৪ লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত, নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা

সুমন দে
Published : 5 May 2016, 06:25 AM
Updated : 5 May 2016, 06:25 AM

হাকালুকি হাওরের ঐতিহ্য হারাচ্ছেঃ  ৪ লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত
হাকালুকি ফিরতে চায় আপন প্রাকৃতিক বৈচিত্রে

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর। এটি এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। এর আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর, তন্মধ্যে শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার় বড়লেখা (৪০%), কুলাউড়া (৩০%), এবং সিলেট জেলার় ফেঞ্চুগঞ্জ (১৫%), গোলাপগঞ্জ (১০%) এবং বিয়ানীবাজার (৫%) জুড়ে বিস্তৃত। ভূতাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান, উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশে। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উজানে প্রচুর পাহাড় থাকায় হাকালুকি হাওরে প্রায় প্রতি বছরই আকষ্মিক বন্যা হয়। এই হাওরে ৮০-৯০টি ছোট, বড় ও মাঝারি বিল রয়েছে। শীতকালে এসব বিলকে ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা। হাকালুকি এলাকা মুলত সিলেট বিভাগে বিস্তির্ন।

বর্ষায় সাগর ও গ্রীষ্মে ধুধু মাঠ। এ এক অনাবিল সৌন্দর্য। মনোরন ও দৃশ্য উপভোগের জন্য সরকারী ও বেসরকারী ভাবে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও সুস্থ পরিকল্পনার অভাবে এশিয়ার অন্যতম ও দেশে বৃহত্তম হাওর হাকালুকি ক্রমশ তার অতীত সৌন্দর্য হারাচ্ছে। হাকালুকির বৃহত্তম সিলেট বিভাগের দুটি জেলা ও ৫টি উপজেলায় প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষের জীবন জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা, বরমচাল, ভুকশিমইল, জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ও জায়ফরনগর এবং বড়লেখা উপজেলার দক্ষিনভাগ, সুজানগর, বর্ণী ও তালিমপুর, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের গিলাছড়া, গোলাপগঞ্জের শরীপগঞ্জ উত্তর বাদে পাশা ইউনিয়নগুলোর প্রায় ৫৫ হাজার একর জমি ও হাকালুকি হাওরের অর্ন্তভুক্ত। এর মধ্যে ছোট বড় বিল রয়েছে ২৪০টি, প্রায় ২৫-৩০ বছর আগেও হাকালুকি হাওর সৌন্দর্য প্রেমীদের আকর্ষন করত । গড়ে উঠতে পারত বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

বর্ষা মৌসুমে হাকালুকি তে নৌকাযোগে পর্যটকদের আনাগুনা বেশ ভালেই ছিল। কিন্তু এখন আর এ দৃশ্য চোঁখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে রক্ষনাবেক্ষন এর অভাবে হাকালুকি হাওর তার অতীত সৌন্দর্য হারিয়েছে। অথচ এক সময় ধান ও মৎস্য ভান্ডার জলজ উদ্ভিদ বন্য প্রাণী ও অসখ্য পাখপাখালি অভয়াশ্রম ছিল এ হাওরে। ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর (সিএনআরএস) এর জীব বৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষায় হাকালুকির বিভিন্ন স্থানে মৎস্য পাখপাখালির নিরাপত্তার জন্য অভয়াশ্রম তৈরি করেছে। হারিয়ে যাচ্ছে হাকালুকির সকল সম্পদ ও হাজার বছরের ঐতিহ্য। হাকালুকি হাওরে অতীত  ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষায় সরকারের উদাসীনতায় জনগনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে !

মৎস্যজীবিদের ধারণা মিঠাপানির বৃহৎ ও উন্নত জাতের মাছের প্রজনন কেন্দ্র হল এই হাওর। প্রাকৃতিক ভাবে হাকালুকি হাওরে মাছের ডিম পাড়ার অনুকুল পরিবেশ রয়েছে। অন্য দিকে বৃহত্তর এ হাওরে মৎস্য সম্পদ নির্বিচারে নিধন হওয়ায় জুড়ী, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলায় এখন মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ৩ উপজেলার হাটবাজারে দেখা দিয়েছে মৎস্য শুণ্যতা। প্রতি বছর সরকারী ভাবে হাকালুকি হাওরের বিলগুলি লিজ দেওয়া হলে অসাধু মৎস্যজীবিরা বেআইনী ভাবে সেচ দিয়ে বিল শুকিয়ে মাছ ধরে মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্থ করেছে। তাছাড়া মৎস আইন লঙ্গন করে খেয়াল খুশিমত মাছ ধরেছে। এমনকি রেনু, পোনা ধরায় মাছের আবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

হাওরের পাড়ের মানুষ গুলো ও সচেতন মহলের ধারণা, দেশের বৃহত্তম হাকালুকির মৎস ভান্ডার রক্ষা করতে হলে বিল সরকারী ভাবে সংরক্ষণ করা জরুরী। এছাড়া মৎস্যজীবিদের মৎস্য আইন মেনেচলা অতীব জরুরী। হাকালুকি হাওরের বিলগুলোতে প্রায় ১৫০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশ বিদেশী পাখীদের অবাদ বিচরন স্থল হাকালুকি হাওর। কিন্তু পাশি শিখারীদের তৎপরতায় পাখি শুন্য হতে চলেছে হাকালুকি। ২০০৬ সালে পাখি শুমারি অনুযায়ী আগের বছরের তুলনায় পাখির সংখ্যা কমেছিল ৯২ হাজার। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর (সিএনআরএস) এ উদ্যোগে ২০০৭ সালের পাখি শুমারীতে পাখির সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যায়। হাওর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফসল ও মৎস্য ভান্ডার রক্ষার পাশাপাশি হাকালুকি হাওরের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে দেশী বিদেশী পর্যকটদের আকৃষ্ট করে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেণ পরিবেশ সচেতন মহল।