ছুটির দিনে

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 8 August 2015, 03:50 AM
Updated : 8 August 2015, 03:50 AM

ফ্রিজে ডেসকিতে কিছু ভাত রাখা। সমুদ্রকে বললাম, ভাত কি গতকালের? ও বলল হ্যাঁ কাকা! শুনে খুশি হলাম! ফিল্টার থেকে সেই ভাতে জল ঢেলে পান্তা বানানোর জন্য গরম চুলার উপর রেখে দিলাম!

আজ পান্তা খাবো! কিন্তু ইলিশ মাছ তো নাই?

আচ্ছা! এবছর ইলিশ মাছের খোঁজ নাই কেন? শ্রাবণ যায় যায়! কত বৃষ্টি যায়? নিম্নচাপ যায়? আজ তো দেখছি ইলশেগুঁড়ি শুরু হয়েছে? অথচ বাজারে ইলিশ নাই; তারমানে নদীতেও নাই! তাহলে দাঁড়াচ্ছে ইলিশ এবার বঙ্গোপসাগর দিয়ে এদিকে আসে নাই? নাকি এবার জাটকা মেরে সাফটা করে ফেলেছি আমরা? নাকি ইলিশেরা বার্থ কন্ট্রোল করা শিখে ফেলেছে! তাই প্রসব বেদনাও নাই; বঙ্গদেশের আঁতুড় ঘরে প্রবেশও নাই! নাকি ওরা বুঝে গেছে- আমরা মহা হারামি জাতি; ওদের খাওয়ার জন্য পান্তা রেডি করে রেখেছি! নাকি জেনে ফেলেছে- উৎসব করে ওদের আমরা ভ্রূণসহ হত্যা করি; তারপর আণ্ডা বাচ্চাসহ গোগ্রাসে খেয়ে ফেলি!

ইলিশ নাই তো কি হয়েছে? কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ আছে না? সাথে একটুখানি নুন! আহ! ছোটবেলা থেকেই পান্তা আমার খুব পছন্দের খাবার! মনে আছে- দিদিমা'র সাথে সেই ছোটবেলায় আমি একই থালায় প্রায় পচে যাওয়া পান্তা খেতাম গোগ্রাসে! আর সেই কারণে দিদিমা আমার নাম রেখেছিল 'পচা'! দিদিরা আমাকে এই নাম ধরে অনেক ক্ষ্যাপাত! আমার মা এখনো আমাকে পান্তা খেতে দেখলে হাঁসে আর বউ রাগে!

মেয়ের আবার আমার রোগ ধরেছে! কিন্তু আজ ও বাসায় নেই! তাই একাই খেতে হবে!

৩১/০৭/২০১৫ সকালঃ ৯.৫৪

ইলশেগুঁড়ি চলছে। ধারণা করি এটা আরও কয়েকদিন চলবে! কৃষির জন্য এটা খুবই ভাল! জমির রাসায়নিক সার, কীটনাশকের খারাপ উপাদানগুলো ধুয়ে যাচ্ছে! পাশাপাশি জমিতে থাকা মরা পাতা-উদ্ভিদ পচে জৈব সারে রূপান্তরিত হয়ে সামনের ঋতুতে শস্য ভাল হবে! কিন্তু সমস্যা হলো- এই ধুয়ে যাওয়া রাসায়নিকগুলো নদী-নালাগুলোতে পড়বে ফলে মাছসহ জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী মারা যাবে! সবচেয়ে ভাল হতো যদি দেশে একটা ছোটোখাটো বন্যা হতো! তাহলে একসাথে সব ক্ষতিকর উপাদান ধুয়ে যেয়ে সাগরে পড়ত। তাতে জমির সাথে মাছও বেচে যেত।

গত তিন-চার বছরের তুলনায় এবছর দেশে বৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর। ছোটবেলায় দেখতাম এর চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাতেও বন্যা হতো। যেহেতু যমুনা পাড়ে জন্ম আর ওখানেই বড় হয়েছি, তাই ৮৮ সালে দেখেছিলাম মাত্র দুইদিনের মধ্যে কিভাবে নদীর জলস্তর চার-পাঁচ ফুট বেড়ে যায়! কিভাবে বন্যা হয়?

আমি ধারণা করি, গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে আমাদের উত্তরে তথা হিমালয়ে আগের মত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না! বৃষ্টি যা হচ্ছে দেশের মধ্যভাগ ও দক্ষিণে তাই জল দ্রুত সমুদ্রে নেমে যাচ্ছে; যার কারণে বন্যা হচ্ছে না! এতে অবশ্য আমরা আপাতত খুশি! কিন্তু এই বৃষ্টি যদি আরও দক্ষিণে সরে যায় বা মৌসুমি বায়ু এই ভূখণ্ডে আসার আগেই বৃষ্টি হয়ে বঙ্গোপসাগরে ঝরে পড়ে তাহলে কিন্তু আমাদের দুঃখের কারণ হবে এটা!

৩১/০৭/২০১৫ সকালঃ ১০.৪৫

দুপুরে রান্না করলাম, মুগ ডালের ভুনা খিচুড়ি, ডিমের অমলেট, আলু ভাজা আর আগরতলা থেকে নিয়ে আসা বড় রাজমা'র ভুনা। খেতে দারুণ হয়েছিল। কাকা-ভাতিজা মিলে সব সাবড়ে দিলাম। কোমেনের কল্যাণে দিনটাও ছিল দারুণ; খিচুড়িময়!

৩১/০৭/২০১৫ দুপুরঃ ২.১০