বাংলাদেশে চলমান তন্ত্রের নাম কি?

Published : 20 March 2016, 11:46 AM
Updated : 20 March 2016, 11:46 AM

অবাক লাগে আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থা ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে ভাবলে। সরকার গঠন করা হয় দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য। কিন্তু আমাদের দেশে সরকার গঠন করা হয় দলীয় স্বার্থ কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষারর জন্য। দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে ব্যক্তি বা দল আত্মোৎসর্গ করে। কিন্তু আমরা ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে দেশ, দেশের জনগণের জানমাল তথা দেশটাকে উৎসর্গ করি। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্রকেই গলা টিপে হত্যা করি। পদদলিত করি গণতন্ত্রের অন্যতম নিয়ামকগুলোকে যে নিয়ামক ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন।

প্রায়শই দ্বিধায় পড়ে যাই বাংলাদেশের চলমান শাসনব্যবস্থাকে কি নাম দেব? গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হলো সুষ্ঠু জনমত। কিন্তু বর্তমানে দেশে সুষ্ঠু জনমত দূরে থাক কেউ মুখ ফুটে কথাই বলতে পারছে বলে আমার মনে হয় না। কেউ যদি দেশের স্বার্থে কোন মতামত দেন আর তা কোন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বা দলের স্বার্থে আঘাত হানে তখনই তাকে স্বীকার হতে হয় অপহরণ কিংবা হত্যার মত ভয়ংকর ঘটনার। এটি তো গণতন্ত্রের রূপ নয়।

দেশ পরিচালনার প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিতার নামই হলো গণতন্ত্রিক সরকার। সরকারের কর্মকান্ডে দেশের সর্বস্তরের জনগণই মতামত দিতে পারবে। এই জবাবদিহিতা ও মতামত প্রকাশ হলো গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত।

উপরোল্লেখিত নমুনা যদি গণতন্ত্রের হয় তবে বাংলাদেশে চলমান তন্ত্রের নাম কি?

স্বাধীনতা পরবর্তী সকল সরকারই দলীয় স্বার্থে জনগণকে নানাভাবে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে কিভাবে নগ্ন হয়ে ব্যবহার করা হয়েছে জনগণের জানমাল তা সকলের অজানা নয়। সেদিকে না হয় আমি নাইবা গেলাম।

কিন্তু বর্তমানের বহুল আলোচিত রিজার্ভের টাকা লুটপাটের ঘটনাটি কেন এত সহজভাবে মেনে নেবো? বর্তমানে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তিতে ব্যাপক প্রসার লাভ করার পরও সরকার স্রেফ চীনা হ্যাকারদের হ্যাকিং বলে রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনাটি পুরো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু আসল সত্য যখন জনগণের সামনে আসতে শুরু করে তখনই নাই হয়ে যায় সত্য উন্মোচনকারী সেই আইটি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহাকে। অস্বীকার করা হচ্ছে জোহা তদন্ত কমিটির সদস্যই নয়। অথচ জোহা নিজে অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাকে চিঠি দিয়ে ডেকে নেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কাজে সহযোগিতার জন্য। যদি জোহা এই তদন্ত কমিটির সাথে জড়িত না হয় তবে কিসের ভিত্তিতে জোহা এত যুক্তি নির্ভর ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিলেন? কেনইবা সরকার জোহাকে চ্যালেঞ্জ করলো না এবং জোহার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিল না। একটি জিডি করার জন্য জোহার পরিবারকে কেন এতগুলো থানায় দৌঁড়াতে হলো অথচ জিডি গ্রহণ হলো না কেন?

এসব থেকে কি পরিস্কার হয় না যে রিজার্ভের টাকা পাচার ও তানভীর হাসান জোহার অপহরণ একই মহলের কাজ। তবে কি আমরা ধরে নেবো যে জোহা রিজার্ভের টাকা চুরির সাথে জড়িত থাকার জন্য যাদের ইঙ্গিত দিয়েছিন তারাই তার অপহরণকারী।

দেশের টাকা এর আগেও পাচার হয়েছে কোন বারই সুষ্ঠু সমাধান হয়নি। ফেরত আসেনি। দেশের টাকা ভেসেছে জুয়ার টেবিলে। এক একবারের টাকা লুটপাটে দেশ পিছিয়ে গেছে কয়েক যুগ। কিন্তু আমরা পারিনি আমাদের এই দুঃশাসন পরিবর্তন করতে। তাই আজো আমাদের দেশ এতটা পিছিয়ে।

প্রায় একই সাথে স্বাধীন হয়ে আজ মালয়েশিয়া আমাদের দেশ থেকে জনশক্তি নিচ্ছে। নিজেকে একটি সফল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছে। কিন্তু আমরা আজো তেমন কোন গণ্ডিই পেরুতে পারিনি। আমাদের দুঃশাসনই আমাদের দেশের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশে চলমান শাসনব্যবস্থাকে গণতন্ত্র না বলে দলতন্ত্র বলাই হয়ত সমীচীন হবে।

যাই হউক সবশেষে বলবো তানভীর হাসান জোহা ফিরুক তার পরিবারে এবং ফিরিয়ে আনা হবে পাচার হওয়া টাকা এই প্রত্যাশা সকলের।