২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা! মথুরা শিশুকানন সোসাইটির উদ্যোগে শিশু প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিশুদের উৎসাহ প্রদানের জন্য সোসাইটির সভাপতি কাজল সরকার (প্রয়াত – ১১ অক্টোবর, ২০১৪) গুণীজনদের সংবর্ধনার ব্যবস্থা করতেন। এবারের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি নির্বাচিত হয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী। কাজল সরকার চিন্তা করতেন বর্তমান শিল্পী থেকে যার একসময় বিখ্যাত ছিলেন তাদের সংবর্ধনা দেওয়া। সংগীতে অনেকের সাথেই যোগাযোগ করে তাদের সময় না হওয়ায় বিষয়টি গড়ল আমার উপর। তখন নাটক লেখার খ্যাতিরে আমার রেডিওতে বেশ বিচরন চলছিল। সেখানে গীতিকার মো. রফিকুল ইসলাম ইরফান ওনার সাথে এই বিষয়ে কথা বললে উনি বললেন ফরিদা আপাকে নেওয়া যায় কিনা ভেবে দেখ।
আমি বললাম, হ্যাঁ ফরিদা পারভীন হলে তো খুবই ভালো হয়।
উনি আমার ভুল সংশোধন করে বললেন ফরিদা ইয়াসমিনের কথা। আসলে সত্যি কথা বলতে তার আগে আমি উনার নাম শুনেছিলাম কিনা জানি না।
যাই হোক, সংগীত পরিচালক আব্দুল আউয়াল সাহেব ফরিদা ইয়াসমিনের সাথে যোগাযোগ করলেন। আমি এবং রফিকুল ইসলাম ইরফান গেলাম উনার বাসায়। গেট দিয়ে ঢুকতেই আমাকে অবাক হতে হল উনার আন্তরিকতা দেখে। উনি নিজেই এসে দরজা খুললেন।
আমাদের বসতে দিয়ে মিষ্টি এনে বললেন ,"আগে মিষ্টি খাও, পরে কথা বলা যাবে। "
সেই দিন আমাদের ম্যাগাজিনের জন্য উনার যে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলাম তা না জানলেই অনেকেই বঞ্চিত থাকবেন আমাদের ফরিদা ইয়াসমিন সম্পর্কে।
নাম: ফরিদা ইয়াসমিন,
পিতা: লুৎফর রহমান
নানা: জনাব আব্দুস সামাদ মুর্শিদাবাদী (সংগীতের পেছনে নানার অনেক অবদান বিধায় তার প্রতি উনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন)
মাতা: মোছা. মৌলুদা খাতুন
জন্ম: ৩ রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৪০ সাল।
জন্মস্থান: মুর্শিদাবাদ (নানার বাড়ি)
স্বামী: কাজী আনোয়ার হোসেন
সন্তান: ১. কাজী শাহীনূর হোসেন,
২. কাজী মাইনূর হোসেন,
৩. শাহরীন সোনিয়া।
লেখাপড়ায় হাতেখড়ি – সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স হাই স্কুল (কলকাতা)
সংগীতে হাতেখড়ি – শ্রী দূর্গা প্রসাদ রায় (সেতার শিল্পী) ২ / ৩ বছর শিখেছিলেন
এর পর ওস্তাদ মতিন মিয়া (আসাম, শিলং)
প্রথম গান করেন – ১৯৫৮ সালের ১৪ এপ্রিল দুপুর ১:০৫ মিনিটে নতুন শিল্পীদের আসরে।
গানটি ছিল: তোমার পথে কুসুম ছড়াতে এসেছি – লিখেছিলেন কবি আজিজুর রহমান।
তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন: ১৯৬২ সালের ১৯ জুলাই;
কাকতালীয়ভাবে ঐ দিন কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্মদিন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্রের গান: রাজধানীর বুকে – ফুলের হাওয়া লাগে বনে …………
রাজা এলো শহরে – তুমি জীবনে মরণে আমায় ………..
চান্দা (উর্দু) – সাইয়া বি দরদী ………
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তিনি চলচ্চিত্রের গান ছেড়ে দেন।
তাঁর প্রিয় খাবার : রস মিষ্টি
প্রিয় রং: লাল।
প্রিয় ব্যক্তিত্ব: মা।
স্বীকৃতি পেয়েছেন: ২০০৩ সালের জাতীয় পুরস্কার।
চলে যাওয়ার কোন রূপ নেই। তবে স্মৃতির রূপ আছে। তাঁর রেখে যাওয়া কাজ আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে শিল্পী হওয়ার।
আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।