অপরাজনীতির অভঙ্গুর চক্র

প্লানার সুজন
Published : 25 Sept 2012, 07:55 AM
Updated : 25 Sept 2012, 07:55 AM

শুরুই করলাম কিছু ঋণাত্মক উপসর্গযোগে, অপ ও অ। এখানে অপরাজনীতি বলতে কু-রাজনীতি বা ধ্বংসাত্মক রাজনীতি কে বুঝিয়েছি। অনেকে ভাবছেন এটা আবার বুঝিয়ে বলার কি হল? না, আছে। কিছু কিছু লোক কিছু পড়ার শুরুতেই কয়েকটি লাইন পড়েই মন্তব্য করতে শুরু করে দেন। তাদের জন্যই বলা। ফলে যারা সুরাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তাদের কে কটাক্ষ করে এখানে কিছু বলা হয়নি। এতে করে যারা সুরাজনিতির সাথে জড়িত তারা এটা মাথায় নিবেন না। আমি এখানে কটাক্ষ করছি যারা অপরাজনীতি নামক ধ্বংসাত্মক ও ক্ষতিকারক রাজনীতির সাথে জড়িত তাদেরকে। তারা যদি দুঃখ পেয়ে থাকেন তবে আমি সার্থক। আর শুরুতে যে দ্বিতীয় উপসর্গ রয়েছে অ, সেটাও এই দুষ্টু রাজনীতির চক্রের অভঙ্গুরতা বুঝাতে ব্যবহার করেছি। না, এখানে আমি কোন জানা-পরিচিত রাজনৈতিক দলের কথা বলতে চাচ্ছিনা। এখানে শুধু একটি গল্প বলবো। তবে চলুন মূল গল্পতেই যাই।

ইচ্ছামতি নামে এক দেশ ছিল। দেশের নাম ইচ্ছামতি হওয়ার কারণ, সেখানে যার যা ইচ্ছা তাই করতো। যাকে ইচ্ছা হল খুন করলো, আধহাত কাজে একহাত ঘুষ নিতো, মানুষ গড়ার শিক্ষা না দিয়ে শয়তান গড়ার শিক্ষা দিত, গলায় ছুরি ধরে মুখে মিষ্টি কথা বলত, কেউ কথা না শুনলে সে গুম হয়ে যেত। এরূপ ইচ্ছাস্বাধীন দেশ চলতে লাগল। যেন একটা পারফেক্ট মগের মুল্লুক। তাদের ঠেকানোর মতো কেউ ছিলোনা। কিছু সৎচিন্তার লোক থাকলেও বিভিন্ন ভয়ভীতি থাকার দরুন তারা কোন প্রতিবাদ করতো না। আর ছিল কিছু ইগোবান মানুষ, যারা এগুলোর বিরুদ্ধে তো কিছু করতোই না পিছে দাড়িয়ে শুধু বড় বড় বুলি ঝাড়ত। তারা এ রাজনীতিকে বলত ন্যাস্টিক পলিটিক্স, আমি বা আমরা ভোট না দিলে কিছুই আশা যায় না, ভোটের দিন মানে ঘুমানোর ছুটি, সব বেটায় চোর বা দেশটা চোরে চোরে ভরে গেছে, একদিন হরতাল ডাক দিলে সামনে বলবে জঘন্য রাজনীতির আবির্ভাব-এছাড়া কি কোন উপায় ছিল না? আর পিছে, ওহ!কালতো ছুটি আর একদিন হইলে ভাল হয়। এরকম আর অনেক কিছুই এ সব মেরুদণ্ডহীন লোকেরা বলতো। কিন্তু সংস্কারের নামে খোঁজ নেই। বলতেই হয় অদ্ভুত সেলুকাস। কিন্তু না ছিল ওরা দশ জন। সে কথাতেই আসি।

ওরা দশজন জ্ঞান-বুদ্ধিতে ছিল অতুলনীয়, শিক্ষিত, সৎ, নিষ্ঠাবান এরূপ যে সকল গুন থাকলে যারা দেশ পরিচালনা করতে পারবে তার সব গুণী এদের মাঝে ছিল। তারা ইচ্ছামতি দেশকে ও দেশের রাজনীতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার নিমিত্তে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দেশের মানুষকে আবার সুরাজনীতির মাঝে আনে। দেশের মানুষ ও তাদের উপর ভরসা এনে তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে তাদের হাতে দেশ পরিচালনার ভার তুলে দেয়। তাদের দশজন দেশ পরিচালনার কাজ হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিহীন এক পরিষদ গঠন করে। তারা দশজন পরিষদের প্রধান হয়ে সৎ নির্ভীক লোকের সহযোগে দেশ পরিচলনায় হাত দেয়। যে স্বরাষ্ট্র পরিচালনায় হাত নেয়, সে প্রথমে পূর্বের অন্যায়ের বিচারে না যেয়ে সংস্কারে হাত দেয়। যেমন ছোট পদের পুলিশদের দেয় বড় সন্ত্রাসী ধরার ভার, আর বড় পদের পুলিশদের দেয় ছোট চোর ধরার ভার। ফলে ছোট পদের পুলিশ বড় সন্ত্রাসী ধরে নাম কিনতে চায় আর বড় পুলিশ চোর ধরে ছোটদের সাথে টিকে থাকার প্রতিযোগিতা করে। বাণিজ্যে রক্ষায় যে দায়িত্ব পায় সে, নির্দেশ জারি করে কোন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবসামগ্রী যদি গুদাম জাত হয় তবে তাকে গুদামে যে পরিমান মাল থাকবে তার দশ শতাংশ হারে দেশের কোষাগারে ট্যাক্স দিতে হবে। আর এতেই বাজারে পণ্যর আমদানী স্বাভাবিক হয়ে যায়। যোগাযোগের দায়িত্বে যে ছিল সে, ট্যাক্স জারী করে মূল নগরীতে আগত যানবহনের উপর, পাড়কিং ট্যাক্স, সিট ব্যতিরেকে ৫০ ভাগ খালী যানবহন চলার ট্যাক্স, পরিকল্পনাকে পাশে রেখে হাত দেয় পলিসি গড়ার কাজে। আর এতেই কমে যায় ব্যস্ত রাস্তার যানজট। অর্থের দায়িত্বে থাকা মানুষটির যেন মূল দায়িত্বই হল দেশের প্রতিটি মানুষের, যার কাছে যে পরিমাণ ট্যাক্স প্রাপ্য তা সংগ্রহ করা। আর একটি মূল কাজ ছিল তার ঋণখেলাপি চিহ্নিত করে সুদ ব্যতিরেকে খেলাপি ঋণ সংগ্রহের মাধ্যমে তার কাছ থেকে ঋণের মূল টাকা উশুল করা। এতেকরে সে যদি ফকির বা দেউলিয়া যায়, তবে তাতেও তার কিছু করার রইল না। আইন এর দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রধান কাজ হল ব্রিটিশ নিয়ম বাছবিচার ব্যতিত বাদ দিয়ে আইনজ্ঞ ও দেশের আপামর জনতর বাস্তব ঘটনাকে পুঁজি করে আইন তৈরি করা।বিচারের দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে সকল বিচারকে ৩ মাস সময়ের মধ্যে শেষ ও শাস্তি প্রদান করা। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি অর্থনৈতিক খাত থেকে সংগ্রহীত ট্যাক্স নিয়ে আপামর জনতার চিকিৎসা নিশ্চিত করনে প্রথম অগ্রাধিকার দেয়। বৈদেশিক চিকিৎসার উপর কর ধার্য করে। এলিট হাসপাতাল গুলোতে জোর পূর্বক ৫০ ভাগ দরিদ্রের জন্য ফ্রি চিকিৎসা ও ঔষধের ব্যবস্থা করে। যে শিক্ষা ক্ষেত্রের দায়িত্ব পেল সে জিপিএ বাড়ানোর কথা ভুলে চেষ্টা করলো মার্ক না জ্ঞান অর্জন নিশ্চিত করতে। এতে করে অধিক জিপিও পেয়েও যেন কোন অথর্ব শিক্ষার্থী না জন্মায়। সে যেন উন্নত দেশের শিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। এতে করে জিপিএ কমবে ঠিকি কিন্তু জ্ঞানী-বিজ্ঞানী নতুন করে জন্মাবে। সংসদের পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্তের মূল কাজই হল সংসদের প্রধান ও বিরোধীদের সদস্যার সংখ্যাগরিষ্ঠতা রোধের পঠভূমি রচনা করা। ফলে প্রত্যেক বিল আনাতে থাকলো জবাবদিহিতা, গ্রহণযোগ্যতা, সমমত প্রদর্শনের সুযোগ। ফলে যেকোনো বিল আনলেই আর পাশ হতো না। পররাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়ার পর মূল দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ালো আভ্যান্তরিন বাণিজ্যকে বৈদেশিকরন ও অন্যান্য দেশে শুল্কহ্রাসে পণ্য রফতানি করা। পররাষ্ট্রের কোন গা ভাসানোর কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা, কম চুক্তি করা, কম ঋণ গ্রহণ করা আর সর্বোপরি কম কথা বলা। এটিই ছিল তার মূল কাজ। অবকাঠামো যার হাতে ছিল সে যত্রতত্র নদী বা খালে বাঁধ কিংবা ব্রিজ করা থেকে বিরত হল। পরিকল্পনা নয় পলিসি নির্ভর অবকাঠামো গড়ার কাজে হাত দিল। যাতায়াত ব্যবস্থা শুধু সড়কে বা রেলে সীমাবদ্ধ না রেখে নৌ ও সমুদ্র পথ কে গতিশীল ও নিরাপদ করলো। এভাবে তারা এধরণের আরো অনেক গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ব্যবস্থাকে সুন্দর ও সচ্ছল করতে সক্ষম হল। দেশ আর ইচ্ছামতি দেশ থাকলো না। আভ্যান্তরিন

কিন্তু কথায় আছে না সরষের মধ্যে ভূত থাকে। ঠিক সেরকমের ভূতের উদয় হল। প্রত্যেকে নিষ্ঠার সাথে প্রত্যেকের কাজ সফলতার সাথে করায় দেশ ঠিকই এগিয়ে চলল কিন্তু তাদের মধ্যে গর্ববোধ জেগে উঠলো। ঐ যে প্রধানমন্ত্রীর পদটি ফাঁকা ছিল, সেটি দখল অর্থাৎ গদি দখল করার প্রচেষ্টায় নিয়ত হল। আবার শুরু হল গোলযোগ। একের কর্মকে খারাপ করার লক্ষ্যে অন্যজন সেখানে কুমন্ত্রনা দিল। শুরু হল আবার অপ রাজনীতির চক্র। কারণ তাদের একটায় ভুল ছিল তারা চক্রটিকে কখন ভাঙতে হবে তা জানতো না। তারা জানতো না লিডারশীপ গঠন করার মাধ্যমে কিভাবে অন্যর হাতে অর্থাৎ যোগ্য লোক তৈরি করে তার হাতে দায়িত্ব সপে নতুন চক্র তৈরি করতে হবে। এতে করে চক্রটি অপরাজনীতি-সংস্কার-সুরাজনীতি-চক্রান্ত-কুমন্ত্রণা-অপরাজনীতি না হয়ে হতো অপরাজনীতি-সংস্কার-নব অধ্যায়-লিডারশীপ পরিবর্তন-সংস্কার-নব অধ্যায়-সুরাজনীতি——চলমান।এটি কখনই আর পুর্ন চক্র হতনা। সরষের

এখানে গল্পটা শুধুই গল্প। কিন্তু চক্রটা কিন্তু শুধু চক্র না। আমাদের এসময়ে অপরাজনীতি থেকে সুরাজনীতি গঠনের চক্রে প্রবেশ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সব চোর, সব বাটপার, সব ঘুষখোর এসব বলে ভোট দেয়া, প্রার্থী নির্বাচন করা থেকে বিরত হলে চলবে না। চলবে না কোন ইগো অথবা বাজে সেন্টিমেন্ট। রাজনীতিকে ন্যাস্টিক বলা থেকে বিরত হওয়া উচিৎ। আমাদের প্রত্যেকে প্রতাক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়াতে হবে এই রাজনীতিতে। ভাঙ্গতে হবে এই অভঙ্গুর চক্র। আবার আমার মতো শুধু লেকচার দিলেই চলবে না। কাছে না যেতে পারেন দূরে দাড়িয়ে রাজনীতি করুণ। কিছুই হবে না বা হয় না। এটা কখনো বিশ্বাসযোগ্য নয়। অবশ্য সময়ে সব কিছু হবে। আর সে সময় আপনার ও আমাদের দিকে চেয়ে আছে। হ্যাঁ, এখানে অনেক প্রশ্ন আছে। দয়া করে প্রশ্নগুলো নিজেদের করুণ, সাথে উত্তর খুঁজতে ভুল করবেন না যেন। কারণ উত্তর আপনাকেই দিতে হবে।