ভারত ও বাংলাদেশে দুই সন্তান নীতি হবে অনেক সমস্যার সমাধান

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 4 Jan 2018, 05:01 AM
Updated : 4 Jan 2018, 05:01 AM

আমি এই বঙ্গ সমাজের এক ক্ষুদ্র প্রতিনিধি। বলতে গেলে প্রান্তিক মানুষের এক ক্ষুদ্র মুখ। যার নেই কোন সংগঠনও। এই সমাজে আরও কোটি জনতার মত করে আমিও নিজের কর্ম করে, নিজের ছোট সংসারটা নিয়ে বসবাস করছি। ফলে জানি- আমার কণ্ঠস্বরের কোন মূল্য নেই। লেখার নেই কোন মূল্যায়নও। তারপরেও নিজের মনের কথাগুলো নিজের মত করেই এই ব্লগে লিখে যাচ্ছি। এতে কেউ কেউ হয়ত কখনো কখনো মনোক্ষুণ্ন হচ্ছেন আবার কেউ কেউ সমর্থনও করছেন। যারা মনোক্ষুণ্ন হচ্ছেন এবং যারা আমাকে সমর্থন করছেন, তাদের দুইদলকেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের এই লেখাটা লিখছি।

অনেকদিন ধরেই বলার চেষ্টা করছি যে, এই পৃথিবীতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আগামী দিনগুলোতে বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আসবে। এই বিষয়ে লিখেছি কয়েকটা পোস্টও। তারপরেও জানি- আমি যা লিখেছি তারচেয়েও অনেক বেশী কথা সেই পোস্টগুলোতে লিখতে পারতাম। কিন্তু সেগুলি লিখিনি কারণ, তা অনেকেরই মনোক্ষুন্নের কারণ হতে পারতো।

হ্যাঁ, আমি জানি, পৃথিবীর অনেক দেশেই তাদের জনসংখ্যার গ্রোথ নিম্নগামী। আবার কোন কোন দেশে একটা গোষ্ঠীর বৃদ্ধির হার নিম্নগামী হলেও অন্যগোষ্ঠীর বৃদ্ধির হার অনেক বেশী। ফলে দেশে দেশে এই নিয়ে বিভেদ বাড়ছে। একপক্ষ মনে করছে, "আরে! আমরা তো নিজদেশেই সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছি! আর যারা বাইরে থেকে এসেছে- তারা ক্রমাগত তাদের জন্মহার বাড়িয়েই যাচ্ছে! আজ না হোক কাল, তারা আমাদের দেশ দখলে নিবে?" ফলে যেসব দেশকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল; তারাই এখন বেঁকে বসছেন। দেশে দেশে জাতীয়তাবোধ বাড়ছে। বাড়ছে হানাহানি।

যেমন ধরুন, মিয়ানমার! আমার জানামতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমস্যা এত বেশী জটিল হতো না, যদি তাদের মধ্যে সন্তান নেওয়ার হার কম হতো। অনেকেই হয়ত বলবেন, এটাই মুখ্য কারণ নয়! এছাড়াও আরও কারণ আছে? আমি বলবো, হ্যাঁ! আরও কারণ থাকলেও এটাই মুখ্য। সেদেশের অপরাপর জনগোষ্ঠী ভাবছে, 'রোহিঙ্গাদের উচ্চজন্ম হারের কারণে তারা নিজদেশেই সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে'। অদুর ভবিষ্যতে তাদের সন্তান-সন্ততি সেখানে বসবাস করতে পারবে কিনা- তা নিয়ে তারা চিন্তিত। এই জনগোষ্ঠীগুলোর ভয় ও আতংক যতক্ষণ না কাটছে, ততদিন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না! অর্থাৎ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে আর ফিরতে পারবে না। আলোচনা, চুক্তি যা হচ্ছে, তা মূলত সময়ক্ষেপণ ও বৈশ্বিক চাপ সামলানো। এই চাপ কিছুটা কেটে যাওয়ার পরপরই সেইদেশে এখনো থেকে যাওয়া অবশিস্ট রোহিঙ্গাদেরকেও তাড়াতে শুরু করবে মিয়ানমার।

এবিষয়ে কিছুদিন আগে আমার দুইজন আগ্রজকে বলেছিলাম, যদি মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাড়াতে সফল হয়, তাহলে বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই তা একটা 'মডেল' হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। 'মিয়ানমার মডেল' হিসেবে কেউ কেউ সেটা ব্যবহার করতেও চাইবে। এ বিষয়ে কিছুটা আলোকপ্রাতও করেছিলাম আমার লেখা লিঙ্কের পোস্টটাতে। সেই পোস্টে আমি আকারে ইংগিতে আরও বলেছিলাম, একই রকম ঘটনা অন্যদেশগুলোতেও ঘটতে পারে। এমনকি আসামে, পশ্চিমবঙ্গে যেকোন মুহূর্তে তা শুরুও হয়ে যেতে পারে।

ইতিমধ্যেই হয়ত আমরা আসামের নাগরিক গণনার প্রথম তালিকা প্রকাশের খবর পেয়ে থাকবো? এবার এই গণনায় তারা সেখানে যাওয়া বাংলাদেশীদের চিহ্নিত করছে। ধারণা করা হচ্ছে- সেখানে কয়েক মিলিয়ন বাংলাদেশী আছে। এই তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর আরও একটা মিয়ানমারের মত সংকট বাংলাদেশের সামনে এসে দাঁড়াবে বলে মনে হচ্ছে। তবে কী আমার বলা সেই 'মিয়ানমার মডেল' একটা বাস্তব রূপ পাচ্ছে?

একই ঘটনা ইউরোপ-আমেরিকাতেও ঘটতে যাচ্ছে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে সৌদি আরব থেকে বিদেশী শ্রমিকগোষ্ঠী গণ বিতারণের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বলেই আমার বিশ্বাস। "এত জনগণের ভার আমাদের এই ছোট দেশের পক্ষে বহন করা সম্ভবপর নয়!"- হয়ত আমরা এটা বলে পার পাওয়ার চেষ্টাও করবো! কিন্তু সেটাও বেশীদিনের জন্য নয়! আগামীতে হয়ত এমন কথাও আমাদের শুনতে হতে পারে যে, "নিজদেশে রাখতে না পারলে এদের জন্ম দিয়েছো কেন?"

তাই বৈশ্বিক এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এবং দেশ ও জনগণের মঙ্গলার্থে বিশ্বব্যাপী পরিবার প্রতি "দুই-সন্তান নীতি" বাধ্যতামূলক করা হোক। না হলে একদিকে এই সমস্যা যেমন আমাদের চারিদিকের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিবে, তেমনি দেশে দেশে যুদ্ধও বাঁধিয়েও দিবে।

আর কেউ করুক আর না করুক, আমাদের সার্ক দেশগুলো্র মধ্যে অন্তত ভারত ও বাংলাদেশ এই নীতি নিয়ে এগোতে পারে। তাতে করে জনসংখ্যার একটা নিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। স্থায়িত্ব পাবে দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নও।

চীন 'পরিবার প্রতি এক সন্তান নীতি' বাস্তবায়ন করে ভাল ফল পেয়েছে!- এই কথা মাথায় রেখে আগালে অনুপ্রেরণা পাওয়া যাবে। একইভাবে 'পরিবার প্রতি দুই সন্তান নীতি' আমাদের এই অঞ্চলের অনেক সমস্যারই সমাধান করে দিবে বলে মনে করি। অন্তত আগামী ২৫ বছরের জন্য একটা ক্রাশ প্রোগ্রাম নেওয়া যেতে পারে; তারপর না হয় এটাকে আরও রিসাফল করা হলো? যেমনটা করেছে চীন?

আগের লেখাঃ