নরপশুদের যৌনাকাঙ্খার নগ্ন অভিলাষ ও ধর্ষিতার করুণ চিৎকার!

সুমিত বণিক
Published : 23 March 2016, 05:52 PM
Updated : 23 March 2016, 05:52 PM

অনলাইন গণমাধ্যমে সোহাগী জাহান তনু'র(১৯) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাটি জানার পর থেকেই কেমন যেন একটা নিরব আর্তি বুকের মাঝে কষ্ট দিচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে আপন জায়গা মায়ের কাছেই চাপা কষ্টটা খুলে বলি!কিন্তু মায়ের কাছেও যে অমি এই বিভৎস ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দিতে পারবো না। কিভাবে বলি গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লায় যৌনাকাঙ্খার নগ্ন অভিলাষে মনুষত্বহীন কিছু নরপশু তনু কে খুবলে খেয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় কালভার্টের পাশে ঝোপঝাড়ে ফেলে রেখেছে! তনু'র নৃশংস নিথর দেহটা গণমাধ্যমে দেখে কিছুটা বাকরুদ্ধ! কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লা'র লেখা সেই 'বাতাসে লাশের গন্ধ'ও নেই। তাঁর কবিতায় তো ছিল-'সারারাত আমার ঘুম আসেনা-, তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার, নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ, মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস শরীর ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি ঘুমুতে পারিনা'। এখন তো এই কবিতার প্রেক্ষাপটও নেই! তবুও কেন আমাদের এই নির্ঘুম রাত্রি যাপন! তবুও কেন মানবিকতার করুণ আর্তনাদ চারিদিকে? অসহায় আর নিরপরাধ তনু'র মতো নিষ্পাপ মানুষের রক্তাক্ত লাশের মিছিল! উত্তর মেলে না, মেলাতে পারি না!

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দিন দিন যেন ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে। চলন্ত গাড়ি, ভাসমান নৌকা, কর্মস্থল, বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালসহ বাদ থাকছে না কোন স্থান! ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না শিশু থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী। ধর্ষণ প্রতিরোধে ইতোমধ্যে সরকারের প্রতি বেশকিছু সুপারিশও করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বিদ্যমান আইনের সংস্কার, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, পুলিশের আলাদা তদন্ত ইউনিট গঠন, ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাউনন্সিলিংয়ের জন্য একজন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেয়া।

একটা স্বাধীনদেশে ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজক ঘটনা শুধু কষ্টদায়কই না বরং উৎকন্ঠার বিরামহীন জন্ম দেয়। অসুস্থ মানসিকতার বীজ বপন করে সমাজে। স্বাধীনতার অম্লান অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই কিছু মানুষ যেন পরিকল্পিতভাবেই ধর্ষণের হোলি খেলায় মেতেছে। নগ্ন যৌনাকাঙ্খার পাশবিক মনোবৃত্তিটাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ হত্যার মহোৎসব করে তারা!

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই ধর্ষণ এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নিলে ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিতে পারে।

তাদের মতে, ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, সামাজিক অবক্ষয়, মানবিক গুণাবলিসমৃদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার অভাবের কারণেই মূলত এসব অপরাধ বাড়ছে। পাশাপাশি স্যাটেলাইট চ্যানেল ও ইন্টারনেটসহ আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির অবাধ বিস্তার ধর্ষণ বৃদ্ধির নেপথ্যে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী, অপরাধ বিশ্লেষক, শিক্ষক, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধে আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

সবাই এগিয়ে আসলেই হয়তো নরপশুদের লুলোপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবে তনু'র মতো নিষ্পাপ সম্ভাবনাময় জীবনগুলো ।

সুমিত বণিক

উন্নয়নকর্মী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, ঢাকা ।