পাষাণ মানুষ

সুমু সুমাইয়া
Published : 11 Dec 2017, 07:08 PM
Updated : 11 Dec 2017, 07:08 PM

আসলে শিরোনামে একটু পরিবর্তন আনা উচিত ছিল। কেননা পাষাণ আর মানুষ কখনো এক হতে পারে না। আচ্ছা, মানুষ অর্থ কী? কী এই মনুষ্যত্ব? আমাদের সমাজে কি এখন এই দুটি শব্দের কোনো অর্থ আছে? আমার তো মনে হয় কালক্রমে আমরা সভ্য হতে গিয়ে সবার আগে মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়েছি। আর শিখেছি শুধু অর্থ উপার্জন। শিখেছি বিলাসবহুল জীবনযাপনের অর্থ।

বর্তমান সময়ে মানুষই মনে হয় একমাত্র প্রাণী যে অন্যের সাহায্য করার আগে নিজের লাভ নিয়ে চিন্তা করে। আমি বলবো না তা খারাপ তবে তাই বলে সবটুকু মনুষ্যত্বের বিসর্জন দেয়া কি ঠিক? সামান্য বিবেকটুকুও কি নেই আমাদের!

আমার কথাগুলো কঠিন মনে হতেই পারে। তবে এর থেকে সহজ ভাবে কথাগুলো বলার উপায় আমার জানা নেই। কেননা রাস্তায় যখন দেখি সড়ক দুর্ঘটনা  হয়েছে আর সাংবাদিকরা তা নিয়ে লাইভ রিপোর্ট করছে, আবার এটাও দেখাচ্ছে দুর্ঘটনার জন্য কত লম্বা যানজট সৃষ্টি হয়েছে তবে তাই বলে তারা রিপোর্ট ছোট করে তার সমাধান বের করার চেষ্টা করে না। করবেই বা কেন! সময়তো অন্যের নষ্ট হচ্ছে। তার জন্য তো প্রোমোশনের পথ খুলে যাচ্ছে। কেননা, যত বড় যানজট তত বড় রিপোর্ট। হায়রে স্বার্থপর মানুষ! বুঝলাম সাংবাদিকরা চাকরির খাতিরে সাহায্য না করে ভিডিও করে। যদিও আমি বুঝিনা এ ভিডিও এর উপকারিতা কী?

সাংবাদিকের কথা বাদ দিলাম। অন্য এক ঘটনায় আসি। আমাদের সমাজে সবাই নিজেকে বড়লোক বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। আর এই বড়লোক শ্রেণীর মানুষের আচরণ তো আরও অবাক করার মতো। যানজটের সময় গাড়িতে বসে দেখা ঘটনা- শত শত গাড়ির মাঝে একটা রিকশা দাঁড়ানো। হঠাৎ বৃদ্ধ রিকশাওয়ালার শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। পকেট থেকে পাম্প বের করে তবে লাভ নেই কেননা ওষুধ শেষ। এরপর টাকা হিসেব করতে শুরু করে এবার দেখে পর্যাপ্ত টাকাও নেই। রীতিমত গাড়িগুলোর সামনে গিয়ে আকুতি করতে থাকে। একজন কিছু টাকা দিলেও বাকিরা মুখ ঘুরিয়ে দেখল পর্যন্ত না। আমার প্রশ্ন সবাই যদি তখন ৫ টাকা করেও দিতো তবে তাদের কি খুব ক্ষতি হতো? হাজার হাজার টাকা দিয়ে সিগারেট খেয়ে নিজেকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে কষ্ট লাগে না বরং ২ টাকা দিয়ে অন্যের সাহায্য করতে খুব কষ্ট! এ কেমন বড়লোকি আচরণ! আসলেই অবাক সমাজ আমাদের।

অবশ্য আমাদের মধ্যে আবেগ বা অন্যের প্রতি অনুভূতি কাজ করে না তা বলা ভুল হবে। কেননা, যে আত্নীয়র কোনো দিন খবর নেই না হঠাৎ যখন শুনি তার কঠিন রোগ হয়েছে তখন প্রায়ই তাকে দেখতে যাই। তার খোঁজ খবর নেই। এমনভাবে তাকে তার রোগ সম্পর্কে সচেতন করি যেন নিজেই তা পার করে এসেছি। একবারও চিন্তা করি না তার মনের অবস্থা কি! সে হয়তো রোগটা ভুলে থাকতে, নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে চেয়েছিল। তবে আমরা উঠে পরে লাগি তার সেই জীবনীশক্তিটুকু কেড়ে নিতে। তার জন্য সবকিছু সহজ করতে গিয়ে তাকেই শেষ করে ফেলি‌।

এভাবেই কি চলবে সবকিছু? সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশের দেখা কি আমরা কোনো দিন পাব না? অবশ্য সবাই তো আর পাষাণ না। তবে নিজেকে মানুষ বলার আগে অবশ্যই বিবেচনা করুন আপনি সত্যিই একজন মানুষ কিনা।