দুই-তিন দিন আগে, আমাদের অফিসের এইচ আর হেড স্যারের রুমে তার সাথে একটা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। হটাৎই কোন এক প্রসঙ্গে উবারের বিষয় এসে পড়ায় পাশ থেকে আমাদের অন্য কলিগ বললেন, “আমি পাঠাও-এ ড্রাইভার হিসেবে নিবন্ধন করেছি, শুধু অফিসে আসা-যাওয়ার সময় রাইড শেয়ার করে আমার মটর সাইকেল চালানোর মাসিক খরচটা উঠে যাচ্ছে!” যেহেতু এই বিষয়টাতে আমার ইন্টারেস্ট আছে; তাই তার সাথে আরও একটু কথা বলে এবিষয়ে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করলাম।
আজ অফিসের কাজে বনানীতে যাওয়ার জন্য উবার ডাকলাম। মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যে ড্রাইভার আমার লোকেশনে এসে পড়লেন। গাড়িতে ওঠার আগেই ড্রাইভার সালাম দিলেন। আমিও যথারীতি সেটার উত্তর দিতে দিতে তার পাশের সিটে বসে পড়লাম! কেন আমি এই ধরণের সার্ভিসে ড্রাইভারের পাশে বসি তার একটা কারণ আছে। আর সেটা হলো- অনেক সচ্ছল ও শিক্ষিত মানুষ উবার চালক হিসেবে হাজির হন। তাদেরকে ড্রাইভার ভাবতে আমার সংকোচ হয়। এছাড়াও ড্রাইভারদের সাথে কথা বলতে আমার ভাল লাগে। যাত্রাপথে তাদের কাছ থেকে অনেক নতুন নতুন কথা জানা যায়; সময়টাও ভাল কাটে!
আজকের রাইডে আমার পাশে থাকা চালকের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎই মনে হলো- ওনার কথাগুলো রেকর্ড করে ফেলি। স্মার্ট ফোন হাতে থাকায় তা করাটা এখন অনেক সহজ হয়েছে। তাই আনাড়ি হাতে এবং জীবনের প্রথম কোন মানুষের ইনফরমাল কথাগুলো ফরমালি রেকর্ড করলাম। অবশ্য রেকর্ড করার আগে আমি এই রেকর্ড দিয়ে কী করবো তা ড্রাইভার সাহেবকে বলে নিয়েছি। পাশাপাশি আমার আংশিক পরিচয়ও দিয়েছি। রেকর্ডটা করার পর তাকেও দেখিয়ে নিয়েছি। সে এটা দেখে খুশি হয়েছে!
ওনার সাথে কথা বলে যা জানলাম তার সামারি হলো-
১) অনেক ড্রাইভারই তাদের ১৫-২০ হাজার টাকার মাসিক চাকুরি ছেড়ে উবারে গাড়ি চালাতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ নিজের গাড়ি নিয়েই এই পেশায় নেমে পরছেন। ফিরতি পথে উবারের অন্য যে ড্রাইভারকে পেলাম, তিনি অল্প কিছুদিন আগে উবাবের গাড়ি চালাতে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছেন। তবে আমার আজকের প্রথম ড্রাইভার যেমন নিজের গাড়ি নিজে চালাচ্ছিলেন, কিন্তু পরের জন চালাচ্ছিলেন মালিকেরটা, মাসিক ২৫,০০০ টাকা দেওয়ার চুক্তি করে তিনি সেটা চালাচ্ছিলেন। রেন্ট-এ কার চালানোর চেয়ে তাতেও তার লাভ হচ্ছে, বললেন।
২) ইউটিলিটি খরচ বাদ দিয়ে একজন ‘উবার ড্রাইভার’ প্রতিদিন গড়ে ২,০০০ টাকা করে আয় করছেন। মাসে ২৫ দিন একজন গাড়ি চালালে তার গড়পড়তা ৫০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এছাড়াও উবারের কিছু সেলস প্রোমোশন আছে, যেগুলোতে অংশ নিলে মাসে কমপক্ষে আরও ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করা যাচ্ছে। অর্থাৎ আমার প্রথম ড্রাইভারের কথা মত খরচ বাদে গতমাসে তার ৬৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে। শোনার পর পরই অংকটাকে খুব বেশি মনে হয়েছিল আমার কিন্তু দ্বিতীয় ড্রাইভার বললেন, মাঝে মাঝে গ্যাপ দিয়ে গাড়ি চলালেও গত মাসে মালিকের ২৫ হাজার টাকা দিয়েও তার ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে।
৩) উবারের নিয়মনীতি যেহেতু খুবই কড়া, তাই সব গাড়ীর কাগজপত্র আপটুডেট রাখা বাধ্যতাম্যলক। এতে কোন গাফিলতি থাকলে বা লাইসেন্সের মেয়াদ এক্সপায়ারড হয়ে গেলে উবার অটোমেটিক সেই গাড়ি বাদ দিয়ে দেয়। এটা যেহেতু আমাদের ট্র্যাফিক বিভাগ জানে তাই তারা উবারের গাড়ি আটকায় না।
৪) অনেক গাড়ীর মালিকই এখন তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ড্রাইভারের সাথে চুক্তিতে উবারে দিচ্ছে।
৫) শিক্ষিত মানুষ যারা এতদিন চাকুরির পাশাপাশি একটা দ্বিতীয় আয়ের পথ খুঁজছিলেন, তাদের মধ্যে যারা ড্রাইভ জানে- তারা চক্ষুলজ্জা ভেঙ্গে উবারের ও পাঠাও -এ চালক হিসেবে নিজেদেরকে তালিকা ভুক্তি করছেন।
ধন্যবাদ!
পাদটীকা: অনভিজ্ঞতার কারণে একই প্রশ্ন বারবার করেছি। দুঃখিত!
আগের লেখাঃ উবার, পাঠাও এবং সিএনজি ধর্মঘটের ‘ইয়ার্কি’
১১/১২/২০১৭
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
ব্যাংকে চাকরি করে। অবসর সময়ে অটোবাইক চালায়। অফিসে গিয়ে ঘুমাইয়া থেকে।
শ্রদ্ধেয় দাদা, তাহলে বড়সড় অফিস চলবে কী করে? ভাবনা শুধু থেকেই গেল।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
ব্যাংকে চাকুরী করলে তো তার ঘুমানোর কথা না। তার সময় কই? তিনি কি সরকারী ব্যাংকে চাকুরী করেন?
যাকগে, একজন ঘুম কাতুরে মানুষকে দিয়ে অন্য হাজার হাজার মানুষকে বিবেচনা করা যাবে না! এটা একটা ভাল পেশা হতে যাচ্ছে!
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
পেশাতো দাদা সবই ভালো। খারাপ হয় আমাদের নিজেদের দোষে। দেখি এই পেশায় নিয়োজিত লোকদের কী গতি হয়? ভালো হলে ভালো। আর খারেপ হলেতো….
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
আজ অফিসে নিশ্চিত লেট খেতাম। পাঠাও আমাকে ঠিক টাইমে পৌঁছে দিলো! যিনি মটর সাইকেলটা চালাচ্ছিলেন, তিনি খুলনায় একটা ছোট ইলেক্ট্রিক শপ চালান, ব্যবসা ভাল চলে না বলে তার কাছে থাকা একটা ৫ বছরের পুরোনো বাজাজ মটর সাইকেল নিয়ে এই সার্ভিসে যোগ দিয়েছেন। এই মটর সাইকেল চালিয়েই আজ তিনি আবারো খুলনায় চলে যাবেন, বললেন। তার কথায় যা বুঝলাম- তিনি এটাকে আপাতত দ্বিতীয় আয়ের পথ হিসেবে নিয়েছেন। টুকটাক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি আয়ও কিছু করছেন, বললেন!
আজই প্রথম পাঠাও-এ চড়লাম! ভাল সার্ভিস। আজকেও এক সিএনজি চালক আমাকে না করলো! ওদের তেল এখনো কমে নাই বলেই মনে হচ্ছে! (সবার না, গত কয়দিনে আগের তুলনায় অনেক ভাল সার্ভিস পেয়েছি, দুই তিনজন মিটারে যেতেও রাজী হয়েছে)।
ফারদিন ফেরদৌস বলেছেনঃ
ব্যাংক একটা এমন জব প্লেস সেটা সরকারি বা বেসরকারি যাইহোক, ঘুমানোর স্কোপ নেই। নিতাই দা কী দেখতে কী দেখছেন আল্লাহই জানে। যাহোক আমি উবারের সাফল্য কামনা করি। সাথে সুকান্ত দা’র সাংবাদিকতারও তারিফ করছি।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
😛 😛 😛
না, সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের হেডঅফিসগুলোতে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কিছু সেকশনে ” অফিস ডে’গুলোতেও পর্যাপ্ত ঘুমের পরিবেশ বিরাজমান আছে” বলে আমি জানি! তাই নিতাইদাকে ‘ওয়াক ওভার’ দিয়ে দেন, নইলে নিতাইদা আর কমেন্টই করবেন না!
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
আমি ব্যাংক কর্মকর্তা ঘুমায়, তা কিন্তু বলিনি ফারদিন দাদা। আমি বলতে চেয়েছি যে, ব্যাংকে চাকরি করে অবসরে বাইক চালায়। আর বলেছি,
এখানে ব্যাংক কর্মকর্তা ঘুমানোর কথা বলিনি দাদা। উপজেলা সমবায় অফিসে গেলে দেখা যায়, ঘুমানোর সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দাদা। আরও অন্যান্য অফিসেও।
আইরিন সুলতানা বলেছেনঃ
সহকর্মীর সাথে পোস্টের ভিডু নিয়ে কথা হচ্ছিল। বলছিলেন এটা কি দেশে? তাহলে গাড়ির চালক উল্টা পাশে বসা কেন? বললাম, এটা সেলফি ভিডু, এজন্য উল্টায় গেছে! আরো একজন সহকর্মী যোগ হলেন, কিন্তু ভিডু কি উল্টায় যায়! মোবাইল বার করে সাথে সাথে কয়েক সেকেন্ডের ভিডু হয়ে গেল। ভিডু করার সময় অবশ্য ঠিকই দেখাচ্ছিল! আমি ভাবলাম কাহিনী কি তাইলে তো আমার কথা ভুল হয়ে যাচ্ছে! ভিডু প্লে করার পর দেখা গেল না, চিত্রায়নের বাম-ডান সাইড বদল করেছে। সহকর্মী দুইজন কাহিনী বুঝল। আবার পরামর্শও দিল … এটাযে সেলফি ভিডু সেটা একটা নোট দিয়ে বলে দিলে ভালো হতো। আমি বললাম যে, আচ্ছা বলে দিব!
আমি অবশ্য বুঝতেছিলাম না যে, পরামর্শটা কি ব্লগ টিমের জন্য না আপনার জন্য! যেহেতু বুঝি নাই, সেহেতু ভাবলাম আপনার উপর দায় দিয়ে দেই!
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
পোষ্টে এডিট অপশন থাকলে আমি আগেই এটা লিখে দিতাম। তাই ব্লগটিমও ‘কিছুটা দায়’ এড়াতে পারেন না; কইয়া রাখতেছি! আর সেলফিতে ছবি উল্টাইয়া যায়- সেটা জানতাম, কিন্তু সেলফি ভিডুতেও যে ছবি উল্টাইয়া যায়, এটা এই পোষ্ট করার আগে আমিও বুঝি নাই। পয়লা বার তো >>> পরের বার ঠিক কইরা লমুনি >>> 😛