মিথ্যা, উদ্ভট ও অকথ্য সংবাদ শিরোনাম মিডিয়ার প্রতি আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে পাঠকের

সৈয়দ আনোয়ারুল হক
Published : 15 June 2016, 07:17 PM
Updated : 15 June 2016, 07:17 PM

আমরা যারা পাঠক, তাঁরা অবশ্যই বাঘ ও রাখালের গল্প শুনেছি।  বনের ধারে রাখাল  গরু চরাত। একে একে সে তিনদিন বলেছিল, " বাচাও বাচাও বাঘ বাঘ—-" গ্রামের লোকজন তাকে বাঁচানোর জন্য তিনদিন দৌড়ে এসেছিল। পরে তাঁরা বুঝতে পারল রাখাল মিথ্যাবাদী। চতুর্থদিন ঠিকই বাঘ আসল কিন্তু গ্রামের লোকজন তার ডাকে সাড়া দেয়নি। রাখালের নিশ্চিত মৃত্যু হল।

আমাদের কিছু কিছু মিডিয়া বর্তমানে পাঠককের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। মিথ্যা, উদ্ভট ও অকথ্য সংবাদ শিরোনাম দিয়ে পাঠকের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করছে।নিছে কিছু ছবি ও লিংক দিলাম সত্যতা যাচাই করার জন্য। লিংক দিলে শত শত দেয়া যাবে কিন্তু পাঠকের বিরক্তি আনতে চাই না । যেমনঃ রঞ্জিত মল্লিক আর নেই " এ শিনামে সব পাঠক ধরে নিবে এ নায়ক মারা গেছেন। কিন্তু শিরোনামে ক্লিক করে দেখা গেল গল্পের শেষে তিনি অভিনয় জগত ছেড়ে দিয়েছেন, সুস্থ্য আছেন ভাল আছেন।যেমনঃ এ লিংকে ক্লিক করুন "মৃত্যুর গুজবে শাবানা বিরক্ত । আসলে বুদ্ধি থাকলে মূল খবরটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আকর্ষনীয় একটি শিরোনাম লেখা যেত। পাঠকবৃন্দ প্রতারিতও হত না, মিডিয়ার প্রতি অনিহাও আসত না।

আর একটি সংবাদ শিরোনাম, " আত্মহত্যা করলেন মাহিয়া মাহি।" শিরোনামে ক্লিক করে ঢুকার পর দেখা গেল, মাহির বাস্তব জীবনের বর্ণনা করার পর বলা হয়েছে, "মাহির এ জীবন কাহিনী নিয়ে একটি সিনেমা তৈরী হচ্ছে। এ সিনেমায় মাহি আত্মহত্যা করবে।

আরো আছে, যেমনঃ "সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন নায়িকা অপু বিশ্বাস।" শিরোনামটি দেখে সবাই চমকে গেলেন এবং আগ্রহের সাথে কাহিনী পড়লেন। শেষে লেখা আছে, তিনি কারো সাথে কোন যোগাযোগ করছেন না, আত্মগোপন করে আছেন।যেমনঃ "প্রভাকে বিয়ে করে ফেললেন নায়ক সাকিব খান।" ইত্যাদি খবরের অভাব নেই।

আরো একটু ব্যতিক্রমধর্মী শিরোনাম, " নায়িকাকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধোলাই খেলেন অভিনেতা শাহীন!" ধর্ষণের বর্ণনা দেয়ার পর বোঝা গেল আসলে এটি বাস্তবে নয়, সিনেমার অভিনয়ে।

"নায়ক রিয়াজ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহিত।" এমন শিরোনাম পড়ে আমি অবাক হই। আসল খবর পড়ে দেখা গেল সে একটি সিনেমায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এ ধরণের সংবাদ ফেইজ বুকে শেয়ার করা হয়। আমি কৌতূহল বসত পাঠকের মন্তব্য দেখি এবং অবাক হই। অকথ্য ভাষায় লেখককে গালিগালাজ করে বিভিন্ন মতব্য করা আছে।

মিডিয়া যদি এভাবে এগিয়ে যায় তাহলে আমাদের জাতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে ভেবে দেখার বিষয়।

এতক্ষণ আলোচনা করলাম মিথ্যা সংবাদ শিরোনাম নিয়ে, এখন আসি উদ্ভট সংবাদ নিয়েঃ "পৃথিবীতে সূর্যের আলো থকবেনা একাধারে ১০ দিন। এটি তিন-চার দিন আগের সংবাদ। আবার যেমনঃ  " আগামী ৬৮ দিনের মধ্যে ধ্বংস হবে পৃথিবী।"  (এ লিংকে ক্লিক করুন) রকম আর একটি শিরোনাম- "দোযকের সন্ধান পেয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা।" যেমন ইডিটিং করে মুলার সাথে মানুষের পা লাগিয়ে উদ্ভট সংবাদ ছাপানো। ইত্যাদি আরো অনেক সংবাদ

শেষে আসি অকথ্য সংবাদের কথায়। সাহিত্য অর্থ সুন্দর। একজন লেখক, সাংবাদিক ও কবি যেই হউক না কেন তাকে সাহিত্যিক বলা চলে। যে সুন্দরের সৃষ্টি করবে তার সব কিছুই সুন্দর হবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা পাঠকরা মাঝে মাঝে দুঃখিত, বিব্রত ও মর্মাহত হই এ ধরণের লেখা পড়ে।

আমি শুধু কয়েকটি শিরোনাম তুলে ধরব তাহলেই পাঠকরা বুঝতে পারবেন। যেমনঃ ১। মেয়ের গর্ভে বাবার সন্তান ২। মা ও মেয়ের একই স্বামী লিঙ্কে ক্লিক করুন (মা ও মেয়ের একজনই স্বামী) ৩। আপন খালাকে বিয়ে করে ভাগিনা ৪। তিন মেয়েকে অন্তসত্তা করলেন  বাবা ৫। সত্তর বছরের বৃদ্ধা মাকে ধর্ষণ করল ছেলে ৬। কবর থেকে যুবতীর লাশ উঠিয়ে ধর্ষণ করল। এ রকম অসংখ্য সংবাদ আমরা মিডিয়াতে পাই। লিখে আর বিরক্তি ঘটাতে চাই না।

পরিশেষে বলতে চাই, এ সকল সংবাদ যাতে কেউ মিডিয়াতে দিতে না পারে- এ ব্যাপারে কঠোর আইন করা উচিত। এ ধরণের সংবাদ সমাজকে ভাল কিছু দিতে পারে না। সমাজকে কলুষিত করতে পারে। আমি এ ব্যাপারে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাই। বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ ধরণের মিথ্যা, উদ্ভট ও অকথ্য সংবাদ  যাতে বন্ধ হয় তার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।