নিরন্তর কবি ফজল শাহাবুদ্দীন

ফরিদআহমদদুলাল
Published : 2 April 2014, 04:21 PM
Updated : 2 April 2014, 04:21 PM

আধুনিক বাংলা কবিতাকে যাঁরা যৌবন দিয়েছেন, তাঁদের অন্যতম প্রধান কবিপুরুষ ফজল শাহাবুদ্দীন; যিনি তাঁর কাব্যজীবন শুরু করেছিলেন পঞ্চাশের প্রথমার্ধে। পঞ্চাশের আগেই দেশভাগের কারণে বাংলা কবিতার দুটি বেগবান ধারা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে স্ফুর্তি পেতে শুরু করে চল্লিশের শেষার্ধে। চল্লিশের দশকেই বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ অনিবার্য হয়ে উঠেছিলো ঐতিহাসিক প্রয়োজনে; কিন্তু পূর্ববাংলার মানুষের দুর্ভাগ্য যে, দেশ ভাগের পর এ জনপদের মানুষের কাঁধে চেপে বসে দ্বিজাতিতত্ত্বের অলীক আদর্শে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান নামের দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের ভূত। জিন্নাহ সাহেবের দ্বিজাতিতত্ত্বের অসারতা প্রমাণিত হয়ে যায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠান অব্যবহিত পরই। পূর্ববাংলার চল্লিশের কবিদের অনেকেই পাকিস্তানি আদর্শের আবহে ইসলামী তাহজিব-তমুদ্দুনের ঝাণ্ডা ওড়াতে তৎপর থেকেছেন। ইসলাম কোনো বাতিল বিষয় নয়, কিন্তু পাকিস্তান হয়ে ওঠে প্রতারণাভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র; সঙ্গত কারণেই ইসলামের সাথে যখন পাকিস্তান যুক্ত হয়ে যায় তখন তার পবিত্রতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।

পাকিস্তানপন্থী সেই কবিকূলের কারো কারো চেতনায় সে বোধোদয় হয়নি, এমনকি ভাষা আন্দোলনের পরও নয়। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন পূর্ববাংলার বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেণি তো বটেই, সাধারণ মানুষের অন্তরের অচলায়তনও গুড়িয়ে দিয়েছিলো। বাঙালির সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় ভাষা আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিলো পঞ্চাশের প্রথমার্ধেই, বিশেষত পঞ্চাশের চিত্রকলা, কবিতা এবং সঙ্গীত; এ তিন শাখাতে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব লক্ষযোগ্য। নাট্যকলায় পঞ্চাশের দশকে মুনীর চৌধুরী এবং তাঁর 'কবর' যুক্ত হলেও নবনাট্য প্রবাহের সৃষ্টি হয়নি। পঞ্চাশের কবিদের মধ্যে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আবু বকর সিদ্দিক, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আল মাহমুদ, ওমর আলী, কায়সুল হক, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, দিলওয়ার, ফজল শাহাবুদ্দীন, শহীদ কাদরী, শামসুর রাহমান, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক এবং হাসান হাফিজুর রহমান এই একগুচ্ছ কবির নাম সহজেই উল্লেখ করা যায়, যাঁদের কবিতায় কেবল একুশের চেতনা নয়, আমরা পেয়ে যাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের তুমুল উত্থান। পঞ্চাশের এই কবিদের মধ্যে পরবর্তীকালে কেউ কথাসাহিত্যে, কেউ গীত রচনায়, কেউ সাহিত্যের সংগঠনে, কেউ আদর্শচ্যুতিতে, কেউ বা সব্যসাচী হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়েছেন–আলোচিত হয়েছেন। অসংখ্যের ভিড়ে কবি ফজল শাহাবুদ্দীন নিজের অনন্য যোগ্যতায় ভিন্নমাত্রার স্বাতন্ত্র্য নিয়ে নিজস্ব দীপ্তির সৌরভ ছড়িয়েছেন, যে সৌরভ কেবল তাঁকেই সুরভিত করেনি, সুরভিত করেছে তাঁর সমকালকে-পরিপার্শ্বকে। ফজল শাহাবুদ্দীন-এর সে কৃতির কথা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিশ্চয়ই সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করবে সহস্রাব্ধ পেরিয়েও। ফজল শাহাবুদ্দীন-এর কাব্যকৃতি দীর্ঘকাল বাংলা সাহিত্যে আলোচিত হবে এ প্রতীতি অনেকের সাথে আমারও।

ফজল শাহাবুদ্দীনের কবিজীবনের পাশাপাশি তাঁর সংগ্রামী জীবন যে কোনো মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। পরিবারে আর্থিক সংকটের কারণে তাঁকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই শুরু করতে হয়েছিলো কর্মজীবন। ঢাকার নবাব এস্টেটে চাকরি নিয়েছিলেন প্রথম, সেখান থেকে নবাবপুর পোস্ট অফিসের করনিক পদে পাঁচ বছর। চাকরির পাশাপাশি নৈশ কলেজে চলেছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। একই সাথে কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। ১৯৬৮ সালে ফজল শাহাবুদ্দীন-এর সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় হয় 'মাসিক বিচিত্রা'। পরবর্তীতে ১৯৭২ থেকে বিচিত্রা সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হতে শুরু করে তাঁর সম্পাদনায়ই। সাপ্তাহিক বিচিত্রা বাংলাদেশের সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে নিজের যে মান তৈরি করে গেছে তা আজও মাইলফলক হয়ে আছে বাংলাদেশের পাঠকের কাছে। বিচিত্রার সম্পাদক ফজল শাহাবুদ্দীনকে যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি অস্বীকার করা যায় না ফজল শাহাবুদ্দীনের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতাও। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সাংবাদিকতারও পথিকৃৎ বলতে হয় ফজল শাহাবুদ্দীনকে। পাকিস্তান চলচ্চিত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ফজল শাহাবুদ্দীন। চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্যও লিখেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর এতকিছু কীর্তি ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন কবি। বাংলার কাব্যাকাশের অনিন্দ্য-দ্যুতির ভিড়ে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র।

ফজল শাহাবুদ্দীন-এর শেষ কাব্য 'একজন কবি একাকী' প্রকাশিত হয় ২০১৩ তে। এর আগে প্রকাশিত তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্য 'তৃষ্ণার অগ্নিতে একা', 'অনাকাক্সিক্ষত অসুন্দর', 'আততায়ী সূর্যাস্ত', 'অন্তরীক্ষে অরণ্য', 'সান্নিধ্যের আর্তনাদ', 'সনেটগুচ্ছ', 'আলোহীন অন্ধকারহীন', 'অবিনশ্বর দরোজায়', 'হে নীল সমুদ্র হে বৃক্ষ সবুজ', 'দিকচিহ্নহীন', 'ছিন্নভিন্ন কয়েকজন', 'যখন জখম নাগমা', 'বাতাসের কাছে', 'ছায়া ক্রমাগত', 'নিসর্গের সংলাপ', 'পৃথিবী আমার পৃথিবী', 'ক্রমাগত হাহাকার', 'ক্রন্দনধ্বনি' ইত্যাদি। এ ছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর 'আমার নির্বাচিত কবিতা', 'সিলেক্টেড পয়েমস', 'কবিতা সমগ্র-১' ইত্যাদি। বাংলাভাষার কবিদের মধ্যে যাদের কবিতা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁদেরও অন্যতম প্রধান ফজল শাহাবুদ্দীন। কবিতার পাশাপাশি ফজল শাহাবুদ্দীন লিখেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, জীবনস্মৃতি ইত্যাদি। প্রচলিত অর্থে ফজল শাহাবুদ্দীন গীতিকার না হলেও তাঁর দুটি গান বাঙালি শ্রোতার অন্তর জুড়ে আছে; 'চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা/ ভালোবাসো যদি কাছে এসো না' এবং 'আমি যে আঁধারে বন্দিনী আমারে আলোতে ডেকে নাও'; গানদুটি মানুষের কণ্ঠে কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে চলেছে দীর্ঘসময়। আপদমস্তক রোমান্টিক স্বভাবের কবি ফজল শাহাবুদ্দীনের রোমান্টিসিজম কেবল প্রেম ও প্রকৃতি নিয়ে নয়, তাঁর রোমান্টিকতা জীবন ও পরিপার্শ্ব নিয়ে, রোমান্টিকতা তাঁর মৃত্যু নিয়েও। ২০১২ তে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'আমার কবিতা আমার এক দাহ। আমার রমণী যেমন আমাকে দহন ক'রে চলেছে অনন্তকাল ধরে, এও যেন ঠিক তেমনি। আমার প্রকৃতি যেমন আমাকে আশৈশব কেবলি দহন করে চলেছে, এ যেন ঠিক তাই। আমার ক্রমাগত আলো আর ক্রমাগত অন্ধকার আমাকে যেমন অবিনশ্বর এক জ্যোতিতে কেবলি দগ্ধ করে চলেছে অবিরাম, এ যেন ঠিক তাই। আমার মাতৃস্নেহের অন্ধকার বিশাল প্রাসাদে আমি যেমন জন্মলগ্ন থেকেই ডুবে আছি এক অবিচ্ছিন্ন দহনের অবিরাম আগুনে, নতুন শিখার মতো প্রস্ফুটিত হচ্ছি বারংবার, এ যেন সেই দগ্ধ হওয়ার বিশাল অবিশ্রান্ত প্রক্রিয়া, জ্বলে উঠবার একান্ত ত্রিভুবন-প্রসারিত দাহ। আমার কবিতা বাইরে-ভেতরে-আত্মায়-শরীরে-অস্থিতে-মজ্জায় সর্বকালের সর্বগ্রাসী এক দাহ। এ দহনক্রিয়া আমার অজ্ঞাতেই কেমন করে ছড়িয়ে পড়ে আমার রক্তের-মাংশের-ইচ্ছার-বাসনার কল্লোলিত প্রক্রিয়ায়। আর এ চিরকালের দহনের সঙ্গে মিশে থাকে পৃথিবী, সৌরম-ল, অন্তরীক্ষ, ইহকাল আর পরকাল। আমার সঙ্গিনীর মন্থিত স্বভাবে কাম এবং প্রার্থনার যে যুথবদ্ধ সৌরভ তাও কেমন করে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে মিশে থাকে এই একান্ত দহনে। আমি এই কবিতার শরীরে একটি অবিশ্বাস্য আর্তনাদের মতো বেঁচে থাকি চিরকাল। এমন কী মৃত্যুর পরেও।' কবি ফজল শাহাবুদ্দীনকে বুঝতে তাঁর এ কথা কটি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলে অনেকটাই পরিস্কার হয়ে যায়; আর কবিকে বুঝতে তাঁর কবিতা পাঠ তো অনিবার্যভাবেই করতে হবে। প্রেম-কাম-রোমান্টিকতার সহাবস্থান পাঠ করতে আমরা তাঁর অসংখ্য কবিতার সন্ধান পেতে পারি, এখানে একটি কবিতার কয়েকটি পংক্তি উদ্ধৃত করছি–
'দাঙ্গা হাঙ্গামার মতো নির্দয় তীক্ষ্ণ নিষ্ঠুর
পেছন থেকেত ছুরিকাঘাতের মতো বিশ্বাসঘাতক
পর্ণোছবির মতো অকৃত্রিম উত্তেজনাময় উলঙ্গ
অথচ নিবিড় বৃষ্টির মতো শ্যামলিমাক্রান্ত
পিপাসার্ত চন্দ্রিমার মতো সর্বগ্রাসী
সবুজ পাতার সমারোহে আন্দোলিত বাতাসের মতো
কা-জ্ঞানহীন নির্লজ্জ
অপরাহ্নের আকাশের দু'একটি পাখির মতো
নিঃসঙ্গ সুদূর
আপনি আমার একান্ত আস্ত হারামজাদী
সে কথা আপনি জানেন
এবং আরো জানেন আমি আপনাকে ভালোবাসি
আমার রক্তমাখা দুঃশ্চরিত্র আত্মার
ছায়াচ্ছন্ন অভিজ্ঞতা থেকে আমি
আপনাকে ভালোবাসি উপোসী জল্লাদের মতো'

(চন্দ্রিমার মতো; আস্ত হারামজাদী ॥ অন্তরীক্ষে অরণ্য)
কবির জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে কবি ও কাব্যকোবিদ সৈয়দ আলী আহসান দৈনিক ইত্তেফাকে লিখেছিলেন, 'গদ্য তিনি যে লেখেননি তা নয়। লিখেছেন এবং এখনো লেখেন। তিনি যে গদ্য লিখেছেন সে ক্ষেত্রেও লক্ষ করেছি, তাঁর দায়িত্ব কবিতার সেবা করা। কবিতার সমর্থন করা এবং অন্যের কাছে কবিতার ব্যাখ্যা করা এবং সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাছেও। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি কবিতার সমর্থনে বক্তব্য রেখেছেন এবং সৎ কবিতার বিরুদ্ধবাদী যারা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কবিতার সমর্থনে কথা বলাকে তিনি মনে করেন স্বাধীনতার সমর্থনে কথা বলা। তিনি কবিতা নিয়ে আন্দোলন করেছেন এবং তাঁর এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল অনাকাক্সিক্ষত আবর্জনা থেকে কবিতাকে রক্ষা করা।' বাংলাদেশে আধুনিক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ফজল শাহাবুদ্দীন কবিতামগ্ন এক অনিন্দ্য জীবন উদযাপন করেছেন; যে জীবনের বাঁকে বাঁকে তিনি সন্ধান করেছেন সারল্যের উপমা, যে জীবনের ভাঁজে ভাঁজে তিনি সাজিয়ে রেখেছেন কবিতার গভীর বোধের হাহাকার। উত্তীর্ণ কবিতার শরীরে আপন হৃদয়ের স্পন্দন ছড়িয়ে দিতে গিয়ে প্রতিদিন তিনি নিঃসঙ্গ হয়েছেন, একাকীত্ব তাঁকে দংশন করেছে বারবার। প্রেমের সাথে নারীর কামগন্ধ শরীর ফজল শাহাবুদ্দীনের কবিতায় বাক্সময় হয়ে উঠেছে, কিন্তু কখনোই নারীকে স্থুল অর্থে তিনি শরীরী উপস্থাপনায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি। তাঁর কবিতায় পাঠক যেমন গীতলতা খুঁজে পান, তেমনি খুঁজে পাবেন গল্পবলার চমৎকার মুন্সিয়ানাও, তাঁর কবিতার বুনন রীতিতে এমন এক শিল্পশৈলী মিশে থাকে যা তাঁর পাঠককে কখন মোহাচ্ছন্ন করে ফেলে পাঠক তা টের পান না। ফজল শাহাবুদ্দীন-এর নিজেকে নিয়ে লেখা একটি কবিতা পাঠ করলে কবিকে উপলব্ধি করার পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করি।
'আমি ফজল শাহাবুদ্দীন
জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশের অন্যনাম
কবি এবং তারুণ্যের চিৎকারে লেলিহান
আমি ভালোবেসেছিলাম তোমরা জেনে রাখো
ভালোবেসেছিলাম নারী এবং নিঃসঙ্গতাকে
আলস্য এবং আচ্ছন্নতাকে
পুরাণ পুষ্প প্রদীপ পরাগ পাহাড় পতঙ্গকে
নদী নভোম-ল এবং নীহারিকা পুঞ্জকে
আমি ভালোবেসেছিলাম
সন্ধ্যাকে সমুদ্রকে সকালকে সহযাত্রীকে সংসারকে সহধর্মিনীকে
শিশির শৈবাল শীতশরীর শব্দ শক্তি এবং শস্যকনাকে
যৌবনকে যন্ত্রণাকে যৌনতাকে
ভালোবেসেছিলাম
বৃষ্টি বাতাস বোধ বহ্নি বাল্যকাল ব্যর্থতা
বাদলদিন এবং বোদলেয়ার
ভালোবেসেছিলাম একদিন তোমরা জেনে রাখো
জীবন জলকল্লোল জৈবজ্বালা জীবনানন্দকে
ভালোবেসেছিলাম পুষ্পিত পল্লব ব্যাকুল বিহঙ্গ
অনাবিষ্কৃত অরণ্য চঞ্চল চঞ্চু চমকিত চন্দ্রিমা এবং মন্দ্রিত মেঘমালা
আমি ফজল শাহাবুদ্দীন জীবনের পরিপূর্ণ দহনের অন্যনাম
কবি এবং যৌবনের প্রসারিত আনন্দে লেলিহান'

(আমি ভালোবেসেছিলাম)
ফজল শাহাবুদ্দীন-এর কবিতা পড়ে যদি কেউ উদ্ধার করতে চান কবিতার ব্যাকরণ, তা যেমন তিনি সহজেই পেয়ে যান, যদি কেউ জীবনদর্শনের আলো খুঁজে পেতে চান তাও তিনি পেয়ে যেতে পারেন সহজেই। তাঁর কবিতায় সমকাল ও পরিপার্শ্ব, সাধারণের জীবন সংগ্রাম, বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উজান বেয়ে সাঁতার কাটার কষ্ট বিধৃত হতে দেখি। বাংলার প্রকৃতি ও নিসর্গের ছবি তাঁর কবিতার চিত্রকল্পে যতোটা নিপুণ বাকবিন্যাসে বাক্সময় হয়ে ওঠে তা এক কথায় অসাধারণ। কবিতার ভাষা এবং উপস্থাপনশৈলীর স্বাতন্ত্র্যই কবি ফজল শাহাবুদ্দীনকে তাঁর সময়ের অন্য পাঁচজন কালজয়ী কবি থেকে আলাদা করেছে, তাঁকে করেছে সময়ের পরীক্ষায় ভাস্মর।

ফজল শাহাবুদ্দীন, যাঁর জন্ম ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬, এবং প্রয়াণ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪; আটাত্তর বছরের এক বর্ণাঢ্য জীবন তিনি যাপন করেছেন। যে জীবনে তিনি কেবল কবিতায় নয়, সাংবাদিকতায় এবং সংগঠনেও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন আমাদের জন্য। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে যে কেউ নিজের জীবনকে অর্থবহ করে তুলতে পারেন। কবিযশাকাক্সিক্ষ যে কোনো তরুণ নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারেন কবিতার মহারণের সৈনিক হিসেবে। ফজল শাহাবুদ্দীন-এর রোমান্টিকতা যে কোনো পাঠকের সংবেদনশীল অন্তর স্পর্শ করার সামর্থ রাখে এবং এ কারণেই ফজল শাহাবুদ্দীন নিরন্তর চলমান।