বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষাগত যোগ্যতা!

সৈয়দ আনোয়ারুল হক
Published : 30 May 2016, 08:24 PM
Updated : 30 May 2016, 08:24 PM

আমার এক বড় ভাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁর কাছে শুনেছিলাম। বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং চলছে। এক পর্যায়ে সভাপতি প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলেন, "গণিত বিষয়ে কেমন পাশ করেছে?" প্রধান শিক্ষক বললেন, " পারসেন্টিস অনেক কম।" সভাপতি অন্যমনস্ক অবস্থায় জিজ্ঞাসা করলেন, "পারসেন্টিস কে পড়ান উনাকে ডাকেন, এ বিষয়ে এত কম পাশ করবে কেন?" বুঝতেই পারছেন সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা। মানে স্বাক্ষর করতে কলম ভাঙ্গে।

গোড়ায় গলদ রেখে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করার চেষ্টা করা মানে পন্ডশ্রম। পন্ডশ্রম না করে সঠিক শ্রম দিতে পারলেই শিক্ষার উন্নতি সম্ভব। শিক্ষার উন্নতি কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমনঃ ১।সঠিক অবকাঠামো ২। মেধাবী, সৎ, নিষ্ঠাবান শিক্ষক ৩। শিক্ষকদের চলার মত সঠিক বেতন ৪। শিক্ষিত, বিদ্যোৎসাহী, ন্যায়-পরায়ণ পরিচালনা পর্ষদ এবং ৫। সঠিক সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ।

এম,পি,ও, ভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় বর্তমানে অবকাঠামোগত তেমন সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। আর যে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক আছেন তাদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলেই চলবে। বর্তমানে বেতন দ্বিগুণ হওয়াতে বড় সমস্যা কেটে গেছে। জাতীয়করণ হলে এ সমস্যা একেবারেই থাকবে না। সরকার একটু কঠোর হলেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও নজরদারী সঠিক হবে।

আমার আজকের লেখার যে মূল বিষয় সেটা হল ম্যানেজিং কমিটি। এ সমস্যাটির সমাধান সহজ। শুধূ সরকারের একটি আইন করা প্রয়োজন। আইনটি করতে হবে সভাপতির ক্ষেত্রে। এম,পি,ও ভুক্ত যে কোন প্রতিষ্ঠানে সভাপতি হতে হলে কমপক্ষে বি,এ পাস হতে হবে। তবে সংসদ সদস্য হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল থাকতে পারে। আর বাকী সব নিয়ম যা আছে তাই চলবে। বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ এম,পি,ও, ভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় আন্ডার এস,এস,সি সভাপতির পদ দখল করে আছে। আমি যখন ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে TQI-SEP এর CPD প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের ক্লাস নেই তখন একটা জরিপ করি। প্রতি ক্লাসে ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষক থাকেন। ৭ বছরে তাদের মধ্যে জরিপ করে দেখা গেল ৭০% শিক্ষক বলেছেন। তাদের বিদ্যালয়ের সভাপতি এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং আন্ডার এস,এস,সি,।

এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট 'EMIS' এ ভিজিট করে দেখা গেল বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে আন্ডার এস,এস,সি সভাপতি। এখানে দুটি বিদ্যালয়ের উদাহরণ তুলে ধরছি। আমি ঢাকায় বসবাস করি, আমার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা জেলায়। পাঁচ বছর আগে এলাকার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ জনগণ প্রস্তাব রাখল যে, আমাকে গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মনোনীত করবে। আমি রাজি হলাম। তখন আমার ভাগিনা এ আসনের সংসদ সদস্য। কিছুদিন পর শুনি অন্য একজন সভাপতি হয়ে গেছে। এম,পি (ভাগিনাকে) জিজ্ঞাসা করলে বলল, " মামা এসব ঝামেলায় আপনার আসার দরকার নাই। পরে জানতে পারলাম লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে।

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হন লেনদেনের মাধ্যমে। আর এ লেনদেনের টাকা উঠানোর জন্য তাঁরা সব কিছুই করতে পারেন। আর বিশেষ দিক হল, বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষক চান কম শিক্ষিত অসৎ ব্যক্তি সভাপতি পদে আসুক। অর্থাৎ শিক্ষার ব্যাপারে তেমন কিছু বুঝে না। স্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে যাতে প্রধানের কথায় সভাপতি চলে।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস শিক্ষকদের পরিচালনার জন্য সভাপতি হবে আন্ডার এস,এস,সি, এটা শুনতে গেলে কেমন লাগে তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তবে বর্তমানে এ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাল লাগার কথা নয়।

একজন শ্রমিক শ্রেণির অভিভাবক যদি শুনে তাঁর ছেলে/মেয়ের বিদ্যালয়ের সভাপতি আন্ডার এস,এস,সি তাহলে সেই অভিভাবক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এদেশের সচেতন ব্যক্তি ও অভিভাবকবৃন্দ চান সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা। আর আমাদের বলা উচিত "সঠিক শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।" আর এ সঠিক শিক্ষার জন্য সবাই চায় শিক্ষিত (কমপক্ষে স্নাতক পাস) সভাপতি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সুপারিশ করছি এম,পি,ও, ভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সভাপতির যোগ্যতা যাতে কমপক্ষে স্নাতক পাস করা হয়।