‘প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি’ যখন নাগরিক দুর্ভোগ

সৈয়দ আনোয়ারুল হক
Published : 14 April 2018, 02:20 AM
Updated : 14 April 2018, 02:20 AM

ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র কর্তৃক আয়োজিত প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে গত শুক্রবার ১৩ এপ্রিল ২০১৮ইং তারিখ  লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়। সকাল ছয়টা থেকে এ কর্মসূচির আয়োজন শুরু  হলেও মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ১০টার পর। আর কর্মসূচি শেষ হয় সকাল ১১টার পর।

জিরো পয়েন্ট এর দৃশ্য

দীর্ঘ এই পাঁচ ঘণ্টা গুলিস্তান এলাকায় কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারেনি। ভ্যান, রিক্সা, সাইকেল, মোটরসাইকেল সহ আর যত ধরনের যানবাহন আছে কোনোটাই প্রবেশ করতে পারেনি। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, কোন মানুষও অত্র এলাকায় ঢুকতে পারেনি। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে নিচ্ছিত্র নিরাপত্তায়। আমি বাসা থেকে বের হয়ে মৌচাক (সানারপাড়) এসে আমার দুই মেয়েকে নিয়ে বাসে উঠি। হাটখোলা পর্যন্ত এসে জ্যামের জন্য গাড়ি আর যেতে পারেনি।

এখানেই নেমে হাঁটা শুরু করি। শুক্রবারে এত জ্যাম ভাবতে অবাক লাগলো। কিন্তু গুলিস্তান গিয়ে বুঝতে পারলাম আসল ঘটনা। ইচ্ছা ছিল ছোট মেয়েকে শিশু একাডেমিতে ক্লাসে দিয়ে বড় মেয়েকে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে আবৃত্তির ক্লাসে যাবো। কিন্তু বিধি বাম, হেঁটেই যেতে হলো দুই জায়গায়। হাতে এক ঘণ্টা সময় নিয়ে যাওয়ার পরও ক্লাসে গেলাম আধা ঘণ্টা পর।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশ দিয়ে লোকজনের পল্টনে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য

গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারে অসহ্য যানজট ছিল। কারণ গুলিস্তানে গাড়ি ঢোকার রাস্তা বন্ধ ছিল। গুলিস্তানে প্রবেশ করার যে সকল রাস্তা বন্ধ ছিল তা হলো- ফ্লাইওভার, ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে হাটখোলা রোড, মতিঝিলের রাস্তা, পল্টনের রাস্তা, আব্দুলগনি রোড, মেডিকেল-চাঁনখারপুলের রাস্তা। আর পুরান ঢাকার তো সবই অচল ছিল। মতিঝিল, পল্টন হয়ে শাহাবাগের দিকে যাওয়ার রাস্তা খোলা ছিল, কিন্তু যানবাহনের লোড বেশি হওয়ায় পুরো পাঁচ ঘন্টাই যানজট ছিল। গাড়িতে উঠার কোন পরিস্থিতি ছিল না।

ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করে গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে নাম লেখাতে চাওয়ার পেছনের গল্পটা হচ্ছে নাগরিক দুর্ভোগ। তাও আবার এই দুর্ভোগের কারণ, বাস্তবিক কোনো কাজ না, প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি।

পল্টন মোড়ের দৃশ্য

অনুষ্ঠান শেষ হলে দুপুর ১২টার পর দেখা গেল চিপসের প্যাকেটসহ নানা ধরনের খাবারের উচ্ছিষ্ট বর্জ্যে গুলিস্তান এলাকা নোংরা হয়ে আছে।

কেউ যদি সকালে গুলিস্তান হয়ে ঢাকার দিকে যেতেন তাহলে সমস্যাটি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারতেন। শুক্রবারে মানুষ ঢাকা থেকে নিজ নিজ গন্তব্যে যায়। দূরপাল্লার যানবাহনে ওঠার জন্য জিনিসপত্র নিয়ে তারা যে অসহ্য যন্ত্রণায় ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।