শিক্ষিত সমাজের উদাসীনতাই নোংরা রাজনীতির কারণ

Published : 16 May 2016, 06:08 PM
Updated : 16 May 2016, 06:08 PM

আমাদের দেশ বর্তমানে বেশ ভয়াবহ সময় পার করছে। অনেকেই বলে থাকেন এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের সুশীল সমাজ তথা শিক্ষিত সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
কিন্তু আমাদের শিক্ষিত সমাজের এসব নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। অধিকাংশ শিক্ষিত লোককে বলতে শুনি বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতি নিয়ে উনার কোন মাথা ব্যথা নেই, তিনি এসব নিয়ে কোন কথা বলতে চান না। শিক্ষিতদের এক বিশাল অংশই এমন বাক্যব্যয় করে থাকেন। বর্তমান প্রজন্ম রাজনীতির প্রতি ব্যাপক উদাসহীন।
রাজনীতির প্রতি এমন নিচু ধারণা পোষন করা ও উদাসহীন হওয়ার জন্য আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের কর্মকান্ড ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিই দায়ী। রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতার লোভে ও ধাপটে এমন সব কর্মকান্ড করে থাকেন যা রাষ্ট্রের অস্বত্বিকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে ফেলে। যার ফলে রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমে গিয়ে এক প্রকার অনিহা সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সুযোগে সমাজের উগ্র, অযোগ্য ও মেধাহীন লোকেরা রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছে। ফলশ্রুতিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বদলে আরো কঠিন হয়ে পড়েছে।আজকাল অনেক অযোগ্য লোককে নেতৃত্ব দিতে দেখি যারা কিনা রাজনীতির "র" টাও বুঝেন না। এদের কাছে রাজনীতি মানে হলো ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাছিল করা। এরা না দেশকে কিছু দিতে পারে না দেশের জনগনের কোন উপকারে আসে।
আচ্ছা আপনার আমার এমন উদাসহীনতা কি এসব পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করবে নাকি আমাদের অংশগ্রহণ এই পরিস্থিতি থেকে দেশ ও দশকে মুক্তি দেবে। আপনার রাজনীতি বিমুখ হবার কারণেই যদি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারপ হতে থাকে তাহলে এর দায় কি আপনি এড়াতে পারবেন?
বহুল পরিচিত একটি কথা আছে "যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত।" কেন এমন কথা বলা হয় জানেন কারণ দেশে ও জাতির ক্রান্তি লগনে শিক্ষিত সমাজই তার দিক নির্দেশনা দেবে, দেশকে সর্বময় দিক থেকে সঠিক পথে পরিচালনা করবে তাই শিক্ষত জনগনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। অথচ আপনি শিক্ষিত হয়ে দেশের দুর্সময়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাহলে কি ধরে নেব দেশটাকে ধ্বংসের দিকে আপনিই ঠেলে দিচ্ছেন।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনি শিক্ষিত অথচ আপনার দেশে এমন নোংরা রাজনীতির চর্চা হচ্ছে তাতে আপনি নীরবতা পালন করছেন তাহলে কি আমরা সহজেই বলতে পারি না যে আপনিও এই নোংরা রাজনীতির জন্য দায়ী।

একবারও কি ভেবে দেখেছেন আপনার আমার এমন উদাসীনতাই দেশের পরিস্থিতিকে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তো ঠিকই প্রতিবাদ করতে পারবেন তাহলে শুরুতেই কেন নোংরামির শেষ করে দিলেন না।

হয়ত মনে করেছেন আমার সাথে তো এখনও খারাপ কোন আচরণ হয়নি তাহলে আমি কেন প্রতিবাদ করবো। আচ্ছা যখন অনিয়ম করে দেশে চাল, ডাল, নুনের দাম বাড়ে তখন কি আপনার সাথে অনিয়ম করা হয় না? যখন মেধা ও য়োগ্যতার বিচার না করে ঘুষ কিংবা রাজনৈতিক ক্ষমতার বলে আপনার মত হাজার বেকারের পেটে লাথি দিয়ে কোন অযোগ্য লোককে নিয়োগ দেয়া হয় তখন কি আপনার সাথে কোন অন্যায় করা হয় না? আপনার বোনটি যখন ঘরের বাইরে যেতে পারে না নিরাপত্তার ভয়ে তখন কি আপনার সাথে কোন দায়িত্বহীনতা প্রদর্শিত হয় না?

হয়ত বলবেন হ্যাঁ হয় কিন্তু এখানে আমি একা কি করতে পারি? মনে রাখবেন পাঁচটি কাঠি যখন আলাদা আলাদা তখন তা ভেঙ্গে ফেলা খুব সহজ কিন্তু যখন কাঠিগুলো একত্রে একটি আটি বাধা থাকে তখন কিন্তু ভাঙ্গা যায় না। আমরা কে কোন দল করি কে কোন মতের তা না ভেবে দেশ ও জনগনের স্বার্থে লাগে এমন কোন কাজ করলেই তার দল মত না দেখে প্রতিবাদ করতে করলেই কিন্তু আস্তে আস্তে নোংরামী কমে আসবে। আপনি আমি গনতান্ত্রিক দেশে বাস করি কাজেই সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা কিন্তু আমাদের মৌলিক অধীকার। সরকার যেকোন সিদ্ধান্ত নিলে তা কতটা দেশ ও জনগনের স্বার্থে তা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে কর্ম বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ফলে জনগনের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হবে? এই কাজটা কিন্তু দেশের সাধারণ জনগনের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা আমাদের দেশের ৮০ শতাংশ লোক বুঝে যে ২ বেলা খেতে পারার নাম অধিকার। কাজেই তারা গনতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়তে আসবে না। তারা বুঝে না যে গনতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হলেই তাদের মৌলিক অধিকারও নিশ্চিত হওয়ার পথ প্রসারিত হবে।তাই শিক্ষিত সমাজকেই সর্বপ্রথম সব কিছুতে এগিয়ে আসতে হবে।

আচ্ছা বলুন তো বাংলাদেশে কয়জন লোক শিক্ষিত? হাতেগুনা কিছু লোকই তো শিক্ষিত হচ্ছে। এখন এই হাতে গুনা লোকের ভেতরে আপনি বললেন এসব নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই, আমিও বললাম, আপনার আমার বন্ধুরাও বললো তাহলে কে নেবে এই দায়িত্ব? কে বলবে যে হ্যাঁ আমি রাজনীতিতে জড়াবো এবং একে একটি সুন্দর রূপ দেবো। আর একজন চাইলেও তো তা সম্ভব হবে না। সকলের সম্মেলিত প্রচেষ্টায়ই তো একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরী করা সম্ভব। দেশটি আপনার আমার সকলের তাই দেশের স্বার্থে দশের স্বার্থে সর্বোপরি আপনার স্বার্থে আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে রাজনীতির এমন নোংরা অবস্থা থেকে মুক্ত করতে।