ইতিহাসের দশটি নির্মম গণহত্যা

সৈয়দ আশরাফ মহি-উদ্-দ্বীন
Published : 31 May 2016, 07:52 PM
Updated : 31 May 2016, 07:52 PM

"ওরা আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে হিরোশিমায়। আমার মাকে খুন করেছে জেরুজালেমের রাস্তায়। আমার বোনটা এক সাদা কুত্তার বাড়িতে বাঁদি ছিলো। তার প্রভু তাকে ধর্ষণ করে মেরেছে আফ্রিকাতে। আমার বাবাকে হত্যা করে মেরেছে ভিয়েতনামে। আর আমার ভাই, তাকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মেরেছে ওরা। কারণ সে মানুষকে ভীষণ ভালোবাসতো।" – জহির রায়হান

জহির রায়হানের বিখ্যাত উক্তিটি দিয়েই আজকের লেখা শুরু করি। মানব সভত্যার ইতিহাসে অনেক উদ্ভাবন, অনেক উন্নতি এবং অনেক ভালো কাজের পাশাপাশি সভ্যতাকে ধ্বংশ করার মত যে সকল কর্মকান্ড ঘটেছে তার মধ্যে গণহত্যা একটি বিশাল জায়গা করে নিয়েছে। মানুষ হয়ে মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা এবং ধর্ষণ এর মত কান্ড ঘটিয়েছে কিছু মানুষরুপী দানব। এই হত্যাকান্ড যতটা না, কোনো যৌক্তিক কারণে তার চেয়ে বেশী ক্ষমতা দখল এবং লোভের কারণে।

এইসব গণহত্যা শুধু যে রাজনৈতিক কারণে সংগঠিত হয়েছে তা নয়, বরং ব্যক্তিস্বার্থ, লোভ, ক্ষমতার বহি:প্রকাশ এবং মানসিক বিকৃতিও এর অন্যতম কারণ। লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, এই মানসিক ভাবে বিকৃত মানুষগুলো অন্য দেশেরই নয় নিজের দেশের, নিজের সম্প্রদায়ের লোকগুলোকেও হত্যা করেছে নির্মম ভাবে। কখনো জাতীয়তার, কখনো সম্প্রদায়ের অথবা কখনো ধর্মের দোহায় দিয়ে সংগঠিত হয়েছে একটার পর একটা হত্যাকান্ড।

আজকের লেখায় ইতিহাসের দশটি জঘন্য গণহত্যার কাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

১. আর্মেনীয় গণহত্যা (১৯১৫-১৯২৩):

তুরস্কের অটোম্যান শাসনামলে (১৮২১ থেকে ১৯২২) তত্কালীন আর্মি অফিসার এনভার পাশার নেতৃত্বে বিংশ শতাব্দীর সর্ব বৃহৎ গণহত্যা সংগঠিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এবং তত্পরবর্তী সময়ে তুরস্ক শুধু ১.৮ মিলিয়নের অধিক আর্মেনীয় এবং অ-তুর্কীদের সরাসরি হত্যা এবং বিতাড়িতই করেনি, এছাড়াও হাজার হাজার আর্মেনীয় এবং অ-তুর্কিকে খাদ্যাভাবে মৃত্য বরণ করতে বাধ্য করে। তুরস্ক যখন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত তখন সর্ব প্রথম কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের সাথে বিশ্বের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যও তুরস্ককে অভিযুক্ত করা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই আধুনিক তুর্কিরা এটাকে গণহত্যা বলে স্বীকার করে না বরং তারা বলে যে, এটা ছিল শুধুই সেই সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি গণবিতাড়ন প্রক্রিয়া যারা রাশিয়ার সাথে যুক্ত ছিল।

২. সোভিয়েত রাশিয়ার স্ট্যালিন যুগ (১৯২৯-১৯৫৩):

জোসেফ স্ত্যালিনকে ধরা হয় বিংশ শতাব্দীর কুখ্যাত গনহত্যাকারী হিসেবে, যে তালিকায় হিটলার এবং মাও সে-তুং ও আছেন।  স্ত্যালীন সক্ষম হয়েছিলেন নিজের জাতিকে টুকরো টুকরো করতে। এই অপকর্ম তিনি করেছিলেন কারা অভ্যন্তরে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত এক্সটারমিনেশন ক্যাম্পের  মাধ্যমে।  স্ত্যালীনের শাসনামলে ঠিক কতজনকে হত্যা করা হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয় প্রায় কুড়ি মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেন এই গণহত্যাকারী। এই কুড়ি মিলিয়নের মধ্যে দুই মিলিয়ন হলো দুর্ভিক্ষ পিড়িত ইউক্রেনিয়ান কৃষক। স্ত্যালীন ১৯৩৭ সালে তাঁর কুখ্যাত `০০৪৪৭' অধ্যাদেশ দ্বারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছিলেন সামাজিক ভাবে ক্ষতিকর মানুষ আখ্যা দিয়ে।  এছাড়াও তিনি রাশিয়ান আর্মির সেনা সদস্য এবং বুদ্ধিজীবিদের পাঠিয়েছিলেন নির্বাসনে এবং হত্যা করেছিলেন নির্বিচারে। স্ত্যালীন এর কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরণ করেছিলেন এবং কোটি কোটি মানুষ দুর্ভোগ পোহান।  অবশেষে ১৯৫৩ সালে স্ত্যালীনের মৃত্যুতে রাশিয়ার ভাগ্য পরিবর্তন হয়।  অবসান হয় চলমান গণহত্যার।

৩. দ্য হলোকস্ট (১৯৩৯-১৯৪৫):

হলোকস্ট যদিও জঘন্য গহত্যার তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে তথাপি এই গণহত্যা এখনো সবচেয়ে নিন্দিত এবং খুবই সতর্কতার সাথে এই গণহত্যার তথ্য লেখা হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী কর্তৃক ইহুদিদের ইউরোপ মহাদেশে অবাঞ্চিত ঘোষণার প্রেক্ষিতে প্রায় ১১ মিলিয়ন মৃত্য সংগঠিত হয়েছিল যার অর্ধেকই ছিল ইহুদি। এই সংখ্যা হিটলার যখন বার্লিনে নিজের বাংকারে নিজেকে গুলিবিদ্ধ করেন সেই সময়কার। এই গণহত্যা বিভিন্ন উপায়ে সম্পন্ন করা হয়, যার মধ্যে সরাসরি হত্যা, কারাগারে বন্দী অবস্থায় হত্যা, অনাহারে হত্যা, অতিরিক্ত কষ্টসাধ্য কাজের বোঝা চাপিয়ে হত্যা এবং হিটলারের কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা। আশ্চর্যজনক সত্য হলো জার্মানির ইতিহাসে এইরকম জঘন্য নিষ্ঠুরতা কখনোই ছিল না। হিটলারের হাতে জার্মানির পতনের পূর্বে সত্যিকার অর্থে জার্মানিকে বিবেচনা করা হত সবচেয়ে শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান সমাজ হিসাবে।

৪. হিরোশিমা ও নাগাসাকি গণহত্যা (১৯৪৫):

১৯৪৫ সালের ৬ এবং ৯ আগস্ট পৃথিবীর ইতিহাসে সবচে দুঃখজনক দুটি দিন যখন জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহর দুটি সম্পূর্ণ রূপে ধংশ প্রাপ্ত হয়। বিংশ শতাব্দিতে প্রচলিত ও গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে গণহত্যার মত জঘন্য অপরাধ যেন অতি সাধারণ ঘটনায় রূপ নিয়েছে। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে হিরোশিমা শহরে ফেলা হয় প্রথম আনবিক বোমা। এই বিস্ফোরণ কেড়ে নেয় প্রায় দুই লক্ষ প্রান এবং অনেকের কোনো হদিসই পাওয়া যায়নি।

প্রথম বিস্ফোরণের ঠিক দুই দিন পরেই অর্থাৎ ৯ আগস্ট সকাল ১০ টা ৫৮ মিনিটে নাগাসাকির একটি শিপইয়ার্ড এর উপর ফেলা হয় ২০ কিলোটন ক্ষমতা সম্পন্ন বোমা যেদিন প্রায় ৭০ হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। ভৌগলিক কারণে দ্বিতীয় আনবিক বোমাটি হিরোশিমার চাইতে নাগাসাকিতে কম ক্ষতি সাধন করে।

৫. ভারত ভাগ (১৯৪৭):

এই গল্পের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হচ্ছে কোনো রাজনৈতিক কারণ ব্যতিত শুধুমাত্র স্বপ্রণোদিত ভাবে ধর্মীয় বিভেদের কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছিল। ব্রিটিশ রাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ কলোনি থেকে ভারত ভাগের পদক্ষেপের ফলে এই গণহত্যা সংগঠিত হয়। অবশষে হিন্দু এবং মুসলমান ধর্ম ভিত্তিতে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের। নতুন ভ্রান্ত সীমানা নির্ধারণে অনেক মুসলমান, হিন্দু এবং শিখ ধর্মাবলম্বীরা দেখতে পেল যে তাদের বর্তমান বাসস্থান সঠিক স্থানে অবস্থিত নয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের পৈত্রিক বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ হলো এবং মাইল এর পর মাইল পায়ে হেঁটে তাদের নতুন বাসস্থানে গমন করতে বাধ্য হলো। অভিযানের সময় ধর্মীয় দলগুলোর মাঝে বিস্তার করলো সহিংসতা ফলশ্রুতিতে তা রূপ নিল গণহত্যায়, নিহত হলো এক মিলিয়নের মত মানুষ আর কপর্দকহীন ভাবে স্থানান্তরিত হলো অগনিত।

৬. চীনের গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লব (১৯৪৯-১৯৭৬):

চিনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসে ১৯৪৯ সালে এবং তারপর পরবর্তী দশক গুলোতে কমিউনিস্ট চায়নাতে প্রায় ৪৫ থেকে ৭০ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। বিভিন্ন ঘটনায় এই মৃত্যু সংগঠিত হয়েছিল।  একটি ঘটনা ছিল, যখন কমিউনিস্ট ফোর্স, চ্যাং কি-শেক এর ন্যাশনাল আর্মিকে পরাস্ত করে। বস্তুত বেশির ভাগ হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় দুটি ধারায়: একটি হচ্ছে মাও সে তুং এর গ্রেট লীপ ফরওয়ার্ড কর্মকান্ড আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে  ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়। দ্য গ্রেট লীপ ফরওয়ার্ড ছিল প্রথম ধাক্কা যখন চীনের তত্কালীন নেতা মাও সে তুং কৃষির আধুনিকায়ন এবং সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ শুরু করেন। যার ফলে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত্য দুর্ভিক্ষ্য দেখা দেয়।  অনেক কৃষক এবং ভূমি মালিক অনাহারে মৃত্যু বরণ করেন যা কিনা পরবর্তিতে গণহত্যার আকার ধারণ করে, কারণ মাও সে তুং এই প্রক্রিয়াকে সচল রাখেন এত বড় সর্বনাশ সত্বেও। অপরদিকে সাংস্কৃতিক বিপ্লব সরকার বিরোধী কর্মকান্ডকে তরান্বিত করতে বিশেষ ভুমিকা রাখে যা কিনা লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে আর অসংখ্য মানুষ বন্দিত্ব গ্রহণ করে।

৭. বাংলাদেশ বা তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান গণহত্যা (মার্চ – ডিসেম্বর ১৯৭১):

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা কার্যক্রম অপারেশন সার্চলাইটের অধীনে মার্চ, ১৯৭১ থেকে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হয়েছিল। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালীদের স্বাধীকারের দাবীকে চিরতরে নির্মূল করতে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয়মাসের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের সহায়তাকারী দলগুলো আনুমানিক ত্রিশ লক্ষ ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। এছাড়াও, দুই লক্ষ থেকে চার লক্ষ বাংলাদেশী মহিলাকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করে। এছাড়াও, বাঙালী ও উর্দুভাষী বিহারীরা জাতিগত সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সংঘটিত ঘটনাসমূহ গণহত্যা হিসেবে পরিচিতি পায়।

যুদ্ধকালীন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও স্থানীয় দোসররূপে পরিচিত জামাত-ই-ইসলামী শীর্ষস্থানীয় বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবীদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। যুদ্ধ শুরু হবার কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল অধ্যাপককে হত্যা করা হয়। তবে, যুদ্ধ শেষ হবার অল্প কয়েকদিন পূর্বে সর্বাধিক সংখ্যক সুনির্দিষ্ট বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা পরিচালিত হয়েছিল। অধ্যাপক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিল্পী, প্রকৌশলী ও লেখককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পাকবাহিনী ও রাজাকারেরা ঢাকায় নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। দীর্ঘ নয়মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকবাহিনী ও তার স্থানীয় সহযোগীরা সুপরিকল্পিতভাবে ৯৯১জন শিক্ষক, ১৩জন সাংবাদিক, ৪৯জন চিকিৎসক, ৪২জন আইনজীবী ও ১৬জন লেখক-প্রকৌশলীকে হত্যা করে। এমনকি ১৬ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পরও অস্ত্রসজ্জিত পাকবাহিনী কিংবা তাদের দোসর কর্তৃক হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

৮. কম্বোডিয়ার কিলিং ফিল্ডস (১৯৭৫-১৯৭৮):

১৯৭৫ সালে খেমার রুজ বাহিনী কম্বোডিয়ার সরকার উত্খাতের মাধ্যমে কমিনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা করে। খেমার রুজদের প্রথম কাজ ছিল সাবেক শাসন ব্যবস্থার সাথে যারা যুক্ত ছিল তাদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে হত্যা করা।  এই তালিকায় সাবেক সরকারের সদস্য, সেনা সদস্য, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী এমন কি সাধারণ মানুষ যারা এদের ক্ষমতা দখলকে ভালো চোখে দেখত না তারা সবাই ছিলেন। ধারণা করা হয়, স্বল্পস্থায়ী এই গণহত্যায় হতাহতের সংখ্যা দুই মিলিয়নের কম ছিলনা, যা কম্বোডিয়ার জনসংখ্যার কুড়ি ভাগ।  সৌভাগ্যক্রমে ১৯৭৯ সালে আরেকটি কমিউনিস্ট গোষ্ঠী খেমার রুজদের পতন ঘটিয়ে তাদেরকে আত্নগোপন যেতে বাধ্য করে।

৯. সার্ব কর্তৃক বসনিয়ান গণহত্যা (১৯৯২-১৯৯৫):

১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের বসনিয়া হার্জেগোভিনা সরকার যুগোস্লাভিয়া থেকে তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।  স্বাধীনতা ঘোষণার পরবর্তী কয়েক বছর বসনিয়ার সার্ব বাহিনী যুগোস্লাভিয়ার সার্ব অধ্যুষিত সেনাবাহিনীর সহায়তায় বসনিয়ার বেসামরিক বসনিয়াক মুসলিম এবং ক্রোয়েশীয় নাগরিকদের লক্ষ্য করে বর্বর হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত করে। এর ফলে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত্য এক লক্ষ মানুষ নিহত হয় যার আশি ভাগই ছিল বসনিয়ান মুসলমান। সার্বিয়ানরা শুধু হত্যা করেই খান্ত হয়নি, তাদের দ্বারা ধর্ষিত হয় অসংখ্য নারী এবং শিশু।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে নাজি বাহিনী কর্তৃক ইহুদি এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাঙ্গালী নিধনের পর এই সার্বিয়ান হত্যাযজ্ঞ ছিল সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ।

১০. রুয়ান্ডা গণহত্যা (১৯৯৪):

রুয়ান্ডার গণহত্যা কোনো রাজনৈতিক কারণে হয়নি।  বরং বৃদ্ধি পেতে থাকা উপজাতীয় বিভেদের ফলে সংগঠিত হয় এই জঘন্য গণহত্যা। এই গণহত্যার ফলশ্রুতিতে মৃত্যু বরণ করে পাঁচ লাখ থেকে এক মিলিয়ন মানুষ। সংখ্যালঘু তুসি সম্প্রদায় শতাব্দী ধরে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আরেকটি উপজাতি সম্প্রদায় হুতু জাতি গোষ্ঠিকে দমিয়ে রেখে দখল করে রেখেছিল দেশটির শাসনভার।  ১৯৬২ সালের কথা, তখন হুতু সম্প্রদায় বিদ্রোহ শুরু করে ক্ষমতাশীল তুসি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। চরম উত্তেজনা এবং বিদ্রোহ যুদ্ধে রুপান্তরিত হয়, যখন হুতু প্রেসিডেন্ট রহস্যজনক ভাবে ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। এটা ছিল হুতু সম্প্রদায় কর্তৃক একটি রক্তাক্ত প্রতিশোধ তুসিদের বিরুদ্ধে। যেহেতু হুতু নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে এই গণহত্যা সম্পাদিত হয়েছিল তাই গণহত্যার সঠিক সংখ্যা নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। গবেষকদের মতে, হুতু প্রেসিডেন্টের হত্যার প্রতিশোধ নিতে এই গণহত্যা সরাসরি রুয়ান্ডার সেনাবাহিনীর উত্সাহে এবং সরকারের পূর্ণ সমর্থনে হুতু মিলিশিয়া দ্বারা পরিচালিত হয় যা তাদেরকে এই নিন্দনীয় হত্যাকান্ডের জন্য সরাসরি দোষী সfব্যস্ত করে।

তথ্যসূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে অনুদিত ও সম্পাদিত