কী লিখবো? কেন লিখবো? ভেবে পাচ্ছি না। গত দুইদিন ধরে এই সম্পর্কীয় একটা স্যাটায়ার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, কিন্তু সেটাও লিখতে ইচ্ছে করছে না। স্যাটায়ার লেখার জন্য চিন্তায় যে ফ্রেশনেস দরকার হয়, সেটা এই মুহূর্তে পাচ্ছি না!
গত কয়েকদিন ধরেই খবরে দেখছিলাম, মাননীয় প্রধান বিচারপতি বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কেন চলে যাচ্ছেন- তা নিয়ে সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী নেতারা যা-ই বলুক, যা-ই বিশ্বাস করুন না কেন, সেসব কথা আমি অন্তত বিশ্বাস করিনি। কারণ আমি ধারণা করেছিলাম তিনি কেন চলে যাচ্ছেন, অথবা কে তাকে যেতে বাধ্য করছেন। বিদেশে যাওয়ার আগে মাননীয় প্রধান বিচারপতি সেটাই বলে গেলেন। জাতি জানতে পারলেন প্রকৃত সত্য।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর আওয়ামীলীগের নেতারা উনাকে অনেক গালমন্দ করেছেন। বলেছেন নানা কুকথাও। এর মধ্যে এক মন্ত্রী যেমন বলেছিলেন, “ছিঁচকে উকিল“! তেমনি আরও একজন ডাকসাইটে মন্ত্রী ও এক সময়ে “বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে জুতা বানাতে চাওয়া” অধুনা বামনেত্রী তাকে দেশত্যাগ করতেও বলেছিলেন। অর্থাৎ ইংগিতে-অবচেতনে তিনি তাকে ‘ভারতে’ পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন! এই হলো- অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক ও বাহক দলটির নেতা-নেত্রীদের প্রকৃত অবস্থা!
এছাড়াও আকারে ইংগিতে তিনি যে একজন ‘হিন্দু’; সেটাও মনে করিয়ে দিতে ক্ষমতাশালীদের অনেকেই পিছপা হননি। তবে আর দশজন ‘হিন্দুর’ মত করে জমি বাড়ী-ঘর দখল করে যে তাকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে না- এতেই আমি আপাতত খুশি।

.
খবরে জানলাম, তিনি অস্ট্রেলিয়া সহ আরও কয়েকটা দেশে যাচ্ছেন। এবং যাচ্ছেন একমাসের ছুটিতে না, সেই ছুটি আরও বাড়বে। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায় তিনি আর যাই করুন না কেন, প্রধান বিচারপতির মেয়াদ থাকা পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন না। কিন্তু আগে খবরে জানা থাকলেও কেন তার সহধর্মিণী বিদেশে গেলেন না- সেটা একটা প্রশ্ন। তবে কী তাকে ‘জামানত’ হিসেবে রেখে দেওয়া হলো? এবং বলা হলো- বাপু বিদেশে যাচ্ছো ভাল কথা- ভাল মন্দ খাও, ঘুরে বেড়াও; মাগার কথা কিন্তু বলতে পারবে না? এটা কী তাহলে তাই? জাতির কাছে অনেক প্রশ্নের সাথে এটাও কিন্তু তিনি রেখে গেলেন।
পরিশেষে-
মাননীয় প্রধান বিচারপতি- শ্রী সুরেন্দ্র কুমার সিনহা,
স্যার! যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন। আপনাকে স্যালুট জানাই!
নীতিহীন আর লুটেরার দেশে, আপনি অন্তত ঘাড় সোজা রেখে দাঁড়াতে পেরেছিলেন! চোখে চোখ রেখে সত্য বলেছিলেন।
তাই বিদায়বেলায় আমাদের স্যালুট গ্রহণ করুন।
জাতি আপনাকে মনে রাখুন আর নাই রাখুন, এই ক্ষুদ্র মানুষটি আপনাকে মনে রাখবে।
আগের লেখাঃ
১) মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায় ও আমার মত
২) প্রধান বিচারপতি, আওয়ামী লীগ ও নেতৃত্বের দ্বিমুখীতা
১৪/১০/২০১৭
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
আগের লেখা দুটোর লিংক কেন আসলো না, বুঝলাম না! নিচে দিয়ে রাখলাম >>>
১) মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায় ও আমার মত
২) প্রধান বিচারপতি, আওয়ামী লীগ ও নেতৃত্বের দ্বিমুখীতা
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকেই এরকম রাগ আর অহংকার। ক্ষমতাবানরা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা না বা মেনেও নে না। ভুল করে স্বয়ং ভগবানের কাছে ক্ষমা চেয়েও ক্ষমা পাওয়া যায়, কিন্তু তার সৃষ্টির মানুষের কাছে পাওয়া যায় না কেন?…
আশা করি সবকিছুর-ই সমাপ্তি ঘটবে।
ধন্যবাদ দাদা ভালো লিখেছেন। আশা করি ভালো থাকবেন।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
আপনিও ভাল থাকুন! ধন্যবাদ!
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
দাদা, এই মানুষটাকে এভাবে বিদায়ী স্যাল্যুট দিতে একদম ইচ্ছে করছে না। খুব চাই তিনি ফিরে আসুন, তাঁর আসনে বসুন, আর নিম্ন আদালত নিয়ে কিছু গুরুত্বপুর্ণ রায় দিয়ে যান।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
এদেশে আমরা চাওয়ার কে? যারা কলকাঠি নাড়ছে তারাই দেশের মালিক! সো, মেয়াদ থাকা অবস্থায় ওনার আর ফেরার সুযোগ নাই! লিখে রাখেন!
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
জাহেদ ভাই, এই লন >>>> বিচারপতি সিনহার পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে
ব্যাপক আলোচনার মধ্যে বঙ্গভবনের পক্ষ থেকে শনিবার দুপুরে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা জানানো হয়।
এর আগে শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিচারপতি সিনহার কোনো পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে পৌঁছায়নি।
একই সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরেক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের বিষয়ে কিছু জানেন না।
দুপুর ১টায় রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনার পদত্যাগপত্র আজই বঙ্গভবনে এসেছে।”
বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা এটাই প্রথম।
ষোড়শ সংশোধনের বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত ৩ অক্টোবর ছুটি নিয়ে ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় যান বিচারপতি সিনহা। সেখানে তার মেয়ে থাকে। পরে তার স্ত্রীও ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়া যান।
প্রায় এক মাস অস্ট্রেলিয়ায় বড় মেয়ের কাছে কাটিয়ে বিচারপতি সিনহা সিঙ্গাপুর হয়ে কানাডায় ছোট মেয়ের কাছে রওনা হন শুক্রবার।
তার আগে তিনি সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠান।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ ছিল আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
বিচারপতি সিনহা ছুটিতে যাওয়ার পর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রধান বিচারপতি দায়িত্বে ফেরা না পর্যন্ত নিয়ম অনুযায়ী বিচারপতি ওয়াহহাব মিয়াই ওই দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন।
বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সর্বোচ্চ আদালত জানায়, ওই সব অভিযোগের ‘গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা’ তিনি না দিতে পারায় সহকর্মীরা তার সঙ্গে এজলাসে বসতে নারাজ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলে আসছিলেন, সহকর্মীরা বসতে না চাওয়ায় এস কে সিনহার প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ফেরা ‘সুদূর পরাহত’।
মজিবর রহমান বলেছেনঃ
জাহেদ ভাইয়ের সাথে সহমত।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
উত্তরও সেইমত! 😛