উন্নয়নকর্মী হয়ে ওঠার নেপথ্যের কিছু আত্মকথা

সুমিত বণিক
Published : 26 July 2016, 07:07 PM
Updated : 26 July 2016, 07:07 PM

ক্যারিয়ারটা কোথা হতে শুরু করবো, কিভাবে শুরু করবো, সে রকম কোন ভাবনাই ছিলনা আমার। গতানুগতিক ধারাতেই চলছিল ছাত্র জীবন। ভাবনা ছিল, আগে পড়াশোনাটা শেষ করি, তারপর যেকোন একটা চাকরি-বাকরি করবো। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স পড়ার শুরুর দিকে একদিন (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) টিআইবি'র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আহবানের লিফলেট চোখে পড়ে।

নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া শেষে সম্পৃক্ত হই দুর্নীতি বিষয়ক সামাজিক আন্দোলনের সাথে। এর মাধ্যমেই মূলত উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে আমার পরিচয়।২০০৯ সালের দিকে ছাত্রাবস্থাতেই কাজ করি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র,বাংলাদেশ) আইসিডিডিআর,বি'র মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক স্বল্পকালীন গবেষণা প্রকল্পে। তখনো ভাবনা চূড়ান্ত করা হয়নি,কি করবো,কি হবো,কিভাবেই বা শুরু করবো কর্মজীবনের অন্তহীন বন্ধুর অচেনা পথ!

অনার্স শেষে মা ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করি (পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার) পিএসটিসিতে। এরই মাধ্যমে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে কিছুটা সখ্যতা তৈরি হয়ে যায়। অনেকটা মনের অজান্তেই ভালবেসে ফেললাম এই পেশাটাকে। অনার্স শেষে মাস্টার্স পড়ার সময় নবজাতকের সংক্রমণ বিষয়ক গবেষণা প্রকল্পে কাজ করি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) বিএসএমএমইউ'তে।

হঠাৎ আপন চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে মাথায় ঘোরপাক খেতে থাকে,নিজেকেই একদিন প্রশ্ন করলাম! আমি কি এই এনজিওতেই পেশা চালিয়ে যাব? ভেবে দেখলাম অমসৃণ এই পথের প্রতিবন্ধকতাগুলো! প্রায়শই বাধ্যতামূলক অবসরে যেতে হয়!এক অজানা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হয়, কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থাতেও পড়তে হয়!

তবুও অবশেষে ভেবে দেখলাম,নিজেকে যেটুকু তৈরি করেছি,তার ন্যূনতম মূল্যায়ণ এনজিওতেই আছে, পাশাপাশি রয়েছে অসহায়-সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর জীবনমানকে উন্নত করতে কাজ করার কিছু সুযোগ। এরপর আরও কাজ করেছি (ফুনডাসিয়ন ইন্টারভিডা,বাংলাদেশ) এফআইবি-এ,তারপর (লায়ন মোখলেছুর রহমান ফাউন্ডেশন) এলএমআরএফ  এ।

এরই মধ্যে চিন্তা আসলো,অনেকদিন ধরেই তো জনস্বাস্থ্য বিষয়ের উপর কাজ করছি, কিন্তু এ বিষয়ে একটু জানার জন্য একাডেমিক পড়াশোনা দরকার। এরপর জনস্বাস্থ্য বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হলাম ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ এশিয়াতে। এখন থিসিস পার্ট চলছে। এরপর কাজ করলাম আরো কিছু স্বল্পমেয়াদী প্রকল্পে। কাজ করেছি জিতা বাংলাদেশ লিঃ, ম্যাপসি বাংলাদেশ-এ। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এসে এখন আবারও আইসিডিডিআর'বি'তে কাজ করছি ফিল্ড রিসার্চ অফিসার হিসেবে।

কাজের কারণেই ঘুরে বেড়িয়েছি দেশের অধিকাংশ এলাকা,দেখেছি হাওর ও পার্বত্য এলাকার অপরূপ প্রকৃতিকে। দেখেছি প্রকৃতির বিরূপ অবস্থার কারণে অবহেলিত মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন জীবনযাত্রা ও দুর্দশার চিত্র।জীবন-জীবিকার অসম বৈচিত্র ও বৈষম্য।


হেঁটেছি বাংলার দুর্গম জনপদে। আর এভাবেই মনের অজান্তে ধীরে ধীরে অনেকটা একজন উন্নয়নকর্মী বনে যাচ্ছি। এখন ইচ্ছে হলো, দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হচ্ছে, তা বর্তমান পেশায় কাজে লাগিয়ে পেশার উৎকর্ষ সাধন এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একাডেমিক কোর্সটি সম্পন্ন করা।

নিজের অর্জিত মেধা ও জ্ঞান অবহেলিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিনিয়োগের পাশাপাশি স্বপ্ন দেখি জাতিসংঘের মতো উচু্ঁমানের যে কোন প্রতিষ্ঠানে একজন পেশাদার উন্নয়নকর্মী হিসেবে কাজ করবো!

সুমিত বণিক,

উন্নয়নকর্মী, ঢাকা।