অস্ত্র বিক্রির সরল অংক

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 26 Nov 2017, 06:04 PM
Updated : 26 Nov 2017, 06:04 PM

কারো সাথে মিলবে কিনা জানি না। তবে আমরা যারা সেলসে কাজ করি তারা জানি- আমাদের বিক্রীত পণ্য যদি ভোক্তা সাধারণ বেশী বেশী ভোগ না করে, তাহলে সেই পণ্যের বিক্রয় বাড়ে না। বাড়লেও সেটা হয় অনেক ধীরে। তাই বিক্রয় বাড়ানোর জন্য হেন কোন কাজ নাই যা আমাদের করতে হয় না। এই যেমন- সুন্দর সুন্দর মডেল দিয়ে বিজ্ঞাপন বানানো হয়। পরে টিভিতে, পত্রিকায়, হালের অনলাইনে দিন-রাত তা চালানো বা প্রকাশ করতে হয়। এমনকি বিক্রয় বাড়ানোর জন্য আমাদের ফ্রি স্যামপ্লিংও করতে হয়। অর্থাৎ মানুষকে বিনা পয়সায় তা খাওয়াতে হয়; যাতে করে তারা সেই পন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে দোকান থেকে কেনে।

আমাদের বিমানবন্দর এক কথায় সোনার খনি। প্রায়ই দেখি- কেজিখানেক করে সোনা ধরা পড়ছে। মাঝে মাঝে অবশ্য মনকে মনও ধরা পরে। জ্ঞানীরা বলে, ছোট ছোট চালান যেগুলো ধরা পরে সেগুলো হলো, 'চার'! মানে মাছ মারতে যে 'চার ফেলা হয়' সেগুলো তাইই। অর্থাৎ ছোট চালান ধরিয়ে দিয়ে বড় চালান বিমানবন্দর দিয়ে পার করা হয়। মাঝে মাঝে বড় বড় চালানও ধরা পড়ে। সেগুলো দলের মধ্যে অমিলের কারণে ঘটে। জ্ঞানীরা আরও বলেন, "ছোট ছোট চালান যারা ধরেন বা ধরিয়ে দেয়, তাদেরকে ধোঁয়া তুলসি পাতা ভেবো না? ওগুলো সবই পাতানো খেলা। ওটুকুর খরচ মূল চালানের কষ্টসীটের মধ্যেই এন্ট্রি করা থাকে। যেমন করে তোমরা 'ফ্রী স্যামপ্লিং' করার খরচটাও পণ্যের দামের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে থাকো"?

বর্তমান বিশ্বে অস্ত্রের বাজার রমরমা। আর সেটা হবেইবা না কেন? যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। একদিকে সৌদি আরব তো অন্যদিকে ইরান-কাতার। আসাদকে সরানোর পন করে প্রক্সি যুদ্ধ করতে করতেই কেমন করে যেন তুরস্ক পুতিনের হাতের মুঠোই চলে গেল। এদিকে, ভারত-পাকিস্তান-চীনও গরম হয়ে উঠছে। হিজবুল্লাহ-আইএস নিয়ে লেবানন-মিশর ক্রমেই গরমভাব ছড়াচ্ছে। সিরিয়াতে রাশিয়া তার নতুন নতুন অস্ত্রের ভালই পরীক্ষা চালিয়েছে। তার ফলও পেয়েছে সে হাতেনাতে। আমেরিকার জানি দোস্তরাও এখন রাশিয়া থেকে অস্ত্র কিনতে যাচ্ছে। ওদিকে মিঃ প্রেসিডেন্টের মেয়ের জামাইয়ের সাথে কীভাবে যেন লাইন করে সৌদির নতুন প্রিন্স এক ঝটকায় ট্রিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনে ফেলেছে। শোনা যায়- কী কী অস্ত্র কেনা হলো, কত দামে তা কেনা হলো, তা নাকি ক্লিয়ারলী ডিফাইন করাও হয় নাই। হটাৎই এত বড় বড় বিক্রির অর্ডার পেয়ে আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসায়ীরাও নাকি তব্দা খেয়ে গেছে।

আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আচ্ছা! যুদ্ধরত দুই পক্ষের এক পক্ষের কাছে এত এত দামী অস্ত্র থাকার পরও কেন সৌদি, ইয়েমেনে হুতিদের হারাতে পারছে না, আমেরিকা-রাশিয়া কেন সিরিয়ায় আইএসকে দমাতে পারছে না! আচ্ছা! আল কায়দা-তালেবান এত এত দামী দামী অস্ত্র পায় কোথায়? তবে কী অস্ত্র বিক্রেতারা তাদের নিকট ফ্রী স্যামপ্লিং করছে। মুল্যটা তারা তুলে নিচ্ছে সৌদি, কাতার, ইরান ও ভারত থেকে মূল চালান বিক্রি করে?

সরল অংকটা কেমন কেমন করে যেন মিলে যাচ্ছে। আরে ভাই, ওরা যদি যুদ্ধই না করে, তাহলে অস্ত্রের ভোগ বাড়বে কিভাবে? এগুলো তো আর লেমঞ্চুস না যে বাচ্চারা খাবে?

২৬/১১/২০১৭