একজন মানবপ্রেমি মানুষের গল্প

তানজির খান
Published : 13 July 2015, 06:31 PM
Updated : 13 July 2015, 06:31 PM

'জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর' স্বামী বিবেকান্দের এই বাণী প্রতিফলিত হয়েছে একজন সাদা মনের মানুষের মাঝে। বাদশা আলম খান (বাচ্চু), পাবনা জেলার দুবলিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত খান পরিবারে জন্ম, খুব ছোটবেলা থেকেই সংসারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তাই আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সেভাবে নেয়া হয় নাই।তিনি শিক্ষা গ্রহন করেছিলেন প্রকৃতির কাছে থেকে আর তার মরহুম পিতা জব্বার আলী খান এর কাছে থেকে। তার পিতা ছিলেন একাধারে কবি,দার্শনিক ও সখের ভেষজ চিকৎসক। বাদশা আলম খান জীবনের খুব শুরুতেই পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। পিতার কাছেই শিখেছিলেন মানব প্রেম। পিতার কাছে থেকেই তিনি দীক্ষিত হয়েছিলেন সৎ, সত্য,সতাতা আর হালাল রুযীর মন্ত্রে। বড় গৃহস্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় পেশা হিসাবে কৃষি কাজকেই বেঁছে নিয়েছিলেন। জীবন সংগ্রাম খুব কাছে থেকে দেখেছেন। সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিয়ে নিজের সংগ্রামী অস্ত্বিতের জানান দিয়েছেন। জীবনের এত দাবীর মাঝেও নিজে মানব সেবায় ব্রত হয়েছেন। বৃক্ষ প্রেমী এই সাদা মনের মানুষ আশেপাশের প্রায় সকল জায়গায় যেখানে মানুষের বিশ্রাম নেয়ার জন্য কোন আশ্রয় নেই সেখানে বটবৃক্ষ রোপন করেছেন।গত ত্রিশ বছর ধরে তিনি বট বৃক্ষ রোপণ করে চলেছেন। এখন এসব বটবৃক্ষ মহীরুহ হয়ে উঠেছে। বিশাল ছায়া বিস্তৃত এইসব বট বৃক্ষের নীচে চলতি পথের পথিক বসে বিশ্রাম নেয়,কৃষকেরা মাঠে কাজ করে এসে এখানে বিশ্রাম নেন এবং দুপুরের খাবার খান। বটবৃক্ষের কাছে গেলেই দেখা যায় কেউ না কেউ বিশ্রাম নিচ্ছেন। কখনও দেখতে পাওয়া যায় গল্পে মশগুল হয়ে আছেন সমাজের নানান স্তরের মানুষ।আশেপাশে কোন বাড়ী-ঘর না থাকায় বৃষ্টির সময় অনেক পথিক দৌড়ে আসে বটবৃক্ষের নীচে। শীতের সময় সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পাখি এসে আশ্রয় নেয় এসব বৃক্ষের পত্র পল্লব আর শাখা প্রশাখায়। নানান রঙের পাখির কলরবে মেতে উঠে সবুজ পত্র পল্লব। এভাবেই সবার নিরব ছায়া শীতল আশ্রয় হয়ে উঠেছে এসব বটবৃক্ষ। তিনি এসব বৃক্ষ রোপণ করেছেন দুবলিয়া গ্রামের পশ্চিম পাশে শহীদ সাত্তার সড়কের তিন মাথা মোড়ে,দুবলিয়া বাজারের পূর্বপাসে কলেজের সামনে, দুবলিয়া গার্লস স্কুল সংলগ্ন পাবনা-সুজানগর সড়কে, পাবনা জেলার ফারাতপুর গ্রামে, পাবনার সবচেয়ে বড় হাট 'হাজীর হাট' সংলগ্ন রাস্তায়, সুজানগর থানার অন্তর্গত চিনাখরা গ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানে।

ছবি ক্যাপশন: বটবৃক্ষ – দুবলিয়া শহীদ সাত্তার সড়কে তিন মাথা মোড়

ছবি ক্যাপশন: ফারাতপুর গ্রামে বট বৃক্ষ

এছাড়াও তিনি বিভিন্ন দূর্লভ ঔষধি গাছ রোপন করেছেন নিজের বাগানে। যেসব ঔষধি গাছ নানান চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। দূর দূরান্ত থেকে এসব গাছের খোজে অনেকে আসেন যাদেরকে তিনি বিনামূল্যে ঔষধি গাছ দিয়ে থাকেন।তিনি নিজেও অনেক সময় ঔষধি গাছ থেকে ঔষধ তৈরী করেন যা বিনা মূল্যে রোগীদের মাঝে বিতরণ করেন।

বাদশা আলম খান এর কাছে জানতে চেয়েছিলাম এমন ব্যাতিক্রমী কাজে কেন উদ্বুদ্ধ হলেন।তিনি জানালেন 'আমি গাছ ভালবাসি। লোকে যখন গাছের ছায়ায় বসে তখন আমার খুব ভাল লাগে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এসে বিভিন্ন চিকিৎসায় ঔষধি গাছ নিলে তাদের উপকার হয়। মানুষের উপকার হলে আমারও ভাল লাগে'।তিনি জানালেন বাকী জীবনেও তিনি এইভাবে মানব সেবায় নিয়োজিত থাকবেন।

এমন ভাবে আমাদের সমাজে এখনো নিরবে প্রাদ-প্রদীপের আলোর বাহিরে নিভৃতে মানব সেবায় নিয়োজিত আছেন বাদশা আলমের মত মানুষেরা। যাদের উপর নাই এই সমাজের লাইট, ক্যামেরার ফোকাস তবুও আপন মনে মানব সেবায় নিয়োজিত আছেন বাদশা আলমরা।আমরা আশাকরি এমন বাদশা আলম গড়ে উঠবে বাংলাদেশের প্রতিটা অঞ্চলে এবং প্রতিটা ক্ষেত্রে। এইভাবে মানব সেবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা সবাই যদি এগিয়ে আসি তবে পৃথিবী গ্রহটা হয়ে উঠবে শান্তিময়।

তানজির খান
কবি ও ব্লগার
tanzirrkhan@gmail.com