সবই ইতিহাসের শিক্ষা; আমরা নিমিত্ত মাত্র

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 31 August 2016, 11:55 AM
Updated : 31 August 2016, 11:55 AM

হিন্দুবংশে জন্ম হলেও হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর তেমন কিছু পড়া হয়নি আমার। তবে বেদ, রামায়ণ, শ্রী গীতা পড়ার চেষ্টা করেছি- খুবই অল্প সময়ের জন্য কিন্তু তা উদাহরণ দেওয়ার মত তেমন কিছু না! শুধুমাত্র বইগুলো কেনার মধ্যেই জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষা সীমাবদ্ধ রয়েছে। এটা কোন গর্বের কথা নয় বরঞ্চ লজ্জার কথা।

অপরদিকে, আমাদের ব্রাহ্মণ সমাজ তাদের অর্জিত জ্ঞান বা পূজোর নিয়ম কানুন নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে শত শত বছর ধরে। তারা এমনভাবে তা কুক্ষিগত করে রেখেছে যে, হিন্দু সমাজের অন্যকোন গোত্রের পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। এমনকি সরস্বতী ও দুর্গাপুজোর অঞ্জলী দেওয়ার শ্লোকগুলোও তারা কখনো লিখিত আকারে দেয় না- যাতে করে যে কেউ মুখস্থ করে তা বলতে পারে।

ফলশ্রুতিতে যা হয়েছে, আমরা হিন্দু সমাজ পূজারীর বলা মন্ত্র অনুসরণ করতে যেয়ে শতকরা একশো ভাগই ভুল করে ফেলছি। আবার পূজারী ব্রাহ্মণ আসলেই সঠিক মন্ত্র পড়ছে কিনা সেটাও ধরতে পারছি না।

তবে বাবা-মা ও পরিবারের কাছ থেকে ধর্ম সম্পর্কে যা জেনেছি তার মধ্যে মহাভারতের কয়েকটি বানী ও উপদেশ আমার কাছে অনেক দামী বলে মনে হয়েছে। যেমন-

দেবকী'র বিয়ের দিনে অত্যাচারী মহারাজা কংশকে উদ্দ্যেশ্য করে দৈববানী হয়, "তোমাকে মারিবে যে গোঁকুলে বাড়িছে সে!"

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার প্রিয় শিষ্য অর্জুনকে যুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিতে যেয়ে বলেন, "এই নশ্বর পৃথিবীতে সবকিছুই নির্ধারিত হয়ে আছে, তুমি নিমিত্ত মাত্র!"

অত্যাচারী দুর্যোধনরা যখন তাদের আপন দাদু ও একশত মামাকে বন্দি করে সারাদিনে 'একমুঠো ধান' খাবার হিসেবে জেলের ভিতরে ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন, ঠিক তখনই শকুনীর বাবা ও তার নিরানব্বই ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন, "এই একমুঠো ধানের চাল খেয়ে তারা একজনও বাঁচবে না কিন্তু যদি একজনকে খাওয়ানো যায় তাহলে সে বাঁচবে!" যেই চিন্তা সেই কাজ, তারা সবাই নিজেদের নির্মম ক্ষুধা সহ্য করে ছোটভাই শকুনীকে বাঁচিয়ে রেখে গেলেন-

এবং মহাভারত সৃষ্টি হলো >>>

অফটপিকে বলি- ইতিহাসের শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা না নিলেও তাতে করে ইতিহাসের কিছু যায় আসে না! সে নতুন উদ্যমে ফিরে আসে বারবার! তারই পরিক্রমায়, আজ থেকে কয়েক যুগ পর বাংলাদেশের একটি দল বা গোষ্ঠীকে "এ কার্টেল অফ ক্রিমিনালস" হিসেবে চিহ্নিত করবে সে!

ঠিক যেভাবে প্রায় আড়াই হাজার বছর পরে হলেও সক্রেটিসকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় অবৈধ ঘোষিত হয়। গ্যালিলিওকে দেওয়া অন্যায় শাস্তির জন্য বর্তমান পোপকে ক্ষমা চাইতে হয়!

সবই আসলে ইতিহাসের শিক্ষা; আমরা নিমিত্ত মাত্র।

৩০/০৮/২০১৬