সিলেটের সারদাহল সংস্কার ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইনের দাবি

সুমন দে
Published : 27 Nov 2016, 07:01 PM
Updated : 27 Nov 2016, 07:01 PM

সিলেটের প্রখ্যাত আইনজীবী, চা-ব্যবসায়ী সারদাচরণ শ্যামের স্মরণে ১৯৩৬ সালে তৈরি হয় সিলেটের সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যতম স্তম্ভ সারদা হল। স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারদাচরণের স্মৃতি বিজড়িত শতাব্দি পুরাতন মিলনায়তনকে কেন্দ্র করেই সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আবর্তিত হত। কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউটের আদলে গড়ে ওঠা এ মিলনায়নের মোট জায়গার পরিমাণ ৩৯ শতক। সুরমা পারের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা সারদাহল আজো টানে সিলেটে সংস্কৃতিপ্রিয়দের।

কে ছিলেন সারদা চরণ শ্যাম? ১৮৬০ সালে জমিদার পরিবারে সারদা চরণের জন্ম। তৎকালীন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, রাজনগর ও বালাগঞ্জ থানার অংশবিশেষজুড়ে তাঁদের জমিদারি ছিল। সারদাচরণ ছোটবেলা থেকেই অন্য রকম ছিলেন। জমিদারিতে নিজেকে আটকে রাখতে চাননি। লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিলেন। পরিসংখ্যান ও ইংরেজি-দুটি বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সেই সময় তিনি আইন বিষয় নিয়ে লেখা-পড়া করেন। সে সময় পুরো জেলায় দুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আর কারো ছিল না। লেখাপড়ার পাট শেষে সারদাচরণ সিলেট জেলা বারে আইন পেশায় নাম লেখান। তখন থেকে আজঅবদি আইন পেশা বংশ পরমপরায় রূপ নিয়েছে। কিছুদিন পর মুনসেফ হয়ে মৌলভীবাজারে চলে যান। সেখানেও খুব বেশি দিন থাকেননি। ইংরেজির অধ্যাপক হয়ে এবার যোগ দেন বিহারের কটক কলেজে। শিক্ষকতার পেশাও তাঁকে জড়িয়ে রাখতে পারেনি। সিলেট জেলা বারে ফিরে আবার আইন পেশায় মন দেন। সিলেট জেলা বারের সভাপতি নির্বাচিত হন পরপর পাঁচবার। মনে হলো, এবার বুঝি স্থিতি হলেন। কিন্তু ১৮৮৮ সালের দিকে নতুন এক চিন্তা তাঁকে অস্থির করে তোলে। তাঁর ভাবনায় এলো, নিজে চা বাগান করবেন। কেন সব বিদেশিরাই করবে?

পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবকে সঙ্গী করে ১৮৯৬ সালে প্রায় চার হাজার ৫০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তুললেন ইন্দেশ্বর টি অ্যান্ড ট্রেডিং কম্পানি। এটি শুধু বাঙালিদের প্রথম চা বাগানই নয়, সে সময়ে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় চা বাগান ছিল। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কাজে নেমে পড়লেন। সিলেট জেলার রাজনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ থানায় নিজেদের জমিদারির কিছু জায়গায় প্রতিষ্ঠা করলেন উত্তরবাগ চা বাগান। সারদা পরিবারের বাইরে যারা এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন, তারাও তখন কিছু জমিজমা দান করেছিলেন বাগানের জন্য। এভাবেই গড়ে ওঠে বাঙালিদের মালিকানাধীন প্রথম চা বাগান। সারদাচরণ শ্যামের দক্ষ পরিচালনা বাগানকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়।

১৯১৬ সালে ৫৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ভাইয়ের ছেলে বিমলাচরণ শ্যাম। তিনিও কাকার মতো আইন পেশায় যুক্ত ছিলেন। বিমলাচরণের হাতে ব্যবসা আরো প্রসারিত হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠান অকটোভিয়াস স্টিলের কাছ থেকে তিনি কিনে নেন ফেঞ্চুগঞ্জের ইন্দানগর চা বাগান। হয় সংস্কৃতিমনা আর নাটক সম্মন্ধে ভালো জ্ঞান রাখতেন সারদাচরণ শ্যাম। বিমলাচরণ শ্যাম  ১৯৩৬ সালে তাঁরই স্মরণে সারদাহল নির্মান করেন। কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউটের আদলে গড়া হয় সারদাহল। সেই সময়ে প্রায় ১ লাখ টাকার বিনিময়ে নির্মাণ শৈলীতে খরচ করেন বিমলাচরণ শ্যাম। তৎকালীন আসাম রাজ্যের গভর্ণর মাইকেল ক্বিন (যার নামে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বিন ব্রিজ) সারাদহল উদ্বোধন করেন।

১।

যে কোন সময় বুলডোজার আসতে পারে। থিয়েটার হল ভেঙে ফেলা হবে। কিন্তু সংস্কৃতি কর্মী ও নাট্যকর্মীরা তা ভাঙতে দেবে না। এটা পুরার্কীতি, তা সংরক্ষণ করতে হবে। রাত-দিন বসে থেকে সংস্কৃতিকর্মী ও নাট্যকর্মীরা পাহারা দিচ্ছে ধ্বংসপ্রায় পুরনো থিয়েটার হলটি ঘিরে। কর্মীরা বক্তৃতা দিচ্ছে, আন্দোলন গড়ে তুলে তারা দাবি জানাচ্ছে সরকারের কাছে এই থিয়েটার হলটি সংরক্ষণের জন্য।"

ঘটনাটি ঘটেছে আশির দশকের শেষের দিকে বৃটেনের উত্তর লন্ডনে। একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্যে ওখানে একটি পুরনো বাড়ী ভেঙে ভিত খুড়তে গিয়েই আবিষ্কৃত হয়ে পরে এলিজাবেথীয় নাট্যধারার নিদর্শন রোজ থিয়েটার। আর এই নিয়ে যা কান্ড ঘটে গেল উত্তর লন্ডন সহ সারা বৃটেনে, তা অবশ্যই বিশ্বনাট্য আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

প্রত্যেক দেশেই তার সংরক্ষিত ঐতিহ্যবাহী জাতীয় নাট্যশালা রয়েছে। দুর্ভাগ্য, আমাদের তা নেই। জার্মানে যেমন, 'অঁসবল' থিয়েটার, সোভিয়েত ইউনিয়নের আছে 'বলশয়' থিয়েটার, আছে ভারতের কলকাতায় সেই ষ্টার 'থিয়েটার' হল। শত বছর ধরে এগুলোকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কালের আবর্তে বা অবহেলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। হলটির নাম 'সারদা স্মৃতি ভবন'সবার কাছে সারদা হল বলেই পরিচিত। এই হলটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৩৬ সালে। শ্রী সারদা চরণ শ্যাম ছিলেন একজন প্রখ্যাত্য চা ব্যবসয়ী। নাটকের প্রতি তাঁর বিশেষ আকর্ষণের জন্য এই নাট্যমঞ্চটি প্রতিষ্ঠা ও জায়গা দান করেছিলেন। কোলকাতার স্টার থিয়েটার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ব্যবসয়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। শেষ মুহূর্তে নাট্যকার্মী বিনোদিনী স্টার থিয়েটারকে জনগনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁর নিজের সব কিছু বিসর্জন দেওয়ার মধ্য দিয়ে। কিন্তু সারদা হলকে এমন কোন সংকটে পড়তে হয়নি। শ্রী সারদা চরন শ্যাম এটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন জনগনের জন্যে। সংস্কৃতি চর্চাকে যাঁরা ভালবাসেন তাঁরা অবশ্যই মহৎ। কারণ একথা তো সত্য যে, মানুষ সমাজ জাতি ও দেশ তখনই সমৃদ্বিশালী হয়ে ওঠে যখন তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শক্তিশালী হয়। আর এমন একটি কাজে কোন ব্যক্তি যদি তার উপার্জিত অর্থ বিলিয়ে দেন তিনি অব্যশই দেশপ্রেমিক। আজ এই একবিংশ শতাব্দিতে এসে আমার এমন কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারিনি যে, তা অনুসরণ করা যায়। এই অবেলায় তাই অতিতকে ¯স্মরণ করতে হবে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে শ্রী সারদা চরণ শ্যাম" আমাদের সিলেটের নাট্য আন্দোলন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

২।

সারদা হল সম্পর্কে এবং এর নির্মাণ শৈলী সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা প্রয়োজন। জাতীয় স্থাপত্য কলার সাথে আমাদের এই অঞ্চলের মঞ্চস্থাপত্য কলার এক নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। বাঙালীর নাট্যমঞ্চের ইতিহাস একশত বছরের অধিক। মঞ্চস্থাপত্য কলার মধ্যে পৃথিবীতে ইতালী বিশ্বনাট্য আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। পৃথিবীতে বর্তমানে আমরা মঞ্চস্থাপত্যে তিনটি ধারা অনুসরণ করি। এর মধ্যে গ্রীক মঞ্চকলা, রোমান মঞ্চকলা ও এলিজাবেথীয় মঞ্চস্থাপত্য কলা। আমাদের সারদা হলের মঞ্চশৈলীতে এলিজাবেথীয় মঞ্চস্থাপত্য ধারার প্রভাব লক্ষণীয়।

সারদা হলটি যে জায়গায় অবস্থিত সেই স্থানটি অতীতে অত্যন্ত সুন্দর ছিল। হলটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুরমা নদী প্রাকৃতিক পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এক কথায় সুন্দর পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখে এই হলটি গড়ে তোলা হয়।

হলের সামনে ছোট একটি সবুজ লন, হলের ভেতর প্রবেশ করতেই সামনে ছাদ সহ বারান্দা। আর দু'পা এগিয়ে গেলেই হাতের বাঁয়ে সাজঘর, ডানে টিকিট ঘর, সামনের প্রবেশ পথে তিনটি দরজা। ভেতরে তিন সারিতে তিন ধরনের চেয়ার। সামনের দু'তিন সারি গদিমোড়া চেয়ার আর মাঝখানে সাধারণ চেয়ার, পেছনে হেলান দেয়া লম্বা বেঞ্চ। কাঠের পাটাতনের উপর মূল মঞ্চ। দু'পাশ থেকে মঞ্চতে উঠার জন্যে রয়েছে কাঠের সিড়ি।

মঞ্চটির নাম ছিল 'ক্ষিরোদ মেমোরিয়েল ষ্টেজ'। প্রখ্যাত নাট্যকর্মী ক্ষিরোদ দেবের নামে সারদা হলের মূল মঞ্চটি উৎসর্গ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৭১-এ হানাদার পাকিস্তানীরা মূল মঞ্চের এই নামটি সরিয়ে ফেলে এবং সারদা হলের উপরের নামটি মুছে ফেলে। নীচে দর্শকদের চেয়ারগুলো বেশ কিছু কংক্রিটের ভিতের উপর সারিবদ্ধ ভাবে বসানো। হলের ঠিক পেছন দিকে কোণায় একটি দরজা দিয়ে উপরের ব্যালকনীতে যাওয়া যায়। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উপরের ব্যালকনীতে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা আছে। ব্যালকনীতে ডানে-বামে হেলান দেয়া বেঞ্চ বাঁকা করে সারিবদ্ধভাবে বসানো ছিল। এখন তা নেই।

মাঝখান থেকে নেমে গেছে তিনটি ইলেকট্রিক ফ্যান। আর হলের প্রধান প্রধান জায়গায় ইলেকট্রিক বাল্ব তো ছিলই। পরবর্তীতে এই হলের কিছুটা সংস্কার হয়েছে, তাতে হলের পুরনো রূপটার বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন মুখ রক্ষার জন্যে এই হলের কিছু সংস্কার চালাতে গিয়ে তার মূল কাঠামোর বেশ ক্ষতি করা হয়েছে।

৩।

দেশে পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইন বা নীতি থাকলে হলের এরকম অবস্থা হতো না। একজন স্থাপত্যবিদের মাধ্যমে এই হলের সংস্কার করালে হলটিকে এখনও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। যা হবার তা হয়ে গেছে, এখনও বর্তমানে যেটুকু আছে তাকে রক্ষা করার জন্যে আমাদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ১৫৮৭ সালের উত্তর লন্ডনের রোজ থিয়েটার উদ্ধার করে একে সংরক্ষণের জন্যে ১৯৮৯ তে বৃটেনের নাট্যকর্মীরা যে রকম আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এখনও সেভাবে এই ঐতিহ্যবাহী সারদা হলকে সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্যে আন্দোলন শুরু করতে হবে। তাড়াতাড়ি এমন কোন পদক্ষেপ না নিলে হয়ত কোন একদিন রাতে বুলডোজার দিয়ে সারদা হল ভেঙে পেট্রো ডলারের শক্তিতে একটি বহুতল ভবন তৈরী হয়ে যেতে পারে।

এভাবে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। এই সিলেট শহরের আশে-পাশে বেশ কয়েকটি পুরনো নাট্যমঞ্চ ছিল, যার অস্তিত্ব এখন আর নেই। রাজবাড়ীর কুমার বাহাদুর গনিকা রমণ রায়ের বিখ্যাত ঘুর্নয়মান মঞ্চটি ও কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। এই শহরের বিভিন্ন এলাকার অতীত স্থাপত্যসমৃদ্ধ অনেক পুরনো বাড়ীও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছিল, কালের আবর্তে ও অবহেলায় তাও ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশে পুরাকীর্তি নীতি না থাকায় বা এ সম্পর্কিত কোন আইন প্রচলিত নেই বলে সারা দেশেই অতীত স্থাপত্য সমৃদ্ধ নিদর্শনগুলো ধ্বংস হচ্ছে বা ধ্বংস করা হচ্ছে।

ইটালীয় রেনেসায় 'টিয়াট্টা অলিম্পিকা' থেকে 'প্রোসিনিয়াম আর্চ' হয়ে দু'টি মহাযুদ্ধের শত আঘাতের মধ্যেও তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী মঞ্চস্থাপত্য কলার উত্তরাধিকারকে সংরক্ষণ করছে। মঞ্চস্থাপত্যকলায় পুরনো ও নতুনের মধ্যে সেতু বন্ধুন রচনা করছে। সেই ধারায় তাদের সংস্কৃতি হয়েছে সমৃদ্ধিশালী। রোজ থিয়েটারের নির্মাতা নাট্যকর্মী 'হেন স্লো' আর আমাদের সারদা হলের শ্রী সারদা চরণ শ্যাম তাদের ইচ্ছা অনুভূতি একই সূত্রে গাঁথা।

সমাজ, দেশ ও পৃথিবীর কল্যাণ কামনা ছিল তাদের জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য। পৃথিবী আজ দীর্ঘ পরিক্রমার মধ্য দিয়ে নতুন একটি ধারায় এসে উপনীত হয়েছে। এই ধারাকে লালন করার মধ্য দিয়ে নতুন পৃথিবী গড়ার আন্দোলনে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। মৌল চিন্তার নামে পৃথিবীতে যে প্রতিক্রিয়াশীলতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে তা চূর্ণ করে দেওয়ার জন্যে মানুষ ও পৃথিবীর কল্যাণে সমাজের ক্রমপরিবর্তনশীল চাহিদাকে সম্মান করতে হবে। আমাদের পৃথিবীতে এমন একটি একক সংস্কৃতি গড়ে তোলা প্রয়োজন যা আমাদেরকে উন্নত থেকে আরও উন্নত সংস্কৃতিতে আরোহন করতে সহায়তা করবে।

৪।

সারদা হলের কথা লিখতে গিয়ে ক্ষুদ্র একটি অঞ্চল থেকে আমরা পৃথিবীর বৃহৎ পরিধিতে চলে এলাম। কারণ, এখানে একটি কথা সত্য যে, আপন সংস্কৃতিকে লালন ও সমৃদ্ধ করার জন্যে বিশ্বসংস্কৃতির সাথে মিলন ঘটাবার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। আর ঠিক এ জন্যেই পৃথিবীর বৃহৎ পরিধিতে সামান্য কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করতে হলো। যেকোন সংকীর্ণ ব্যবস্থাকে চূর্ণ করে ভবিষ্যৎ নির্মাণের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জাতিতে মিলন ঘটাতে হবে। সুন্দর পৃথিবীর জন্যে এমন আন্তর্জাতিক মিলন সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই সম্ভব।

আমাদের সারদা হল তার অতীত ঐতিহ্যকে ধারণ করে এই সিলেট অঞ্চলের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে নব প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিয়েছে, করেছে গতিশীল। এই ধারায় সিলেটের নাট্যন্দোলনে নাট্যকর্মীদের পরিশ্রমও ব্যর্থ হয়নি। নাটক এখন নতুন দিনের বীজ রোপনে ব্যস্ত। এমন সংগ্রামী দায়িত্ব নিয়ে নাটক যেখানে জন্মলাভ করে এবং পরিপূর্ণ হয়ে সমাজের কল্যাণে দর্শকের চেতনাকে নাড়া দেয় সেই ঐতিহ্যবাহী হলটি আজ অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ভগ্ন ও ধ্বংস-প্রায় বৃটেনের রোজ থিয়েটারকে সংরক্ষণের জন্যে যদি আন্দোলন হতে পারে তবে আমাদের এখানেও ধ্বংস প্রায় সারদা হলকে প্রস্তাবিত পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইনের আওতায় সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্যে দাবি জানিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে কোন বাঁধা নেই। এমন একটি নতুন আন্দোলনের জন্যে সংস্কৃতি-কর্মীদের কাছে জোর আহবান রইলো।