আপনি হরিণগুলোরও মা

সৈয়দ ঋয়াদ
Published : 10 August 2016, 08:06 PM
Updated : 10 August 2016, 08:06 PM

রাষ্ট্র আমার না আমি রাষ্ট্রের! কোনটা কার? কার প্রয়োজনে রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে? রাষ্ট্র কি তাহলে শেষতক একটি নিপীড়ণ যন্ত্র!! এমন অবস্থায় অনেক প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি দেয়, তাহলে আমাদের গণতন্ত্রই বা কতটা গণতান্ত্রিক ? এরও কি কোন ভিত্তি আছে! আমাদের ভাগ্য নিয়ে প্রেমিকার মতো রাষ্ট্রও কি প্রহসন করে না? আমার তো জানতাম রাষ্ট্রের সাথে জনগনের সম্পর্ক জনননী ও সন্তানের। সেই জানাওতো পরিপূর্ণ নয়। রাষ্ট্র নামক নিপীড়ন যন্ত্রটা দিনকে দিন ভয়াবহ হয়ে ওঠেছে। রাষ্ট্র কি কোন সুবিদাবাদী বা সুবিদাভোগী গোষ্ঠীর দখলী সম্পত্তি? তাহলে প্রতিবাদ করতে ভয় কিসের। জনগনতো কোন দলের ভাতার না, যে তাকেও ক্ষমতায় যেতে হবে? প্রধানমন্ত্রী সমীপে সুন্দরবনের গুরুত্ব তুলে ধরা সময়ের দাবি। প্রয়োজনে মুক্ত মঞ্চে এটা নিয়ে বিতর্কের আয়োজন করা হোক। যে বুদ্ধিজীবিরা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়েছেন যে সুন্দরবন কিছু হবে না, তারা নিশ্চই মোটা অংকের দালালি খেয়েছে। একদল সুন্দরবন ধ্বংসের পক্ষে, আরেক দল এর বিপক্ষে। সত্য মিথ্যার যুক্তি কিংবা এটাকে নিছকই ভাবছেন বিদেশী অনুদানে সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে,  অনুদানমুখি আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করছেন বা অন্য যা কিছু করছেন করুন, সত্যটা তাদেরও জানা ? নাকি সত্য বলতে ভয় পান। পৃথিবীর বৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনটি রক্ষা করা প্রয়োজন! সরকার যখন বৈশিক উষ্ণায়নের জন্য উন্নত রাষ্টের কাছে ফরিয়াদি হন এবং দিন শেষে নিজেরাই একটি উষ্ণ সাম্রাজ্য গড়ার প্ল্যান করেন, এসব মিথ্যে মঞ্চায়নে অন্যদেরও হাসি পায় সেটা ভেবেছেন কি! আমি ততটুকু উন্নয়ন চাই না, যে উন্নয়নের ভয়াল থাবায় আমি বা আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো । কই মাছের প্রাণ দেরিতে যায় এই নিয়ে একটি গল্প আছে। কই মাছ নাকি ধরার সময় বলে, যা ধরছস ধর চাকিতে রাখলে লাফ দিমু। চাকিতে রাখার পর বলে, থাক বাড়িতে ঘেলে লাফ দিমু। বাড়িতে যাওয়ার পর বলে, বটির কাছে গিয়ে লাফ দিমু। বটি দিয়ে কাটার পর বলে কড়াইয়ে গেলেই লাফ দিমু। যেহেতু কই মাছ প্রায়শই কড়াই পর্যন্ত বেঁচে থাকে, তাই কইয়ের প্রত্যাশাও কড়াই পর্যন্ত বেঁচে থাকে। কড়াইয়ে যাবার পর কই মাছ তার বোকামিটা বুঝতে পারে না। কারণ ততক্ষণে….এই করে কইয়ের আর প্রাণে বাঁচাও হয়ে ওঠে না। আমরা জনগনও এক্সট্রিম পয়েন্টে না গেলে কখনোই সজাগ হই না। ততক্ষণ পর অবশ্য আমরাও অনেকটা কই মাছ বনে যাই।


প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, দয়া করে সুন্দরেবন নিয়ে ভেবে দেখবেন। আপনি বাংলাদেশেকে অনেকদুর নিয়ে গেছেন। আমরা এখন উন্নত রাষ্ট্র কল্পনা করার সাহস পাই অাপনারই জন্য… নিশ্চই আপনি আমাদের আবেদনটি একটু ভেবে দেখবনে। ১৩০০ নয় আপনি চাইলে তেরো হাজার (১৩০০০) মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু আপনি চাইলেই একটি সুন্দরবন বানাতে পারবেন না। মাঝে মধ্যে জ্ঞানীদেরও ভুল হয়, খুব সূক্ষ্ণ ভুল, যেটা গবেষণায় দেখা যায় না। সুন্দরবন ধ্বংসও তেমনেই একটি ভুল। আমি বাণিজ্যিক কারণ বা কোন অজুহাত দেখাতে চাই না। চীন বা ভারতপন্থী আন্দোলন হিসেবে সুন্দরবনকে দেখতে চাই না। অন্যসব লাভ ক্ষতির হিসেবও করতে চাইনা। আমি নিরপরাধ হরিণগুলোর কথা আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই। মনে করিয়ে দিতে চাই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা, আপনি যে টাইগারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনি মাশরাফি-মুশফিকদের যেমন ভালবাসেন, আমরা চাই আপনার মমতায় নিরাপদ থাকুক মায়াবী হরিণসহ অন্যসব প্রাণীগুলো। আপনি শুধু আমাদেরই মা তা নয়, আপনি সুন্দর বনের পশুপাখিগুলোরও মা।

ইস্কাটন
১০-০৮-২০১৬