আমি অনেকদিন ধরেই বলার চেষ্টা করছি যে, বর্তমান সরকারের আমলে আমার প্রিয় মাতৃভূমি অপরাধীদের একটা বড়সড় কার্টেলের খপ্পরে পড়েছে! একটু চিন্তা করলেই সেক্টর বাই সেক্টরে এদের 'রেখা' দেখা যাবে! যেমন ধরুন- অর্থসংক্রান্ত বিষয়াদির ক্ষেত্রে- দেখবেন ব্যাপক লুটপাট করেও একটা চক্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার খুব কাছাকাছি আছে। যে দেশে মাত্র এক টাকার জন্য একজন মানুষ অন্যজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, একজন ছিনতাইকারীর চোখ উপড়ে ফেলা হয়? সেদেশেই শেয়ার বাজার, ব্যাংক-বীমা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হলেও একজনেরও শাস্তি হয়না। এমনকি একজনকেও চিহ্নিতও করা যায়নি এখনো পর্যন্ত! উল্টো আমাদের সরকারের কর্তা ব্যাক্তির মুখে শোনা গেছে, "চার হাজার কোটি টাকা তেমন কিছু না", "শেয়ার বাজারে জুয়া খেলতে আসলে তো লস খাবেই" টাইপের অমরবানী!
বরগুনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমানের কয়েক ঘণ্টা হাজতবাস ও হেনস্তা নিয়ে নিয়ে যে হৈ চৈ হচ্ছে, সেখানে খুঁজলেও একটা বড়সড় অপরাধীর কার্টেল দেখা যাবে। যদিও প্রথমে জানা গিয়েছিল, এই ঘটনার শুরু হয়েছে – বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজু'র করা মামলা থেকে। কিন্তু গত দুইদিনে সোশ্যাল মিডিয়াতে যেসব তথ্য ঘুরছে, তাতে দেখা যাচ্ছে এই ঘটনার পিছনে রয়েছে সেই কালোহাত; যাদের কারণে ১৯৯৬-২০০১ সালে একটা ভাল সরকার উপহার দেওয়ার পরও আওয়ামীলীগ হেরেছিল। সেই হারে আমজনতার অধিকাংশ মানুষই মনে কষ্ট পেলেও মুখে বলেছিল, "ভাল হইছে!" কেন? এই 'কেন' -এর উত্তরে পরে আসবো বা অন্যকোন পোষ্টে এ বিষয়ে লিখবো। আপাতত উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব গাজী তারিক সালমানের বিরুদ্ধে করা সাজুর মামলাটা নিয়ে কথা বলি।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে একটা শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপানোয়, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজু, জনাব সালমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আর জামিনযোগ্য এই মামলাটা হয় বর্তমান সরকারের আমলে পাশকৃত কুখ্যাত আইসিটির আইনের, ৫৭ ধারায়! মামলায় সাজু বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ছবিটা দেখে তার অনুভূতিতে এমন আঘাত লেগেছে যে, ছবিটা দেখামাত্রই তার হার্ট এটাক হয়ে যাচ্ছিল প্রায়!"
ঘটনার পরম্পরায় আরও জানা যাচ্ছে যে, এই সাজু জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিও। আবার ইনি পাঁচ বছর আগেও আওয়ামীলীগের কেউ ছিল না! তাহলে হটাৎ করেই এই সাজুর আগমন কোথা থেকে ঘটলো? আর তার বঙ্গবন্ধুর প্রতি এত ভালবাসাই বা কোথা থেকে আসলো? উত্তর খুঁজলে তা পাওয়া যাবে আওয়ামীলীগের ডিএনএ-তে, যা যুগের পর যুগ ধরে এই দলে মোশতাকদেরকে জন্ম দিচ্ছে!
এই মামলাটা এত দ্রুত বাঁক নিয়েছে যে- যা আমাদেরকে 'জাতীয় বেয়াইয়ের' মামলায়, পঙ্গু সাংবাদিক জনাব প্রবীর শিকদারকে আদালতের মাধ্যমে রাতারাতি রিমান্ডে পাঠানোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল! জনাব শিকদারের মামলাটাতেও দেখা গেছে আসলে যে মামলা করেছে, সে আসল ব্যক্তি নন! আসল ব্যক্তি কলকাঠি নেড়েছে পিছন থেকে। আমাদের ইউএনও সাহেবের বেলায়ও দেখা গেছে, সাজু এই মামলার নাটের গুরু নন, নাটের গুরু আছে সবার পিছনে, যাকে ধরতে গেলে 'ক্ষমতার মূলকেন্দ্রে' পৌঁছে যেতে হয়! যেমনটা ঘটেছিল প্রবীর সিকদারের মামলাতেও। দুটো ক্ষেত্রেই দেখা গেছে- যারা সত্যিকার অর্থে দেশ ও জাতিকে ভালবাসে তাদেরকেই নির্যাতন করা হয়েছে, আর এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫৭ ধারাকে। আর যারা এর ব্যবহার করেছে, তারা সব সেই "আমার বলা অপরাধীদের কার্টেলের অংশ এবং সুবিধাভোগী" যাদেরকে দলের দুঃসময়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। এদের কেউ কেউ আবার আওয়ামীলীগের কেউ না, এদের জোর আত্নীয়তায়।
এই মামলায় আরও দেখা যাচ্ছে, ইউএনও সাহেবকে ফাঁসানোর জন্য যারা অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে তাদের মধ্যে একজন ডিসি ও একজন বিচারকও আছেন! ডিসি সাহবের পত্র চালাচালিতে দেখা যাচ্ছে- ওনার অনুভূতিতেই সবার আগে এই ছবিটা আঘাত হেনেছিল এবং তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত জানে।
এছাড়াও আরও জানা যাচ্ছে-
ঘটনা ঘাটতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে সেই মাফিয়া হাতের ছায়া, যারা আসলে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এই মাফিয়া কার্টেল মূলতঃ অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকারটা করেছে!
সবশেষে আমার অভিমত, প্রশাসনের উপর সরকারী দল যে 'ড্যামেজ' ঘটিয়েছে, তা শুধুমাত্র সাজুকে দল থেকে 'লোকদেখানো' বহিস্কার করে রিকোভারী করা যাবে না! সরকারকে কঠোর হাতে পুরো কার্টেলটাকে নির্মূল করতে হবে। আর নইলে, আগামিতে যে বাড়ি ফিরতে ফিরতেই বাসভবনের বিদ্যুত-গ্যাসের লাইন কাঁটা পড়বে না, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না?
২২/০৭/২০১৭