মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গলাকেটে সংখ্যালঘু হত্যা ও নির্যাতনের বিচারের শেষ আশ্বাসটুকু কার কাছে চাইবো?

সুমিত বণিক
Published : 1 July 2016, 07:42 AM
Updated : 1 July 2016, 07:42 AM

সকাল বেলা পত্রিকার পাতা খুলতেই দেখি ঝিনাইদহে মঠের সেবায়েতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পত্রিকারান্তরে যতটুকু জানতে পারলাম, তিনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন। আর দুর্বৃত্তরা দেখে দেখে নিরপরাধ পুরোহিত আর দূর্বল সংখ্যালঘুদের চাপাতির কোপে বিভৎসভাবে মৃত্যুর হোলি খেলছে। বাংলাদেশে সাধারণ দোষীদের ক্ষেত্রে দেখি,যখন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কোনো আসামীর সাজা হয়,তখন রাষ্ট্রপক্ষ বাদী থাকার কারণে সহজেই কেউ সেই মামলায় খালাস পায় না। কিন্তু কষ্ট হয়,একের পর এক পুরোহিত কে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন গাত্রদাহই দেখতে পাচ্ছি না। আর হবেই বা কেন? যারা এদেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ সংখ্যালঘু!তাদেরই কোন প্রকার চুলকানিই নেই, সেক্ষেত্রে সংখ্যাগুরুদের দোষ দিয়ে কি হবে! তারা পারেন শুধু তাদের সখের অট্টালিকার দামী পালঙ্কে বসে একটু আফসোস করতে! এছাড়া কোন উত্তাপই নেই তাদের! নেই কোন জোড়ালো প্রতিবাদ! নেই এসব প্রতিরোধের দীর্ঘমেয়াদি কোন পদক্ষেপ! যাই হোক সংখ্যালঘু বলে কথা!

একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দুর্বত্তরা আতঙ্কের বীজ ক্রমেই ছড়িয়ে যাচ্ছে।দেশের নিরপরাধ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আজ চরমভাবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সম্প্রতি পাবনায় সেবাশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যার ঘটনা সেই বীজ ছড়ানো কে আরো এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। এর আগে গত ৫ জুন নাটোরে খ্রিস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে এবং গত ৭ জুন ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আর এই সংখ্যা ক্রমেই যেন বেড়েই চলেছে। আর সর্বশেষ ১ জুলাই কুপিয়ে হত্যা করা হয় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাষ্ট সাগরা গ্রামের শ্রীশ্রী রাধামদন গোপাল বিগ্রহে (মঠ)এর সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস ওরফে বাবাজি (৫০)কে।

মন্দিরে বসে যেই পুরোহিত বিধাতার কাছে ফুল,তুলসী দিয়ে নিবেদন করে পাঠ করেন ওম্ শান্তি আর জগতের সকলের কল্যাণ হোক। সেই পুরোহিতই অবশেষে দুর্বৃত্তের চাপাতির কোপে মৃত্যুবরণ করে,শান্তির উদাহারণ তৈরি করে যাচ্ছেন? এই বাংলাদেশই কি আমরা চেয়েছিলাম? স্বাধীনতার সময় যে সকল সংখ্যালঘুরা মাতৃভূমিকে ছেড়ে পরদেশে চলে গিয়েছে চিরদিনের জন্য, তারাই সঠিক সিন্ধান্ত নিয়েছিল? নাকি তারাই সঠিক সিন্ধান্ত নিয়েছিল,যারা প্রাণ বাঁজি রেখে দেশমাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করেছিল বা নিজের জীবনটাকে বিলিয়ে দিয়েছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অদম্য নেশায়!উত্তরটির সঠিকতা নিয়ে আজো বুকের মধ্যে ভর করে আছে এক ধরণের দুদোল্যমানতা!আর আমরা যারা আজো মাতৃভূমিকে ভালবেসে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই,তারা নিরাপদে বেঁচে থাকার শেষ আশ্বাসটুকু কার কাছে চাইবো?

সুমিত বণিক
উন্নয়নকর্মী, ঢাকা।
sumitbanikktd.guc@gmail.com