জিনে ধরা,ভূতে ধরা বা জিনের আছর, ভূতের আছর কথাগুলোর সাথে পরিচয় নেই এমন লোক খুব কমই আছে। ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে 'জিন' অর্থ আগুনের তৈরি অদৃশ্য দেহধারী জীববিশেষ। এছাড়া অন্যান্য মতে আরো অনেক অর্থ বোঝায়। 'ভূত' অর্থ হিন্দুমতে শিবের অনুচর, পিশাচ। এর বাংলা অর্থ অতীত, এবং বিপরীত শব্দ ভবিষ্যৎ। এ ছাড়াও অনেক অর্থে শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এর আর একটি অর্থ আছে 'কাণ্ডজ্ঞানহীন'। আমার মতে যারা কাণ্ডজ্ঞানহীন, মূর্খ তাদেরকেই জিনে-ভূতে আছর করে । জিন-ভূত বাস্তব অথবা অবাস্তব হতে পারে। তবে আমি আজ যে কাহিনীটি বর্ণনা করব সেটি বাস্তব।
কালুমামু আমার গ্রামের একজন কবিরাজ। দুই মাথা ওয়ালা মাদারবাঁশ লালসালু দিয়ে মুড়িয়ে, কালো পাঞ্জাবি ও লম্বা একটি লালসালু গায়ে দিয়ে সব সময় চলাফেরা করত। একদিন সে আমার সামনে পড়ল। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। আমাকে বলল, "বাবা, ভাল আছ?" আমি বললাম, "জি ভাল।" কোথায় যাবে জিজ্ঞাসা করলে বলল, "জিনের আছর, ঝাড়তে যাই।" জিন-ভূতের ব্যাপারটির প্রতি আমার একটা কৌতূহল ছিল। আমি তার সাথে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। সে আমাকে বলল, "চল বাবা,ভাল হবে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে।জিন-ভূতের গল্প শুনতে শুনতে সেই বাড়িতে চলে গেলাম।
আমাদের গ্রাম থেকে দুই গ্রাম পরে এই বাড়িটি। সময় লাগল আধঘণ্টার উপরে। বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখি কাচ্চা বাচ্চাসহ অনেক লোক জমায়েত হয়েছে। এ বাড়ির একজন ষোড়শীকে জিনে আছর করেছে। মামু বলল, "বেশি দেরি করা যাবে না, আমার জোগাল-পাতি নিয়ে আসেন এখনেই কাজ শুরু করতে হবে।" ওঝার কথামত ধোপ, লাল শাড়ি, এক পাতিল জেতা নদীর পানি ও একশত পাঁচ টাকা জোগাড় করে রেখেছে। মামু বলল, "রুগি কই?" মামুকে রুগির ঘর দেখিয়ে দিলে মামু বলল, "আমি যতক্ষণ ঝাড় দিব ততোক্ষণ এ ঘরে কেউ যাওয়া তো দুরের কথা, উঁকিও দিতে পারবে না, এর ব্যাতিক্রম হলে কোন কাজ হবেনা।" মামু ঘরের ভিতরে গিয়ে ১০ মিনিট পর চলে আসল। তার পর মেয়ের মাকে বলল পানিপড়া খুব যত্ন সহকারে তালাবন্দ করে রাখবেন। যদি কোনদিন আবার জিনে আছর করে এক গ্লাস পানিপড়া পান করাবেন। এখন কোন জিন নেই, ইচ্ছা করলে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন।
কিছুক্ষণ বসে আলাপ করার পর ডাব খাওয়াল। চলে আসার সময় মেয়ে কেমন আছে, জিজ্ঞাসা করলে, তার মা বলল, "ভাল, ভাত খাচ্ছে।" বাড়ি থেকে বের হয়ে বললাম, "মামু,কি করলেন? কিছুই দেখলাম না,কিছুই বুঝলাম না, জিনও চলে গেল। সে বলল , " আরে বেটা, এসব চালাকি আর বুদ্ধির কাজ, জিন-ভূত কিছুই না।" আমি বললাম, "আসল ঘটনা কী? বলেন তো শুনি। আসল ঘটনা শুনতে চাও ? তাহলে শোন, এ মেয়ের সাথে পাশের বাড়ির এক ছেলের প্রেম আছে। অন্য জায়গায় বিয়ের কথা পাকা হওয়াতে জিনের আছর বলে ভান ধরেছে।বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য। মেয়ে যেমন ফাঁকিবাজি করেছে আমিও তেমন ঝাড়া দিয়ে জিন তাড়িয়েছি।
আমি বললাম, "কী ঝাড়া দিয়েছেন তাতো জানতে পারলাম না।" সে বলল বুদ্ধি–বুদ্ধি– , শোন তাহলে, ঘরে ঢুকে দেখলাম,মেয়ে শুয়ে আছে। মেয়ে যাতে বুঝতে পারে অন্যদিকে ফিরে পানির পাতিলে শব্দ করে প্রস্রাব করলাম। এরপর মেয়েকে দেখিয়ে দেখিয়ে পাতিল থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে তাকে খেতে দিলাম। সাথে সাথে মেয়ে আমার পায়ে ধরে বলল, "চাচা,এখন আমার শরীরে কোন জিন নাই, আর কোনদিন আমাকে জিনে ধরবে না। আমি বললাম, " ঠিক আছে ,মা-বাবা যেখানে বিয়ের কথা বলবে সেখানে রাজি হবে তো? না হলে আমি আবার আসব এবং এই পানিপড়া খাওয়াব। মেয়ে বলল, "ঠিক আছে চাচা।" মামু ঘটনাটা শেষ করে বলল , "এই হলো ফাঁকিবাজির খেলা বুঝলা ভাগিনা।