বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কে হবেন?-এর উপর বিভিন্ন মতামত জরিপ

সৈয়দ আনোয়ারুল হক
Published : 17 June 2016, 07:06 AM
Updated : 17 June 2016, 07:06 AM

মতামত জরিপে লক্ষ্য করা যায় যে, সংসদ সদস্যগণকে হাইকোর্টের রিটে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি থেকে বাদ দেয়া হয়নি। আগে আইন ছিল যে, চারটি প্রতিষ্ঠানের বেশি প্রতিষ্ঠানে সাংসদগণ সভাপতি হতে পারবেন না। বর্তমান আইনে নির্বাচনের মাধ্যমে যত ইচ্ছা তত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন। এ আইনের মাধ্যমে তাঁরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্ত করে আকড়ে ধরতে পারবেন। বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঠিক নির্বাচন হয় না সংসদ সদস্যগণ যা মতামত দেন তাই হয়। মতামতে আরও প্রকাশ পেয়েছে যে, কমপক্ষে ডিগ্রি পাশ ব্যক্তি যেন সভাপতি হতে পারে এ ধরণের আইন পাশ করা। বিশেষ করে মতামতে উঠে এসেছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হলে সব সমস্যার সমাধান হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৫% বেসরকারি অবস্থায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশে পরিনত করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।

স্কুল–কলেজের পরিচালনা পর্ষদে সাংসদের সভাপতি থাকা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে করা এক আবেদনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

১ জুন একটি রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালে প্রণীত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালার ৫(২) ও ৫০ বিধি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

সর্বশেষ ২০০৯ সালের জুনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা তৈরি হয়। ওই প্রবিধান অনুযায়ী, একজন সাংসদ সর্বোচ্চ চারটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পেরেছেন। তবে ওই প্রবিধানের ৫(২) ধারা আদালত অবৈধ ঘোষণা করায় এখন সাংসদেরা অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেই আর সর্বোচ্চ চারটি স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না। তবে ৫(১) বিধি অনুসারে সাংসদদের সর্বোচ্চ চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হতে বাধা নেই।

আদালতের আদেশের পর এখন চারটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সাংসদ হতে পারেন, তবে তাঁকে নির্বাচিত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটির অন্যান্য সদস্যের ভোটে তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত হতে হবে।

১২ জুন তারিখে 'দৈনিক শিক্ষা' অনলাইন পত্রিকায় "বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতি হতে পারবেন না এমপিরা, আপিলেও রায় বহাল" এই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের পাঠকের মন্তব্য যা প্রকাশ পায় তা নিম্নরূপঃ মোঃ সামছুল আলম , রাজিবপুর , কুড়িগ্রামঃ

"সভাপতি থাকার এত আগ্রহ কেন? নিশ্চয়ই আর্থিক সুবিধা আছে। আরও অনেক আগেই এই প্রবিধান রহিত করা উচিত ছিল।"

মো. রহমত উল্লাহ্‌ : লেখক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।

"এমপি মন্ত্রীরা এখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হবেন যত খুশি ততটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর যদি কোন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকে তো উভয় সংকটে পড়বেন শিক্ষকগণ।"

মো. শহীদুর রহমান, সহকারী শিক্ষক, বারাজান উচ্চ বিদ্যালয়, কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট।

"এটি একটি সময়োচিত রায়।"

মোঃ আলীমুদ্দীন মন্ডল, সহকারী শিক্ষক, বাসির বানিয়া দাখিল মাদ্রাসা,পার্বতীপুর, দিনাজপুর।

"যথার্থ রায়"

Md. Baki Billah :

জাতীয় নির্বাচনের যে অবস্থা, আর এ তো প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচন ! Mp মহোদয়গণ আপনারা কোন চিন্তা করবেন না, আপনাদের কে সভাপতি নির্বাচিত করবেনা কোন সদস্যদের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে? এ শুধুই আই ওয়াশ!!!

Md. Nore Alam Siddique :

Sob bad deya chai jatiokoron. Ata amader praner dabi

মুসা বলেছেন,

"এমপিরা এটা নিয়ে খুব বেশি মন খারাপ করবেন না মনে হয়। কারন আসল ঘটনা অনেক আগেই ঘটে গেছে। যখন নিয়োগ চলে গিয়েছিল ntrca তে। অবশ্য এ রায়ে নিয়োগ বাণিজ্যের কিছুটা সুষম বন্টন হলো। এক দিকে বাকি থাকল প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি নিয়োগ। এটুকুর জন্য এবার সুযোগ হলো উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতাদের। প্রতিষ্ঠানে এবার পাতি নেতাদের দৌরাত্ব বৃদ্ধি পাবে। যা হোক এত কিছুর পরও সবচাইতে বেশি দরকার শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া। কম পক্ষে গ্রাজুয়েশন ছাড়া কেউ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবে না। দাবীটা অনেকদিনের। কিন্তু এটা এখনই করা যাবে না। কারন হাল আমলের অনেক নেতারই সেই যোগ্যতা নেই কিন্তু পদে জেকে বসে আছেন। অবশ্য এদের তিরোধানের পর হাইকোর্ট ঐ রায় দিয়ে বাহবা কামাবে।"

নূর হোসেন, সহঃ শিঃ, পশ্চিম জাফলং উঃ বিঃ, সিলেট। :

"শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড । শিক্ষাই শক্তি । শিক্ষা ছাড়া গণতন্ত্র অচল । যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত । আমরা ছোট বেলা থেকেই এই প্রবাদবাক্যগুলোর সাথে পরিচিত । বর্তমানে দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি । এই ৯৫ ভাগ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর দাড়িয়ে আছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), এনটিআরসিএ, এবং সর্বোপরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় । তাহলে আমরা দেখতে পাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সমস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সরকারি । অর্থাৎ একটি বৃক্ষের কাণ্ড, ডাল, শাখা, প্রশাখা, পাতা সবই সরকারি আর শেকড়টাই শুধুমাত্র বেসরকারি । এই বৃক্ষের শেকড় ছাড়া সবাই সরকারি বেতন, বাড়িভাড়া, উৎসবভাতা, চিকিৎসাভাতা, বৈশাখীভাতা ইত্যাদি ঠিকই মাসের ৫ তারিখের আগে পাচ্ছেন । আর শেকড়ে থাকা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরকারি বিধিমোতাবেক সৃষ্টপদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও আইসিটি শিক্ষকসহ কত শিক্ষক যে এখনও অনাহারে বিনা বেতনে চাকুরী করে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তার খবর কে রাখে । আইসিটি শিক্ষকদের পেটে ক্ষুধা রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা কতটা যৌক্তিক তা একজন পাগলও বলতে পারবে । আজ জাতির কাছে একটাই প্রশ্নঃ যে শেকড়ের উপর দাড়িয়ে আছে দেশের ৯৫ ভাগ শিক্ষা, সেই শেকড়কে অবহেলা করে জাতি কতটা শক্ত হয়ে দাড়াতে পারে তা কেন ভেবে দেখেন না । শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তাহলে শিক্ষাকেই অবশ্যই আগে সবচেয়ে মানসম্মত করতে হবে । জাতি গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক, সেই শিক্ষকের পেটে ক্ষুধা রেখে পাঠ দান করতে গেলে তা কখনও ফলপ্রসূ হয়না । আজ শিক্ষকদের যদি সবচেয়ে বেশি সম্মানি, মর্যাদা ও মানসম্মত জীবনের সুযোগসুবিধা দেওয়া হতো, তাহলে দেশের সবচেয়ে মেধাবীরা অন্যান্য পেশা ছেড়ে শিক্ষকতাকেই বেছে নিত । আর ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখার জন্য ২০৪০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতোনা বরং ২০২০ সালের আগেই তা দেখতাম । তাই আর দেরি নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশ আজ কতদুর এগিয়ে, কারণ তারা আমাদের দেশের মতো শিক্ষকদের এত অবহেলা করেনি । আর আমরা কত পিছিয়ে, কারণ আমরা সর্বদাই শিক্ষকদের অবহেলা করে আসছি । বেসরকারি শিক্ষকদের হয়ত ৫০০ টাকাতেই বাড়িভাড়া পাওয়া যায়, ৩০০ টাকার হোমিও ঔষধে বৃদ্ধ পিতা-মাতার চিকিৎসা হয় । ১৯৭৩ সালে একসাথে ৩০১০০ টি প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । আবার ২০১৩ সালে কয়েক হাজার বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা । অর্থাৎ ইতিহাস বলছে একসাথে জাতীয়করণের ঘোষণা দেবার মতো দুঃসাহস শুধু বর্তমান সরকারেরই আছে । তাই শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে সেই মেরুদণ্ডের ৯৫ ভাগ এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষার শেকড় থেকে "বে" শব্দটি উঠে দিয়ে ইতিহাসের পাতায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করার জন্য শিক্ষা দরদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রিকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি । দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার আপনার সাথে আছে এবং থাকবে ইনশাল্লাহ।"

Ali Mirtaza

"ম্যানেজিং কমিটি নামের দাদাগীরি সংস্থাটি স্বমূলে বিলুপ্তি ঘোষনা করা হোক।"

মোহিত রায় (চর ফিলিজ জয়নব হাইস্কুল এন্ড কলেজ, শরীয়তপুর) :

"এই সিদ্ধান্তটা ১০ বছর আগে হইলে ভালো হত। তাহলে এত মানুষের নিয়োগের জন্য আর জমি, হালের গরু, মায়ের গলার হার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রয় করতে হতোনা। তার পরও দেরিতে হলেও ভালো।"

"ধন্যবাদ মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে এমন একটি সঠিক বিচার করার জন্য । তবে এই মুহুর্তে আমর মনে হয় বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে সভাপতি পদে তাদের মনোনয়ন করা উচিত যারা প্রতিষ্ঠানের ক্যাচমেন্ট এলাকার অবসর প্রাপ্ত কোন শিক্ষক/ কমপক্ষে ডিগ্রি পাস কোন সমাজ সেবী ব্যাক্তিবর্গ।  তাদেরকেই সভাপতি পদে আসিন করা উচিত হবে বলে আমি মনে করি । কারণ যার কোন শিক্ষার আলো নেই বর্তমানে এখনো পর্যন্ত এমন ব্যক্তি ও সভাপতি আছেন । তাদের যন্ত্রনায় অস্থির ঔ প্রতিষ্ঠান । তবে যে ডিগ্রি পাস করে তার অবশ্যই শিক্ষকদের কিম্বা শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় বোঝেন । তাই তাদের কেই সভাপতি করলে একমাত্র মজবুত ম্যানেজিং কমিটি হবে বলে আমি মনে করি । আর এটা করলে বর্তমান সরকারের মানীয় প্রধান মন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রী সকলেই আরো একবার প্রসংশিত হবেন জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে এটা আমি দৃড়ভাবে বলতে পারি।"

পবিত্র কুমার বর্মন :

"একটা সুচিন্তিত রায় পাওয়া গেল। আর এটা নিয়ে বিতর্ক না করাই ভাল। এমপিরা সভাপতি না থেকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করতে পারবে যদি তাদের শিক্ষানুরাগী মনোভাব থাকে। এতে সভাপতি পদটা খুব জরুরী নয়। আজ এ রায়টা নিয়ে এত বিতর্ক হওয়ার কারন এমপিদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর একতরফা নিয়ন্ত্রন, নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুষ প্রায়ই সবই দায়ভার তাদের উপর বর্তায়। এমপিরা যদি আইন প্রণয়ন করেন তাহলে এই রায় নিয়ে তাদের এত মাথা ব্যাথা কেন।"