ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি শিক্ষায় ভাস্কর্যের তুলনা হয় না (পর্ব- ২)

সৈয়দ আনোয়ারুল হক
Published : 2 May 2017, 01:24 AM
Updated : 2 May 2017, 01:24 AM

একটি দেশ বা জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি চর্চা অনেকটা নির্ভর করে তার স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের উপর। সে হিসেবে স্বাধীনতার ৪৬ বছরের মধ্যে অসংখ্য ভাস্কর্য আমাদের আছে। তার মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, তিন নেতার মাজার, অপরাজেয় বাংলা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। দেশের প্রত্যকটি নাগরিকের উচিত এ সকল ভাস্কর্য দেখে উপলব্ধি করা এবং সঠিক ইতিহাস জেনে দেশের উন্নতির জন্য এগিয়ে যাওয়া।

আমি যখন স্কুল-কলেজ এর ছাত্র তখন এসব দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শুরু হল ভ্রমণ ও দেখার কাজ। লেখাপড়া শেষ করে কর্ম জীবনে প্রবেশ করার পর দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর এসব বিষয়ে তেমন একটা খেয়াল করতে পারিনি।

এখন আমার দুই কন্যা হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ছুটির দিনে আর ঘরে থাকতে পারি না। ওদের ইচ্ছায় কোন না কোন দর্শনীয় জায়গায় বের হতেই হয়। কিছুদিন আগে কন্যাদ্বয়ের কথামত চলে গেলাম সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে।

.

মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্মৃতিসৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকৌশলী মইনুল হোসেনের নকশা মোতাবেক ১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে স্মৃতিসৌধের কাজ শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে স্মৃতিসৌধের কাজ শেষ হয়। প্রায় ৮৪ একর জমির উপর স্মৃতিসৌধ গড়ে উঠেছে।

এর আগে অর্থাৎ আমার মেয়েরা যখন ছোট ছিল তখন এখানে কমপক্ষে দু'বার আসা হয়েছে। আস্‌লে কি হবে, তারা তো তখন ছোট ছিল। এসব বিষয় নিয়ে ভাবার বয়স ছিল না ওদের। আমার দুই কন্যা নাদিয়া ও নাবিলা আজ তারা হাই স্কুলের ছাত্রী। স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করেই বড় মেয়ে নাবিলা বলল, "বাবা স্মৃতিসৌধের এ রকম সাতটি স্তম্ভ কেন দেয়া হল। এ সাতটি স্তম্ভের কি কোন মানে আছে? আমি বললাম, "অবশ্যই আছে, তুমি কি এর অর্থ জানতে চাও?" তখন ছোট মেয়ে নাদিয়া বলল, "বাবা আমিও জানতে চাই।" আমি বললাম, "তাহলে তোমরা দু'জনেই মন দিয়ে শোন।

.

আমাদের স্বাধীনতা কিন্তু হঠাৎ করে আসেনি। তোমাদের পাঠ্য বইয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস পড়েছো। কীভাবে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন হয়েছি। আর স্মৃতিসৌধের মধ্যে যে সাতটি স্তম্ভ দেখতে পাচ্ছো তা হল আমাদের দেশ স্বাধীনের জন্য ৭টি আন্দোলন। নিচের দিক থেকে শুরু করে ১ নং স্তম্ভ হলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ২ নং স্তম্ভ- ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৩ নং স্তম্ভ- ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ৪ নং স্তম্ভ- ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৫ নং স্তম্ভ- ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬ নং স্তম্ভ- ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ৭ নং স্তম্ভ এবং সবার উপরের স্তম্ভটি হলো আমাদের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ।"

স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে আমার বর্ণনা শুনে আমার দুই কন্যা খুব মজা পেল। কথা শেষ করে আর কিছুক্ষণ ঘুরে ছবি উঠালাম।