যে ধর্মের অনুসারিকে এখন পৃথিবী চায়

সুষুপ্ত পাঠক
Published : 21 Jan 2012, 08:19 AM
Updated : 21 Jan 2012, 08:19 AM

ধার্মান্ধ ও ধর্মভীরু- এ শব্দ দুটিতে আদতে কোন পার্থক্য আছে কি? ধার্মান্ধ মানে হচ্ছে যিনি বা যে ব্যক্তি ধর্মের ব্যাপারে অন্ধ। অর্থ্যাৎ, কোন প্রকার যুক্তির ধার যিনি ধারেন না। ধর্মে যা যা বলা আছে সব ব্যাপারে তিনি একমত। এখানে যুক্তি বা চিন্তার কোন স্বাধীনতা তার নেই।

তাহলে ধর্মভীরু শব্দটার অর্থ কি হবে? ধর্মভীরু শব্দটার মানে হচ্ছে যিনি বা যে ব্যক্তি ধর্মের ব্যাপারে ভীরু। ধর্মের আদেশ-নিষেধ অমান্য করতে যিনি ভীত। কাজেই একজন ধর্মভীরু ব্যক্তি ধর্মের আদেশ-নিষেধ কোন রকম প্রশ্নব্যতিত যুক্তিহীনভাবে মেনে নিয়ে পালন করেত উদ্বেগী হন এবং একই কারণে ভীত হন পালনে অপারগ হলে। তাহলে দেখতে পারছি, ধর্মান্ধ ও ধর্মভীরু ব্যক্তি আসলে একজনই। কারণ আপনাকে আগে ধর্মান্ধ হতে হবে তারপরই আপনি ধর্মভীরু। অভিধানে অবশ্য দেখলাম ধর্মান্ধের অর্থ হিসেবে লেখা আছে- যিনি নিজ ধর্ম সম্বন্ধে অন্ধভাবে বিশ্বাসী ও অন্যের ধর্মের ব্যাপারে বিদ্বেষী। আর ধর্মভীরুতার অর্থ করা হয়েছে- যিনি ধর্মের ব্যাপারে ভীরু। ধর্মের কর্মকান্ড অগ্রাহ্য করতে যিনি শান্তির ভয় বিশ্বাস করেন। অভিধানের অর্থগুলো সম্ভবত কখনো কখনো সামাজিক অভিজ্ঞতার আলোকেও নির্ধারণ হয়ে থাকে। সামাজে যে সব মানুষ নিজ ধর্ম সম্বন্ধে উগ্র ও চরমপন্থি এবং অন্যের ধর্ম বিষয়ে বিদ্বেষমূলক মনোভাব সম্পন্ন তাদেরকে ধর্মান্ধ বলে চিহৃত করা হয়। আর মূলত নিরহ ধার্মিককে ধর্মভীরু বলে অভিহত করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা জানি ধর্ম একটি বিশ্বাস মাত্র। যুক্তি দিয়ে একে পাওয়া যাবে না। যুক্তি দিয়ে ঈশ্বরকে প্রমাণ করা যাবে না। তাই সব ধর্মেই ঈশ্বর স্বয়ং বলছেন, আমাকে বিশ্বাস করো! তাহলে কে এই ঈশ্বর? যিনি সব কিছুকে সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেনি! যিনি সয়ম্ভূ। এই যে বিষয়টা, এটা যুক্তি দিয়ে পাওয়া যাবে না। তাই ঈশ্বর এবং তাঁর প্রেরিত পরুরুষরা বারবার বিশ্বাসের কথা বলেছেন। বলেছেন তাঁকে এবং তাঁর ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে। আর যারা তাঁদের কথায় বিশ্বাস এনেছে তারাও চোখ বুজে দ্বিধাহীনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করেছে কোন রকম যুক্তির ধার না ধরে। যাকে আমরা অন্ধ-বিশ্বাস বলি। আর এই বিশ্বাস থেকেই আসে ধর্ম পালনে বাধ্যবাধকতা এবং না পালেন ভয় বা ভীতি। অন্ধভাবে বিশ্বাস থেকেই সে বিশ্বাস করতে পারে ধর্ম পালনে অমনোযোগী বা অগ্রাহ্য করলে তার শাস্তি হবে। এই শাস্তির ভয়েই সে ভীত। আর এই বিশ্বাস আসে অন্ধত্ব থেকেই। তার মানে হলো, একজন ধার্মিক হচ্ছে ধর্মান্ধ ও ধর্মভীরুর সংমিশ্রণ। এই পযর্ন্ত সব ঠিক আছে। কিন্তু এখন দেখার বিষয় হচ্ছে পৃথিবীর সব ধর্মগুলির দৃষ্টিভঙ্গি অন্যের ধর্ম ও বিশ্বাস নিয়ে কতটা নেতিবাচক এবং তা একজন ধার্মিককে কতটা প্রভাবিত করেত পারে।

দেখা গেছে, ধর্মগুলির দৃষ্টিভঙ্গি অন্য ধর্মের অনুসারীদেরকে রীতিমত মানুষ্য পদমর্যাদা দিতেও অস্বীকার করছে। জায়গায় জায়গায় বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে বিধর্মীদেরকে নিয়ে। এবং বংশ পরমপরায় অভিশপ্ত বলেও উল্লেখিত করা হয়েছে কোথাও কোথাও। আমাকে সেদিন একজন ধার্মিক বললেন, বিধর্মিকে দোয়া করা যাবে না। সালাম দেয়া যাবে না। (সালামের অর্থ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। যদিও তাদের নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা স্বীকার করা হয়েছে। তারপরই তিনি যেটা বললেন সেটা মারাক্তক। তিনি বললেন, বিধর্মিরা পায়খানা সমতুল্য! ( কি ভয়ংকর কথা!) এতোটা ঘর্ণা লুকানো ছিল ধর্মের অভ্যন্তরে আমার তা জানা ছিল না। বিশ্ব ভ্রাতৃত্বেবাধ সুদূর পরাহত এরকম ধর্মবোধে। যিনি বা যারা এইরকম বক্তব্য বিশ্বাস দ্বারা গ্রহণ করেছেন তাকে বা তাদেরকে এর থেকে বের করে আনা সহজ নয়। পৃথিবী এমনিতে নানা রকম জাতীয়তাবাদী, বর্ণবাদী ভাগে ভাগ হয়ে অশান্তি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। তার মধ্যে সম্ভবত ধর্মীয় বিভক্তি সবচাইতে মারাক্তক। এটা এখন অনুধাবন করার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। যারা এতোকাল ধর্মান্ধ আর ধর্মভীরু দুটো আলাদা ও বিপরীত বলে প্রচার করে আসছেন তারা অনুধাবন করুন শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকা যাচ্ছে না। সিদ্ধান্ত নিন, ঘুণা-বিদ্বেষময় পৃথিবী নাকি ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসাময় পৃথিবী চাই। রবীন্দ্রনাথের যেমন জীবনদেবতা,লালনের তেমনি মনের মানুষ- সেরকম ঈশ্বর ভক্তি ও প্রচারের সময় এখন পৃথিবী সবচাইতে বেশী অনুভব করছে। তেমন ধর্মের প্রচার শীঘ্রই ও সর্বজনিন।