প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিকল্প হবে এর ’মহাফাঁস’!

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 23 Nov 2017, 09:03 PM
Updated : 23 Nov 2017, 09:03 PM

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিকল্প হতে পারে প্রশ্নপত্রের মহাফাঁস! কী কথাটাকে আজগুবি লাগছে? হ্যাঁ, এটা একটা আজগুবি প্রপোজালই বটে। কথা হচ্ছে- যেদেশে রাতদিন আজগুবি ঘটনা ঘটছে, সেদেশে এই ঘটনাগুলোর সমাধান আজগুবি উপায়েই করতে হবে! যেমন, সকালবেলায়ই পত্রিকায় পড়লাম, পিএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে। এতে আমি অবাক হয়নি, কারণ একজন মানুষ যে কারণে অবাক হয়, সেই কারণটাই এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেমন, যদি শুনি গতকাল অমুক ব্যাংক লূট হয়েছে! তাহলে আমরা কী অবাক হবো? না, হবো না! উল্টো সেই ব্যাংক কারা লুট করলো সেই নায়কদের নাম জানার জন্য আমরা দিনের পর দিন পত্রিকাগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়তে থাকবো। কিন্তু তাদের নাম, ধাম এবং সেই টাকা কোথায় গেল, সেটা আর জানতে পারবো না! কারণ এই বিষয়ে পত্রিকার রিপোর্টগুলোও হবে- হয় ম্যানেজড, না হয় ম্যানুপুল্টেড। আর সরকার বাহাদুরের কাছে তো- "এই টাকা টাকা নয়, আরও টাকা আছে" টাইপের মত করে আরও একটা অমরবানী শুনবো, "এই ব্যাংক ব্যাংক নয়, আরও ব্যাংক আছে! প্রয়োজনে আরও ব্যাংক পয়দা করে দিবো, হ্যাঁ!"

বাজার আছে হরেক রকমের। ভালো বাজারের উল্টো দিকে আছে কালোবাজার। আর এই কালোবাজারের নতুন সংযোজন প্রশ্নপত্র ফাঁসের বাজার। পরীক্ষার মৌসুমে কোটি টাকা লেনদেন হয় এই বাজারে। কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রনেতা, শিক্ষক, কোচিং সেন্টার, প্রেসের কর্মচারী—এঁরাই এ বাজারের নিয়ন্ত্রক। আর ক্রেতা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী ও তাঁদের অভিভাবক। প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই বাজারে প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় মাধ্যম।

তেমনি, বর্তমানে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আউট হবেই। তা যে ধরণের পরীক্ষাই হোক না কেন? বাস্তবেও দেখা যায় তা হচ্ছেও। সরকার লোক দেখানো নানা কায়দা-কানুন করেও তা ঢেকে রাখতে পারছে না! পরীক্ষার ঠিক আগে আগে ফেসবুক, হোয়াটস আপ প্রভৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। এটাকে আমি একদিক থেকে মন্দের ভাল বলবো, কারণ ১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজন প্রশ্ন পেয়ে উত্তর লিখবে, আর অন্যরা পড়ে লিখবে, সেটাও কিন্তু বৈষম্য। কারণ প্রথমজন ভাল রেজাল্ট করে অন্যদের পিছিয়ে দিবে। যার কারণ, ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে অনৈতিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে জেনেও বাবা-মা পরীক্ষার আগেরদিন উত্তরপত্র কিনছে। আর বাঙ্গালীর নীতিজ্ঞান কবেইবা নিজ স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে?

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এর সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিতে বাচ্চুকে আসামি না করায় আদালতের উষ্মা শুধু বেসিক ব্যাংক কেন, প্রশ্ন দুদক চেয়ারম্যানেরকমিশনের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, বাচ্চুসহ আরও কয়েকজনকে আগামী ৪ ডিসেম্বর দুদকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক।

তাই আমার প্রস্তবনা হচ্ছে, পাঠ্যবই থেকে প্রতিবিষয়ে কমপক্ষে ২৫ সেট প্রশ্নপত্র তৈরী করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার ৩ দিন আগে প্রকাশ করে দেওয়া হোক। তারপর সেই প্রশ্নপত্রগুলো পরীক্ষার হলে র‍্যানডমলি বিলি করা দেওয়া হোক। এতে করে যেটা হবে এই ২৫ সেট প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে হবে! উত্তর পত্রের মূল্যায়ন হবে সেটের উপর ভিত্তি করে।

আপাতত, এর বিকল্প দেখছি না বলেই এমন অদ্ভুত প্রস্তাবনা! অর্থাৎ প্রশ্নপত্রের ফাঁসের বিকল্প হবে এর মহা ফাঁস!

বিঃ দ্রঃ এটাতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে পরের পোস্টেই 'মেগা ফাঁসে'র অফার দেব! দেখি এটাতে কে কী বলে?

২৩/১১/২০১৭