চলমান রাজনীতি ও প্রবাস রাজনীতি

সৈয়দ আলী আকবার
Published : 10 May 2016, 01:16 AM
Updated : 10 May 2016, 01:16 AM

বাংলাদের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর কোন শুভচিন্তার মানুষই রাজনীতিতে ইচ্ছা পোষণ করবে না। বর্তমানে রাজনীতি একটি পারিবারিক দ্বন্দ্বের মত হয়ে উঠেছে। দুই দলের দ্বন্দ্বের কারণে রাজনীতি হারিয়ে ফেলেছে তার নিজস্ব সংস্কৃতি। একদল আরেক দলকে দোষারোপ করার মধ্য দিয়ে একে অন্যের মানহানী ও অন্যান্য যেকোন ধরণের ক্ষতি করতে সদা সচেষ্ট।

গনতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা ব্যাপক। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের প্রধান ও প্রথম লক্ষ হলো দেশ ও দেশের জনগনের উন্নতি সাধন করা। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কি চিত্র দেখতে পাই? এক দল অপর দলের দোষ ও ফাঁকফুকড় খুঁজতে এতটাই মরিয়া যে জনগনের কথা তারা বেমালুম ভুলেই যান।

আমাদের দেশের রাজনীতির নেই কোন সংস্কৃতি নেই কোন দেশের উন্নয়ন চিন্তা। দুই দল তাদের ব্যক্তিগত কুন্দল নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে দেশ নিয়ে ভাববার সময়ই তাদের নেই। দেশের ও দেশের জনগন নিয়ে ভাবনা তো দূরে থাক উল্টো তাদের ব্যক্তিগত ঝগড়ায় কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে দেশ ও দেশের জনগনের। রাজনীতি মানে হলো দেশের মানুষের সেবা করা। কিন্তু আমাদের রাজনীতি সেবার পরিবর্তে আমাদের মস্তিষ্কেই করে তুলেছে বিকলাংগ।

আমাদের দেশের রাজনীতির চিত্র হলো হানাহানী, বিদ্ধেষ, সংঘর্ষ। ক্ষমতার প্রবল লোভে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এতটাই মরিয়া যে রাজনীতির মূল ধারা থেকেই তাদের সরে গেছেন যা তারা অনুধাবনই করতে পারছেন না। আমাদের রাজনীতির অন্যতম একটি দিক হলো বিদেশে এই রাজনীতির চর্চা।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিক যাদেরকে আমরা প্রবাসী বলে জানি। এই প্রবাসীরাও বিশ্বের নানান দেশে নিজ দেশের রাজনীতির চর্চা করে থাকেন। কিন্তু যেখানে দেশেই রাজনীতি রীতিমতো হুমকির সম্মুখীন সেখানে বিদেশে কি করে দেশীয় সুস্থ রাজনীতির চিন্তা করা যায়। দেশের রাজনীতির কুপ্রভাব তখন বিদেশে বসবাসকারী প্রবাসী রাজনীতিবিদের উপরেও উপরে। যার ফলে দেশের চেয়েও বিদেশের রাজনীতি হয়ে উঠে ব্যাপক সমালোচিত ও বিশ্ব নিন্দার।

কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিদেশিরা দেশকে বিশ্ব দরবারে মেলে ধরার জন্যেই রাজনীতির চর্চা শুরু করেন। বিশ্বকে জানাতে চান নিজ দেশের রাজনৈতিক সফলতার কথা। বুঝাতে চান বিশ্বকে বাংলাদেশ একটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র।

কিন্তু দেখা যায় শেষ পর্যন্ত দেশীয় কুন্দলের জের ধরে বিদেশেও শুরু হয় দলীয় দ্বন্দ্ব ও ঘাত-প্রতিঘাত। অনেক সময় দেখা যায় যেকোন ইস্যু নিয়ে বিদেশেও রাজনৈতিক দলগুলো হাতাহাতি, অশালীন বাক্য ব্যয় সহ লজ্জাকর যেকোন পরিস্থিতির জন্ম দেন। যার ফলে বিদেশেও দেশের মানহানী হয়। দেশের সুনামের পরিবর্তে উল্টো দুর্নাম হয়। প্রবাসী রাজনীতিবিদরা নিজ দলের স্বার্থে অনেক সময় বিপক্ষ দলের নামে বদনাম করে থাকেন যা প্রকৃত অর্থে দেশের বদনাম হয়।

তাই আমি মনে করি প্রবাসে রাজনীতি বন্ধ করে। বিদেশে কি ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হচ্ছে বা বিদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ড নিজ দেশের রাজনৈতিক নেতাদেরকে বলে দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে দেশকে মুক্তি করার চেষ্টা করাই হবে প্রবাসীদের জন্য শ্রেয়।

সুতরাং আমার মনে করি বিদেশে রাজনীতি বন্ধ করে দেয়াই ভালো। এমনিতেই ব্যক্তিগত ঝগড়ায় রূপ নেয়া দুই দলের সম্পর্ক ও তাদের কর্মকান্ডে বাংলাদেশের রাজনীতি ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে বিশ্ব দরবারে। তার উপর প্রবাসী রাজনীতিবিদের এমন রাকনীতি চর্চা তা কেবল দেশকে খারাপের দিকেই ঠেলছে। তাই প্রবাসে রাজনীতির এমন কুৎসিত চর্চা বন্ধ করা হউক তাতে অন্তত দেশের দুর্নাম একটু হলেও কম হবে।

সৈয়দ আলী আকবর
নির্বাহী সম্পাদক -পারিস বার্তা প্যারিস ফ্রান্স