তাদের ঈদ কিভাবে মোবারক হবে?

তানভির-- আজব দেশের বাসিন্দা
Published : 20 August 2012, 10:26 AM
Updated : 20 August 2012, 10:26 AM

ও মন রমজানের ওই রোজার ঈদের শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শুন আসমানি তাগিদ

তোর সোনাদানা বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত মুর্দা মুসলিমে আজ,ভাঙ্গাইতে নিদ

আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন,সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।

আজ ভূলে যা তোর দোস্ত দুশমন হাত মিলাও হাতে।
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্বনিখিল ইসলামে মুরিদ

যারা জীবন ভরে রাখলে রোজা নিত্য উপবাসী
দে গরীব এতিম মিসকিনেদের যা কিছু মফিদ

ঢাল হৃদয়ে তোর তশতরিতে শিরণি তৌহিদের
তোর দাওয়াত কবুল করবেন হযরত হয় যেন উমিদ

তোরে মারলো ছুড়ে জীবন ভরে ইট পাথর যারা
সেই পাথর দিয়ে তোলরে গড়ে প্রেমেরই মসজিদ

গানটি যতবার শোনা যায় ততবারই ভাল লাগে । কিন্তু সবার কি শুনতে ভাল লাগছে আজ ?

সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তে ডেসটিনির সাথে জড়িত প্রায় তিন হাজার কর্মচারী ও প্রায় ৪৫ লক্ষ পরিবেশকের পরিবারের কেমন কাটছে ঈদ ? যেসব কর্মচারী বিগত চার মাস যাবত বেতন পাচ্ছে না, ঈদের বোনাসও পায়নি, ডিস্ট্রিবিউটররা কমিশন পাচ্ছে না, তাদের ঈদ কেমন কাটার কথা ? ৪৫ লক্ষ পরিবেশকের পরিবার সহ প্রায় ২ কোটি মানুষ আজ শুধুমাত্র একটি প্রহসনের শিকার হয়ে ঈদ করতে পারলো না ! সরকার বাহাদুর কি শুনতে পাচ্ছেন ঈদের দিনে তাদের দীর্ঘশ্বাস ? শুনতে না পাওয়ারই কথা । কারন রফিকুল আমীন গত ১ মাস যাবত চিৎকার করে সরকারের প্রতি অনবরত বলেছেন যে ডিস্ট্রিবিউটরদের ও কর্মচারীদের অন্তত ঈদ করতে দিন । ডেসটিনির আরো চারমাস কর্মচারীদেরকে বসিয়ে বেতন দেয়ার সামর্থ্য আছে । ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তাদেরকে শুধু বেতন-বোনাস দিয়ে দিতে দিন । তারা তো কোনো দোষ করেনি ??

কর্মচারীরা, ডিস্ট্রিবিউটররা সংবাদ-সম্মেলন, মানববন্ধন করে বলল তারা কেউ প্রতারিত হয়নি, বরং ডেসটিনির মাধ্যমে তারা স্বনির্ভর হয়েছে । কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হোক । ডেসটিনির বিরুদ্ধে ডেসটিনির সাথে সংশ্লিষ্ট কারো এমনকি বাইরের কারোরও কোনো অভিযোগ নেই, শুধুমাত্র একটি উদ্দেশ্যমহলের মিডিয়ায় অপপ্রচার ছাড়া !! তাই দেশের সকল মানবাধিকার সংস্থা প্রধানমন্ত্রী বরারর আবেদন জানালো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অন্তত খুলে দিয়ে কর্মচারী ও ডিস্ট্রিবিউটরদের ঈদ পালন করার অন্তত সুযোগ দিতে । কিন্তু সরকার বাহাদুর কি কারনে কিছুই শুনলেন না তা কারোরই বোধগম্য হল না । এমনকি সরকার বাহাদুর একবার কারন বলার-ও প্রয়োজন বোধ করেনি !!

সরকার এটি করে কেমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ? ঈদের দিন সকালে যখন টিভিতে প্রধানমন্ত্রী জনগণের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের চটকদার নাটকটি মঞ্চস্থ করবেন তখন তা দেখে কতটুকু আনন্দ পাবেন সেই সব ঈদ বঞ্চিত লাখো মানুষ ?

আজকে সবাই যখন নতুন জামা পরে বাইরে ঘুরতে যাবে, তখন ঐ ছেলে মেয়েগুলো, যাদের ঈদে ভাল খাবার জোটেনি, যাদের শরীরে নতুন জামা উঠেনি,যাদের অসহায় বাবার পক্ষে সম্ভব হয়নি ঐ অবুঝ ছেলে-মেয়েগুলোর মুখে খাবার তুলে দেবার,নতুন জামা কিনে দেয়ার, ঐ অসহায় পরিবারের সন্তানগুলো একবুক কষ্ট চেপে রেখে দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে তাদের পাড়ার তাদেরই খেলার সাথীরা নতুন জামা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চাপা কান্নার তীব্র গতি ওই ছোট্ট ছেলেমেয়েগুলোর কোমল মনকে নিদারুণভাবে নাড়া দেয় তখন। এই পৃথিবীর নিষ্টুরতা তাদের অবুঝ মনে ভয়ংকরভাবে আঘাত হানে ।

যারা একটু বড় হয়ে গেছে,তারা তাদের বাবার অপারগতা বুঝে নিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নেয়। তারা ভাবে,এই পৃথিবীর সব আনন্দ সকলের জন্য নয়। যারা খুব ছোট্ট,তারা ঘুরঘুর করতে থাকে বাবা-মা'র আশেপাশে। লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকায় বাবার দিকে। আবদারের সুরে জিজ্ঞেস করে,''বাবা, আজ তো ঈদ,সবাই নতুন কাপড় পরেছে। আমাদের কি নতুন জামা পরা হবেনা? বাবা,সবার ঘরে ফিন্নি সেমাই রান্না হয়েছে,গোশত রান্না হয়েছে,আমরা কি আজ সেমাই খাব না? আমাদের ঘরে কি গোশত রান্না হবে না…?

এই অবস্থায় ওই অসহায় ''বাবা' লোকটির পক্ষে আর স্বাভাবিক থাকা সম্ভব হয় না। দু'চোখ বেয়ে নেমে আসে অসহায়ত্বের কান্না । নিজেকে একজন ব্যর্থ পিতা হিসেবে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হয়। বিপর্যস্ত সেই বাবাগুলো মানসিক যন্ত্রণার তীব্র দাবদাহে জ্বলতে থাকে। বিধ্বস্ত অন্তরে অপারগতার গ্লানি কাধে নিয়ে তাঁরা তাকিয়ে থাকে খোলা আকাশের দিকে। খুঁজে বেড়ায় একটু ভরসা অথবা লুকানোর মত একটু জায়গা !!!

আসুন আমরা সিদ্ধান্ত নিই এবারের ঈদ ডেসটিনির ৪৫ লাখ ডিস্ট্রিবিউটর মিলে ভাগাভাগি করে নেব। আমরা প্রমাণ করে দেব ডেসটিনির ডিস্ট্রিবিউটরদের মাঝে চমৎকার একটি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার আবেগী সম্পর্ক রয়েছে। ঈদ সকলের,সুতরাং ঈদের আনন্দ সবাইকে সমানভাবে উপভোগ করার সুযোগ করে দেব। আমরা কি পারিনা এমন অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত মাধুর্যে পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ? নাহলে তাদের ঈদ কিভাবে মোবারক হবে ? তাদের ঈদ মোবারক না হলে আমাদের ঈদ কিভাবে মোবারক হবে ?