বাংলাদেশে চলমান এই অবস্থার শেষ পরিণতি কী?

Published : 5 July 2016, 02:38 PM
Updated : 5 July 2016, 02:38 PM

বাংলাদেশ যে বর্তমানে কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে তাতে কোন নিঃসন্দেহ নেই। এই পরিস্থিতি হওয়ার জন্য কে দায়ী কারা দায়ী আমি সে দিকে যাবো না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে চলমান এই অবস্থার শেষ পরিণতি কী?

আজ আমি আপনাদের সামনে একটি ছোট তথ্য তুলে ধরবো হয়ত অনেকেরই জানা নয়তো জানা নেই। বিষয়টি জানলে আপনারাও খুব সহজেই বুঝতে পারবেন শকুনদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কতটা হুমকির সম্মুখীন। গুপ্তচরবৃত্তি বলতে আমরা সাধারণত একটি দেশে কি পরিমান অস্ত্র সস্ত্র আছে, সে দেশের গোপন তথ্য চুরি করা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার খবর নেয়া ইত্যাদি এগুলোকেই বুঝে থাকি। কিন্তু এই ধরণের গুপ্তচরবৃত্তির কিন্তু কোন বাস্তবতা নেই। আসলে গুপ্তচরবৃত্তির কিছু আর্ট আছে। আর সেই সর্বোচ্চ আর্ট হলো সাবভার্শন। এটি মূলত গুপ্তচরবৃত্তির আল্টিমেট পারপাস যা একটা গুলি ছোড়া ছাড়াই অর্জন করা যায়। সাবভার্শনে যেসকল কাজ রয়েছে তা কিন্তু বৈধ এবং এর বড় সুবিধা হলো এটি রাষ্ট্রের নিজের নাগরিকদের দিয়েই অর্জন করা যায়। কোন গুপ্তচর লাগে না। এই গুপ্তচরবৃত্তির সর্বোচ্চ আর্ট অর্থাৎ এই সাবভার্শনের চারটা স্টেজ আছে। যথা:-

১) ডিমরালাইজেশান: এই ডিমরালাইজেশান করতে কিন্তু ১৫-২০ বছর সময় লেগে যায়। হয়ত ভাবছেন কেন এত সময় লাগে? আসলে এই সময়ের একটা জেনারেশনের চিন্তাকে শেপ করা যায়, ধ্বংস করা যা, তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে। ডিমরালাইজেশানে আবার থাকে ইনফিল্ট্রেশান বা প্রোপাগান্ডা। যার মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে যে কোন দেশের ৬টি জিনিসকে আক্রমণ করা হয়।নিচে সেই ৬টি জিনিসগুলো তুলে ধরা হলো:-

ক) ধর্ম:- ধর্মীয় ভ্যালুকে ধ্বংস করা।

খ) শিক্ষা:- শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে প্রকৃত জ্ঞানকে ধ্বংস করা হয়।সাইন্স, ফিজিক্স, বিদেশি ভাষা, ক্যামিস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্সের বদলে ইতিহাস, যুদ্ধ, হোমইকনমিক্স, যৌন শিক্ষা ইত্যাদির উপর গুরুত্ব নিয়ে আসা হয়।

গ) সামাজিক জীবন:- স্বাভাবিক জীবন যাপন ধ্বংস করতে রাষ্ট্রের মধ্যে আদর্শিক বিরোধ তৈরি করা হয় এবং এমন একটা সমাজ সৃষ্টি করা হয় যেখানে আদর্শিক কারণে সমাজ আর ক্রিমিনালকে ক্রিমিনাল বলবে না।এই সব ক্রিমিনালকে কিছুলোক বা সমাজের বড় অংস শ্রদ্ধা করবে।

ঘ) ক্ষমতার বিন্যাস:- জনগনের ইচ্ছায় ক্ষমতা নিরধারনকে ধ্বংস করে। অস্ত্র এবং শক্তি দিয়ে ক্ষমতার আরোহণ ও অবরোহণের তৈরি করা হয়।আর্টিফিসিয়াল ক্ষমতা তৈরি করে অযোগ্য নেতৃত্বকে অধিষ্ঠত করা হয় যে কিনা বলে দিবে কে ভালো কে খারাপ।সমাজ নিজে থেকে ভালো খারাপ আর নির্ধারণ করতে পারবে না।

ঙ) শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক:- মালিক শ্রমিক সম্পর্কে বারগেনের বানেগশিয়াশানের জায়গা নষ্ট করে মালিক পক্ষের পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করা হয়।বারগেনের মাধ্যমে কম্প্রোমাইজের পরিবেশ নষ্ট করে মালিক শ্রমিকের সম্পর্কের মধ্যে অবিশ্বাস এবং ঘৃণা সৃষ্টি করা হয় এবং শ্রমিকদের আয় বৃদ্ধি পেলেও যেন লিভিং ওয়েজ পেতে না পারে সেইটা নিশ্চিত করা হয়।

চ) ল এন্ড অর্ডার:- মানুষের বিচার পাওয়ার কনফ্লিক্ট রেজুলেউশান হওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়। যেন মানুষ আাইন নিজের হাতে তুলে নেয়।
এই কাজগুলো করে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে ডিমরালাইজ করা হচ্ছে এই ফ্রেজের উদ্দেশ্য। এই কাজগুলো কিন্তু গুপ্তচরেরা করে না।এই কাজগুলো দেশের নাগরিকদের হাতেই সম্পন্ন করা হয়।

আমরা যদি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকাই তাহলে এই ডিমরালাইজেশানের ৬টি ধাপই কিন্তু বিদ্যমান পাবো।

এবার আসি ডিমরালাইজেশানের পরের স্টেজে।

২) ডিস্টাবাইজেশান:- ডিমরালাইজেশানের পরের স্টেজ হচ্ছে ডিস্টাবাইজেশান। এই পর্যায়ে গিয়ে দেশে আর কোন কনফ্লিট রেজুলেশান হয় না। নিজেদের মধ্যে সংঘাত বিরোধ এবং মারামারি বাদে। কেউ কোন কম্প্রোমাইজ করতে পারেনা।  এই সময় হিউমন রিলেশানকে র্যাডিকালাইজ করা হয়। শিক্ষকের সাথে ছাত্রের সম্পর্ক, মালিকের সাথে শ্রমিকের সম্পর্ক, যাত্রীর সাথে পরিবহন শ্রমিকের সম্পর্ক এক কথায় সকল লেভেলে একজন আরেক জনকে ঘৃণা করবে।

এই সময় মিলিটারাইজেশনও হবে।এমনকি নাগরিকদের মধ্যেও মিলিটারাইজেশান হবে। সামান্য ইস্যুতে একজন আরেক জনকে শুট করবে। মিডিয়াকে নাগরিক তার প্রতিপক্ষ মনে করবে।
নাগরিকদের অধিকারের বদলে অপ্রয়োজনীয় আদর্শিক ইস্যুকে রাষ্ট্রের প্রধান ইস্যুতে পরিণত হবে যেগুলো নিয়ে নাগরিকগন নিজেদের মধ্যে মারামারি করবে।

এই সময় বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল এন্টি ক্ষমতা দাবি করবে এবং রাষ্ট্র তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে ক্ষমতার হালুয়া রুটির ভাগ দেবে। যার লোভ তারাও চুপ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ কিন্তু এমন সময়ই পার করছে। হয়ত আমরা তেমনটি ভাবছিও না।

৩) ক্রাইসিস থার্ড স্টেজ:- এই স্টেজে এসে জনগন এখন সমাধান খুঁজবে। একজন নেতা খুঁজবে যে রাষ্ট্রের এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবে।এই নেতাকে অপরিসীম ক্ষমতা দেয়া হবে। নইলে রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পরার বা সিভিল ওয়ারের ভয় থাকবে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনগনের মাঝে এমন নেতা খুঁজার প্রবণতা বেশ লক্ষণীয়।

৪) নরমাশাইজেশান:- এই নেতা হবেন রাষ্ট্রের নেতা। এই নেতা কঠোর ভাবে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবে। তিনি স্টাবিলিটির নাম দিয়ে সবকিছু নিজস্ব বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করবে। তার কোন কিছুর বিরোধিতা করার সুযোগ থাকবে না।

এই সময় আর কোন স্ট্রইক হবে না।সবাই একটা ফ্রিডমের ভাবের মধ্যে থাকবে কিন্তু তার আর স্বাধীনতা থাকবে না। সবকিছু ভেঙ্গে পরলেও সবাই নীরব থাকবে। সবাই একটা ডিজফানশনাল জীবনযাপন করবে। কিন্তু সেটাকেই সবাই নরমাল ভাববে। এই হলো গুপ্তচরবৃত্তির সর্বোচ্চ আর্ট সাবভারশানের স্বরূপ।

এখন প্রশ্ন হলো এই সাবভারশান কে এবং কিভাবে করে থাকে?

কোন রাষ্ট্রে যখন ভিন্ন কোন রাষ্ট্র প্রভাব বিস্তার করে তখন তারাই সে দেশের নাগরিকদের মাঝে এই সাবভারশান সৃষ্টি করতে থাকে। কেননা সাবভারশান সৃষ্টি করার ফলে ঐ দেশে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের নামে সাহায্যের কথা বলে ঐ দেশ দখল করার মত কাজও করা সম্ভব। তাই বড় বড় রাষ্ট্রগুলো ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলোর মাঝে এই সাবভারশান সৃষ্টি করে কোন যুদ্ধ কিংবা গুলি ছুড়া ছাড়াই একটি দেশ দখল করে নিতে পারবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষােপটে এই সাবভারশান সিস্টেমটি হয়ত ভারত কিংবা আমেরিকা অনুসরণ করেছে।

যে কারণে এই দেশ দুটি যেকোন ইস্যুতে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে চায়। বিশেষ করে জঙ্গি তৎপরতা রোধে এরা বাংলাদেশকে সেনা সদস্য পাঠিয়ে সাহায্য করতে চায়। এটি কি আধৌ সাহায্য করতে চাওয়া নাকি সেনা পাঠিয়ে বাংলাদেশকে দখলের পায়তার।

শকুনদের নজর পড়েছে আমার সোনার বাংলারর উপর তাই সবার কাছে অনুরোধ সাবধানে থাকু, ঐক্যবদ্ধ থাকুন। মনে রাখবেন এই দেশটা আপনার আমার আমাদের। আমাদেরকেই এর রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। হাতের আঙ্গুলগুলো যখন একত্রে করে মুষ্টি বদ্ধ করেন তখন কিন্তু তাতে জোড় থাকে বেশি এবং কোন ফাঁক ফোকড়ও থাকে না। কিন্তু আঙ্গুলগুলো বিচ্ছিন্ন হলেই কিন্তু বিপদ। ফাঁক-ফোঁকড় তৈরি হয়, জোড়ও কমে যায় আর তখনই প্রতিপক্ষ মাথা চাড়া দেয়ার সুযোগ পায়। তাই দেশবাসীরর কাছে অনুরোধ যে কোন পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। এক সাথে অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা কোন শকুনের হাতে বিলিন হতে দেবো না।