বেহাল রাস্তায়,অর্থনীতিতে ভাটা পড়ে সস্তায়

তানজির খান
Published : 29 August 2015, 05:59 PM
Updated : 29 August 2015, 05:59 PM

সারাদেশের রাস্তা ঘাটের সাথে পাবনা – নাজিরগঞ্জ-কাজীর হাট রোডের অবস্থাও বেহাল হয়ে পড়েছে। পাবনা জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলোর মধ্যে পাবনা- নাজিরগঞ্জ-কাজীর হাট সড়ক টি অন্যতম। সড়কটির দৈর্ঘ প্রায় ৬০ কিলোমিটার। মূলত পাবনা শহর থেকে কাজীরহাট যাবার রাস্তা দুটি। একটি পাবনা শহর থেকে কাশিনাথপুর হয়ে কাজির হাট গিয়েছে,অন্যটি পাবনা শহর থেকে সুজানাগর-নাজিরগঞ্জ হয়ে কাজীর হাট পৌঁছেছে।আগে এই সড়ক দুটি উত্তরবঙ্গের সাথে সমগ্র বাংলাদেশকে একত্রীত রাখতে প্রধান ভূমিকা রাখতো।প্রায় ৬০ কিলোমিটারের এই সড়ক টি পাবনার স্থানীয় অর্থনীতি ও জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে।গণ পরিবহন,পন্য পরিবহন তথা সামগ্রীক বাণিজ্যে সড়ক টি বিকল্প রাস্তা হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই।সড়কটি এখন স্থানীয় জনগন ও ব্যবসায়ী, ঢাকা যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের বিকল্প রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করে আসছে।পণ্য পরিবহনের খরচ অনেকাংশে কমে যায় এই সড়ক টি ব্যবহারে ফলে । যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করে। কাজীর হাট ঘাট দিয়ে ফেরি হয়ে আরিচা ঘাট রুটে প্রতিদিন অসংখ্য ব্যবসায়ী নানান পণ্য নিয়ে আসছে ঢাকার বাজারে, পরবর্তিতে যা সরবরাহ হচ্ছে সমগ্র দেশে। বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে কার্যকারী ভূমিকা রাখছে পাবনা – নাজিরগঞ্জ-কাজীর হাট সড়ক। অন্যদিকে যে সকল পণ্য ঢাকা থেকে পাবনার স্থানীয় বাজারে প্রবেশ করে সেগুলোও সহজেই বাজারে প্রবেশ করতে পারছে এই বিকল্প সড়ক দিয়ে। যা অর্থনীতির ভারসম্য রক্ষায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। একটি অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হলে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে করতে হয় নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ। উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে আজ আমরা যে গতি দেখি তা ১৯৯৭ সালের আগে ছিলনা। যমুনার সেতুর উপর ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তাই বলে বিকল্প পরিবহনের রাস্তা অবহেলা করা মোটেই অর্থনীতির জন্য শুভ নয়। এছাড়াও ভাঙা রাস্তার কারনে দিনদিন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠছে দূর্বিষহ। 



প্রায় ৬০ কিলোমিটার এই সড়কের পাসে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী হাজীর হাট,যেটা পাবনার বৃহত্তর বাণিজ্যিক কেন্দ্র। কেউ কেউ একে উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর পণ্যের বাজার হিসাবেও বিবেচনা করে থাকে। এটি মূলত পশুর হাট হলেও সব ধরণের পণ্য এখানে ক্রয়-বিক্রয় হয়। শুধু পাবনার স্থানীয় পণ্য নয় ,এখানে আশেপাশের জেলা থেকেও পশু ও কাঁচা পণ্য আসে। কৃষকের ন্যায্য মূল্য পাবার জন্য যে ধরণের বড় বাজার দরকার, সেই প্রয়োজন, এই হাটের মাধ্যমে পূরন হয়। 

সড়কটির পাসেই রয়েছে পাবনার ঐতিহ্যবাহী, দোগাছি ইউনিয়ন, কাপড় শিল্প। এখানে লুঙ্গী,গামছা ও নানান কাপড় বুনন হয়ে থাকে। এসব পণ্যের বাজার রয়েছে সারা দেশে। সমগ্র বাংলাদেশেই পাবনার লুঙ্গী ও গামছার কদর রয়েছে। এসব পণ্যের বেশীর ভাগই এই সড়কের মাধ্যমে ঢাকা হয়ে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। 


পাবনার অন্যতম প্রধান এই সড়কটির পাসে অবস্থিত দুবলিয়া বাজার ও হাট, যে হাট শতবর্ষী। এখানেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। দুবলিয়াতে বিখ্যাত মেলা হয়ে থাকে। যার উপর এই অঞ্চলের অর্থনীতি নির্ভর করে। এই বাজার আশেপাশের গ্রামের একমাত্র বাণিজ্যিক কেন্দ্র।

এর পরেই আছে সুজানাগর উপজেলা। সুজানগর একটি মফঃস্বল শহর। এখানে যথাযথ কারনেই বাণিজ্য গড়ে উঠছে বহুকাল আগে থেকেই। অর্থনীতিতে গতি এসেছে বিভিন্ন প্রকার ব্যবসা গড়ে উঠার ফলে। সুজানগরে অনেকগুলো মান সম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যা এই রাস্তার পাসেই অবস্থিত। দূর-দুরান্ত থেকে ছেলে-মেয়ে লেখা পড়া করবার জন্য এখানে আসে। 


সুজানগর পেড়ুলেই সাতবাড়িয়া ও নাজিরগঞ্জ অবস্থিত । নাজিরগঞ্জে পদ্মা নদীর পাসে রয়েছে একটি নৌ ঘাট। এই ঘাটের মাধ্যমেই রাজবাড়ীর সাথে পাবনার যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। দীর্ঘ ৬০ কিলোমিটার রাস্তা নাজিরগঞ্জ হয়ে পৌঁছেছে কাজীর হাট ঘাটে। যেখান থেকে ফেরির পারাপার হয়ে আরিচা আসতে হয়। 

তাই বলা যায় যে এই রাস্তা সাধারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়িয়ে সামগ্রীক অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ভর করছে এই সড়কের উপর। সড়ক টি ভেঙে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিদিন এই রাস্তার কোথাও না কোথাও কোন না কোন যানবাহন দূর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এই সড়কের উপর নির্ভরশীল বিশাল জনগোষ্ঠী সড়ক টি'র সংস্কারের জন্য সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করছে।

তানজির খান

tanzirrkhan@gmail.com

ছবিঃ টুটুল খান