়তে কোনরকমে ফুটপাথে উঠতে চাচ্ছে সে, কিন্তু পাড়ছে না। পথেরই অন্য একজন মানুষ তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে ইনি মৃত মানুষটির দেহটা দেখার লোভ সামলাতে পারেনি কিন্তু তার যে এই দৃশ্য সহ্য করার ক্ষমতা হয়নি; সেটা সে বোঝেনি। আমি দেরী না করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম; শুনলাম পুলিশের বাঁশি বাজছে।
পিছনে পরে থাকলো- একজন মৃত মানুষের জীবন্ত দেহ; দেহটা সম্ভবত তখনো একটু একটু করে কাঁপছে আর ঢাকার রাজপথ বেঁয়ে তারতাজা রক্তধাঁরা গড়িয়ে যাচ্ছে ড্রেনের দিকে!
২০/০৬/২০১৫, রাতঃ ১০.৪৫
মোঃ আলাউদ্দীন ভুঁইয়া বলেছেনঃ
অনভূতিগুলো নিতান্তই ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুর সংবাদও খুব স্বাভাবিক বলে মনে হয়।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
আসলেই তাই! ধন্যবাদ!
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
আমরা তুচ্ছ এবং মূল্যহীন!
খুব খারাপ লাগে যখন দেখি ‘পথের পথিক’ আর ‘পথের ধূলো’ এই দুইয়ের মাঝে পৃথিবী কোন পার্থক্য করে না।
এই ঘটনায় বিরূপ অভিজ্ঞতা সইবার ক্ষমতাটির সীমা অতিক্রম হয়েছে , তাই মধ্যবয়সী পুরুষটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। মানসিক সক্ষমতা সবার সমান নয়। প্রত্যেকের উচিত এ ধরণের দৃশ্য এড়িয়ে চলা। লোকটি সম্ভবত ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার’-এ আক্রান্ত হয়েছেন।
সুকান্ত দা
কিছু স্মৃতি না থাকাই ভালো।
ব্যস্ত থাকুন, ভালো কোথাও বেড়াতে যান। আশা করি অভিজ্ঞতাটা খুব শীঘ্রই ভুলে যেতে পারবেন।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
এমন ব্যস্ত আছি যে সব ভুলে গেছি। টেনশন নিয়েন না! আপনি ক্যামন?
জামাল হোসেন সেলিম বলেছেনঃ
এ ধরনের দৃশ্য না দেখা ভালো। আপনি দেখেছেন। ভাগ্য ভালো সহ্য করতে পেরেছেন। যদি না পারতেন? আপনি ভালো থাকুন, এই কামনা।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
না, আমি পুড়ো দৃশ্য দেখিনি। জাস্ট এক ঝলক দেখেছিলাম; ২-৩ সেকেন্ডের জন্য। না দেখার কারণ হলো, গত বছর এই বিষয়ে খুব খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। শ্যামলীর ট্রমা সেন্টারে। রক্ত দেওয়ার পর, আমার খুব কাছের এক কলিগের কেটে ফেলা পা’টা একটা বোলের মধ্যে দেখে মাথা ঘুরে ICU –তে প্রায় ২ ঘন্টা চিত হয়ে শুয়ে ছিলাম। সে এক কাহিনী! পরে বলুমনে >>>
মাহ্তাব মুহাম্মদ বলেছেনঃ
আসলে পৃথিবীটা এমন-ই!!যে মানুষটা নীরব-নীথর থেঁতলানো ক্ষত-বিক্ষত শরীরটা নিয়ে রাস্তার ময়লা ড্রেনটার পাশে পড়ে আছে,যাকে দেখে কোনো এক মধ্যবয়স্ক মানুষ মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে;সেও হয়তো কোনো এক সময় কোনো এক রাস্তার পাশে পড়ে থাকা কারো রক্তাক্ত বীভৎস দেহটা দেখে এমন-ই ভয় পেতো, মাথা ঘুরে পড়ে যেতো।কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস দেখেন,সেই মানুষটিই আজ ভয়ের কারণ,বীভৎসতার ক্ষতচিহ্ন।আসলে নিয়তি আমাদের কখন কোন দিকে ঠেলে দেয়,সে খবর আমরা কেউ-ই জানি না।মৃত্যু তো একদিন হবেই,কিন্তু সে মৃত্যুটা যেনো এমন না হয়।রাস্তার ময়লা ড্রেনে যেনো কাতরাতে না হয়।মহান আল্লাহ্ তাআলার কাছে প্রার্থনা,আমাদের মৃত্যুটা যেনো শান্তির হয়,স্বস্তির হয়।কারো ভয়ের কারণ হয়ে মরতে চাই না।
আর দেশটাতো দিনকে দিন নিয়ম-নীতির বাহিরেই চলে যাচ্ছে।জীবনের কোনো মূল্য নেই এখানে।প্রতিদিন কত শত মানুষ বাস,ট্রাক,ট্যাক্সির চাকায় পিষ্ট হয়ে মরে যাচ্ছে,তার কী কোনো আদৌ বিচার হয় এদেশে?উল্টো আইন করে চালকদের দায়মুক্তির পথ সুগম করা হয়।এদেশে অসংখ্য লাইসেন্সবিহীন চালক আছে,যারা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে,প্রতিনিয়ত যাচ্ছেতাইভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।অনেক ক্ষেত্রে গোয়ার্তুমি করে বীভৎস সব দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। কিন্তু এ সবে রাষ্টযন্ত্রের কোনো মাথা ব্যথা নেই।এভাবে কোনো দেশ চলে?ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেনো,প্রত্যেকের উচিত সাধারণ মানুষগুলোর জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।তা না হলে দেশে নিরাপদ বসবাস ব্যবস্থা ক্রমেই সংকটের মুখে পড়বে,ইতোমধ্যে যার লক্ষণগুলো একে একে ভেসে ওঠছে………….
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
ধন্যবাদ !
মজিবর রহমান বলেছেনঃ
আসলে মানুষের সব কিছু সহ্য করার অনুভূতি সৃষ্টিকর্তা দেয়নি।
এই অবস্থা জেকারর হতে পারে। দেশের যে অবস্থা। কত জনের পরিবার জানেই না তাঁর পরিবারের সদস্যের কি অবস্থা। আমি নিজেও রক্তাক্ত দেখতে পারিনা।
যেখানে আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নাই সেখানে কিই বা দাবী বা আশা করতে পারি। নিজের দলের সাথে বেঈমান করে যখন তখন অন্য মানুষ কি আশা করতে পারে তাদের কাছে।
অনাগত সন্তানের স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতার কাছেই গিয়েছিলেন কাফরুল থানা ছাত্রলীগ নেত্রী ফাতেমা তুজ্ জোহরা বৃষ্টি। তবে বৃষ্টির চোখের পানি কারও মনই গলাতে পারেনি। সবাই ‘দেখব’, ‘দেখছি’ লোক দেখানো এ সান্ত্বনার বাণীই দিয়েছিলেন বৃষ্টিকে।
ছাত্রলিগ নেতা জাহিদ তাঁর দেহভগ করে আর অন্য নেতারা অন্যায়ের পক্ষ নেয়। তাই ১৯ জুন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে রেখে গেছে আওয়ামি তথা ছাত্রলীগ নেতাদের চরিত্রের স্বরুপ কাহীনি।
সুত্র আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন।