নারীর প্রতি অমানবিক প্রবৃত্তি ও নির্মমতার শেষ কোথায়!

সুমিত বণিক
Published : 7 March 2016, 08:51 PM
Updated : 7 March 2016, 08:51 PM

যে কোন নারীরই নারী জীবনের পূর্ণতার স্বাদ খুঁজে পায় মা হওয়ার মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে অবশ্য আমি আমার জন্মের সময় আমার মায়ের জঠর যন্ত্রণা দেখি নি। দেখার কথাও না। কবি পুলক বন্দোপাধ্যায়ের কথায় বলতে গেলে-'মা হওয়া নয় মুখের কথা, মাকে দেখেই বুঝি'। কিন্তু পেশাগত কারণে অসংখ্য মা কে জঠর যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেছি, দেখেছি অজ্ঞানতার মাঝেও মা হওয়া, দেখেছি প্রকৃতির বৈরি আবহাওয়া ও প্রতিকূলতাকে মাথায় রেখে মা হওয়ায় যন্ত্রণা ও নিদারুণ কষ্ট। চোখের সামনে ভুমিষ্ঠ শিশুর মৃত্যু। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর ২০১৫ইং রাতে ফেনীর সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা জেলেপাড়ার হিন্দুবাড়িতে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ঘটনায় প্রসূতি তুলসী রাণী দাস(১৮)এর উপর অমানবিক আচরণ কোন দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করবো ভেবে পাচ্ছি না!

ঐ নির্মম হামলায় প্রসূতি তুলসী রানীর মৃত সস্তান প্রসব হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্র অনুযায়ী, সাত মাসের প্রসূতি তুলসীর জীবন এমনিতেই সংঙ্কটাপন্ন ছিল এবং ঐ ঘটনায় চিরদিনের মতো মাতৃত্বের ক্ষমতা হারান তিনি। আর এই নির্মম মৃত্যুর জন্য কাকে দায়ী করবো? কি দোষ ছিলো অনাগত অপরিণত শিশুটির? কি দোষ ছিলো তুলসী রানীর? একটি নববিবাহিতা মায়ের মাতৃত্বের অপূর্ণতার কষ্ট কি দিয়ে পূরণ হবে?

একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে শুনেছি স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস হত্যাকান্ড ও বিভীষিকাময় নির্যাতনের কথা। শুনেছি মায়ের সামনে সন্তানের মৃত্যুর কথা। বাবার সামনে কন্যার সম্ভ্রম হারানোর বেদনাদায়ক কষ্টগাঁথা। গলিত লাশের গন্ধ আর খন্ডিত লাশের বিকৃত অংশগুলোর কথা। যেটা ছিল বাঙালী ও বাংলাদেশের জন্য একটা কালো অধ্যায়। কিন্তু সে অশুভ শক্তিকে তো বাংলার মুক্তিকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাড়িয়ে ছিল চুয়াল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হলো। কিন্তু এ বাংলাদেশ তো আমরা কখনো প্রত্যাশাও করিনি! তাহলে কি বলবো এই অশুভ শক্তি বিতাড়িত হয়নি?

হয়তো আবার সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে তুলসী রানী'র মতো নারীদের জীবন কিছুটা হলেও বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি এ ধরণের ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটবে না। তবে সর্বোপরি এ অক্ষমতা তুলসী রানী'র একার নয়! এ অক্ষমতা জাতির! কারণ আমরা কোন না কোন মায়ের সন্তান হয়েও আমাদের মধ্যে সেই মানবিকতাবোধটুকু জাগ্রত হয়নি। তাঁর মাতৃত্বের ক্ষমতা যারা নষ্ট করেছে, তারা প্রমাণ করেছে, মানুষ হিসেবে আমরা কতটুকু পশুত্ব অর্জন করেছি ও মানবিকতার স্খলনে প্রতিবাদে কতটুকু অক্ষম হয়েছি !

সত্যি ভাবতে কষ্ট হয়। কি করে মানুষ এতটা অমানবিক হয়? তবু আশায় বুক বেঁধে আছি, এই অধঃপতিত মানবিকতার উত্তরণ ঘটবে! নারীর প্রতি অমানবিক প্রবৃত্তি ও নির্মমতার অবসান হবে, তুলসী রানীর মতো আর কেউ মাতৃত্বের অপূর্ণতা বুকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাবে না।

সুমিত বণিক,

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী