দিলদার বাপ আর সমঝোতার ধর্ষণ

সৈয়দ আশরাফ মহি-উদ্-দ্বীন
Published : 10 May 2017, 01:44 PM
Updated : 10 May 2017, 01:44 PM

আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে সন্তান যখন বড় কিছু হয় তো বলতে শুনি `দেখতে হবে না কোন বাপের সন্তান' আর ছেলে মেয়ে যদি উচ্ছন্নে যায় তবে এ কথা বলতে এক মিনিটও দেরি করি না যে `মা তার সন্তানকে মানুষ করতে পারেনি'। চিরাচরিত এই ধারণার ভুল প্রমান করেছেন একজন দিলদার বাপ যিনি তাঁর ধর্ষক সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে বলেছেন যা কিছু ঘটেছে তা সমঝোতার মাধ্যমেই ঘটেছে। ধন্য হে দিলদার পিতা।  আপনার মতো পিতা যদি ঘরে ঘরে জন্মাতো তবে, তবে দেশ থেকে ধর্ষণের মতো কর্মকান্ড মুছে গিয়ে সবকিছু  সমঝোতায় রূপ নিত।

সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে আপনি ভুলতে বসেছেন আমাদের হাজার বছরের সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ। সন্তানের বিবাহ বহির্ভুত যৌন সম্পর্ককে আপনি অত্যন্ত্য সচেতন ভাবে জায়েজ করে দিলেন। আপনাদের মতো তথাকথিত এলিট শ্রেণীর কাছে এটা হয়তো ব্যক্তি স্বাধীনতা কিংবা আধুনিকতা (সমঝোতার মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলা) কিন্তু ভুলে যাবেন না এই দেশে আপনাদের মতো দিলদার মানুষের সংখ্যা অতি নগন্য। আপনি চাইলেই বাঙালির সংস্কৃতি, সভ্যতা কিংবা আচরণ বদলাতে পারবেন না। আপনাদের অবস্থান আস্তাকুঁড়েই হবে।  আপনার যদি কোনো কন্যা সন্তান থাকে তবে তিন চার যুবক হোটেলে নিয়ে গিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় তবে নিশ্চয় আপনি ওই ছেলেদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিবেন না।

জনাব দিলদার, আপনার তো অনেক ক্ষমতা, অনেক টাকা আপনি কি পারেন না আপনার আদরের দুলাল এবং তার বন্ধুদের জন্য একটি হেরেম তৈরী করে দিতে? মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আপনাদের ক্রয় ক্ষমতা অপরিসীম।  দেশ-বিদেশ থেকে যেভাবে সোনা নিয়ে আসেন সেই প্যাকেজে আপনার পুত্রদের ঠাণ্ডা রাখার জন্য কিছু হুর পরীও তো আনতে পারেন।  কে আপনাদের আটকাবে? এই দেশে আপনাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো সাহস রাষ্ট্র দেখাতে পারে না সাধারণ মানুষ তো কোন ছাড়।

এই দেশে একজন কৃষক ঋণের কিস্তি খেলাপ করলে তার গরু ছাগল তুলে আনতে দেরি হয় না কিন্তু আপনাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হলেও তাদের গ্রেফতার করতে গ্রিন সিগন্যাল লাগে।  এই দেশে শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করতে হয় আর দুর্নীতিবাজ, অত্যাচারী জনপ্রতিনিধিকে দেখলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে হয়। এই দেশে দিন রাত পরিশ্রম করা একজন মধ্যবিত্তের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় না আর দুর্নীতিবাজ, কালোবাজারিদের প্রাসাদ থাকার পরও সরকারি প্লট বরাদ্দ হয়। ধন্য আমার দেশ।

আবেগের বশে বলতে ইচ্ছে হয় এই সব ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা করে কোনো লাভ নেই বরং সুবিধামতো সময়ে এদের গোপনাঙ্গ কর্তনই সঠিক পদ্ধতি। কিন্তু আইনের প্রতি এখনো শ্রদ্ধা থাকায় বলতে পারি না। পচন কেবল শুরু হয়েছে, মহামারী হওয়ার আগে আসুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে না তাকিয়ে এর প্রতিরোধ গড়ে তুলি। রাষ্ট্রকে বাধ্য করি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। হায়েনাদের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে, কাল কিন্তু আপনার আমার বোন বা মেয়েও এদের শিকার হতে পারে।

আর দিলদার বাপদের বলি, আতর মেখে সফেদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে জুম্মার নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে নিজেদের চেহারাটা একবার আয়নায় দেখে নিবেন কেন না সৃষ্টিকর্তার সাথে কোনো সমঝোতা চলে না।