মন্দিরে হামলা কি ধর্ম অবমাননা নয়?

সুমিত বণিক
Published : 6 Nov 2016, 03:58 PM
Updated : 6 Nov 2016, 03:58 PM

গত ৫ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলো'র সম্পাদকীয় পাতায় কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান এর লেখা 'মন্দিরে হামলা কি ধর্ম অবমাননা নয়?' শীর্ষক নিবন্ধটি পড়ে কিছুটা হলেও মনে প্রশান্তির ছোঁয়া পেয়েছি। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ধর্মান্ধদের লোলুপ দৃষ্টিতে এখন আমাদের প্রাণের প্রিয় বাংলাদেশ!সংকীর্ণমনা ধর্মান্ধরা হয়তো চান সংখ্যালঘু শূণ্য বাংলাদেশ! তাদের কাছে খুব জানতে ইচ্ছে করে তাতেই কি সকল সমৃদ্ধি'র সারণির তালিকায় বাংলাদেশ সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণ হবে? সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ধর্মান্ধদের ঘৃণ্য অপকর্মের তান্ডবে অনেক সংখ্যালঘু মানুষ স্বজনের চরম বিপন্নতা জেনেও মনের আর্তিটুকু পর্যন্ত জানাতে ভয় পান! ভাবপ্রকাশের পরাধীনতায় ভোগে!


কিছুটা আশান্বিত হই,যখন দেখি শ্রদ্ধাভাজন কিছু কলম সৈনিক মানুষ ও গণমাধ্যম শুভবোধের পক্ষে দাড়িয়ে এসব অনাচারের বিরুদ্ধে তাঁদের সুদৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে উচ্চকিত করেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার চেতনা। তখন সত্যিই মনে হয় এটিই আমার সত্যিকারের বাংলাদেশের চিত্র ও প্রতিচ্ছবি! শ্রদ্ধাভাজন সোহরাব হাসানের লেখার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আমিও বলতে চাই ''বাংলাদেশকে শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ বলে আমরা বড়াই করি।


কিন্তু সেই শান্তি ও সম্প্রীতি যারা ভঙ্গ করে, যারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে, যারা ভিন্ন ধর্মের মানুষের ঘরবাড়ি লুট করে,তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো প্রতিবাদ দেখি না। আমাদের প্রশাসন খুবই দায়িত্বশীল। রাজনীতিকেরা পরমতসহিষ্ণুতার জ্বলন্ত প্রতীক। আমাদের নাগরিক সমাজ মানবাধিকারের বলিষ্ঠ খেদমতগার। এসবের পরও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। তাহলে গলদটি কোথায়?


আমরা কি এমন বাংলাদেশই দেখতে চেয়েছিলাম? সর্বোপরি যেখানে রাষ্ট্র স্বয়ং অনুমোদন করে 'ধর্ম যার যার,দেশটা সবার' সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কর্ণধারদের কিছু করণীয় আছে বৈকি? নাকি তাদেরও কিচ্ছু যায় আসে না? উত্তর মেলে না? দিধান্বিত হই এই ভেবে যে, স্বাধীনতার সময় যে সকল সংখ্যালঘুরা মাতৃভূমিকে ছেড়ে দেশান্তরী হয়েছে চিরদিনের জন্য তারাই সঠিক সিন্ধান্ত নিয়েছিল নাকি তারাই সঠিক সিন্ধান্ত নিয়েছিল,যারা পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশমাতৃকাকে  স্বাধীনকরতে নিজের জীবনটাকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিল একটি বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অদম্য নেশায় ! উত্তরটির সঠিকতা নিয়ে আজো বুকের মধ্যে ভর করে আছে এক ধরণের দুদোল্যমানতা! তাছাড়া আমরা যারা নতুন প্রজন্ম আজো মাতৃভূমিকে ভালবেসে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই,তারা নিরাপদে বেঁচে থাকার শেষ আশ্বাসটুকু কার কাছে চাইবো?
২ নভেম্বর বিবিসি বাংলা কে এক সাক্ষাৎকারে ঐদিনের ঘটনার প্রতিরোধকারী জামালউদ্দিন বলছিলেন, "ওইদিন আমার নিজের প্রতি একটুখানিও মায়া ছিল না। আমার এক ভাই অন্যায় হামলার শিকার হবে, আমাদের মা বোনদের ইজ্জত যাবে – তাহলে আমাদের থেকে লাভ কী?"

আর ঐদিনের হামলার শিকার দত্তবাড়ির বাসিন্দা নীলিমা দত্ত বিবিসি বাংলা কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "এক মুসলমান হামলা করেছে, আরেক মুসলমান বাঁচাইছে। ওরা যদি আমাদের রক্ষা না করতো, তাহলে এখানে লুটপাট হইতো"।

আজও আশায় বুক বাঁধি কারণ আমাদের চারপাশে, আমাদেরই মাঝে এখনো জামাল উদ্দিনের মতো অসংখ্য মানুষ ছড়িয়ে আছে!

সুমিত বণিক
উন্নয়নকর্মী,ঢাকা।
sumitbanikktd.guc@gmail.com