মান্না দে’র ৯৯তম জন্মবার্ষিকী

সুমন দে
Published : 3 May 2018, 10:14 AM
Updated : 3 May 2018, 10:14 AM

১ মে, ১৯১৯ কলকাতায় জন্ম মান্না দে'র। মান্না দের আসল নাম হচ্ছে- প্রবোধ চন্দ্র দে। ডাক নাম মানা থেকে তিনি হয়ে ওঠেন মান্না। কাকা সংগীতাচার্য কৃষ্ণচন্দ্র দে'র কাছে সংগীতের হাতেখড়ি তার। সংগীত জগতে আসবেন না আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করবেন- এই নিয়েও নাকি দ্বন্দ্ব ছিল মান্না দে। তবে কাকা কৃষ্ণচন্দ্র চাইতেন ভাইপো গান করুক। কাকার ইচ্ছেতেই তার গানের জগতে আসা। পরে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন মান্না দে । স্কুল-কলেজে পড়াকালীন একাধিক মঞ্চে গান গেয়েছেন তিনি। সংগীতচর্চার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলার প্রতিও ছিলেন সমান আগ্রহশীল । পরবর্তী জীবনে তিনি গান গেয়ে বিখ্যাত হলেও প্রথম দিকে খেলাধূলাতেও বেশ আগ্রহ ছিলেন। যৌবনে কুস্তি, বক্সিংয়ের মতো খেলায় পারদর্শী ছিলেন মান্না দে। তাছাড়া ফুটবলও খেলতেন তিনি।  সুঠাম চেহারা আর সঙ্গে আকর্ষণীয় কণ্ঠস্বর। তিনি ভারতীয় সংগীতজগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নক্ষত্র। শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে আধুনিক যার সুরের গতি অবাধ। তার গানের মূর্ছনায় আজও বিভোর আমরা।

মান্না দে ১৯৪২ সালে 'তামান্না' ছবিতে এস.ডি. বর্মণের সংগীত পরিচালনায় প্রথম প্লেব্যাক করেন। সুরাইয়া জামাল শেখের মিলিত কণ্ঠে এই ছবির 'জাগো আই উষা' গানটি খুবই জনপ্রিয়তা পায়। এরপর 'রাম রাজ্য' ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ পান তিনি। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বিভিন্ন প্রজন্মের সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন জোট বেঁধে। নিজেও সুর করেছেন একাধিক গানের। কখনো রাজকাপুর কখনো উত্তম কুমারের কণ্ঠে প্লেব্যাক। ভাষায় অবাধ গতি ছিল তার। বাংলা, হিন্দি থেকে শুরু করে গুজরাটি, অসমিয়া, মালায়লাম, মারাঠি, পাঞ্জাবি, ভোজপুরি, উড়িয়া প্রভৃতি ভাষায় প্রায় ৪,০০০-এর অধিক গান রয়েছে তার।

সংগীতচর্চায় অবদানের জন্য মান্না দে বেশ কিছু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৭২ সালে 'মেরা নাম জোকার' সিনেমায় গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠের জন্য ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০৪ সালে জাতীয় পুরস্কার পান। তিনি ভারত সরকারের পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত হন। এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১১ সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে তাকে ভূষিত করে।

পহেলা মে, ৯৯ বছরের শুভ জন্মদিনে শিল্পীকে আমরা স্মরণ করলাম। যদিও রাজসিংহাসন খালি, তবু থেকে গেছে মান্না দে'র একাধিক গানের মনি-মাণিক্য গাঁথা সেই মুকুট। যত দিন বাঙালি থাকবে, বাংলা গানের সমঝদারদের মুখে বারবার উঠে আসবে তার নাম।

২০১৩ সালের ৮ জুন ফুসফুসের জটিলতার জন্য মান্না দে ব্যাঙ্গালোরে একটি হাসপাতালের আইসিইউ তে ভর্তি হন। তারপরের দিন ৯ জুন তার মৃত্যুর গুজব রটে। ডাক্তাররা এই গুজবের অবসান ঘটান এবং নিশ্চিত করেন যে তিনি তখনও বেঁচে আছেন। তবে তার অবস্থার বেশ অবনতি হয় এবং আরও কিছু নতুন জটিলতা দেখা দেয়। পরে ডাক্তাররা তাঁর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানান। মান্না দে ২৪ অক্টোবর ২০১৩ সালে ব্যাঙ্গালোরে মৃত্যুবরণ করেন।