কৃষ্ণচূড়া আড্ডাঃ কৃষ্ণচূড়ায় মেতে আছে পথিক আর পথ, সঙ্গে জারুল আর সোনালু ফুলেল নগর রথ

তানজির খান
Published : 7 May 2016, 08:38 PM
Updated : 7 May 2016, 08:38 PM

গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই।বসন্ত পেরিয়ে গেছে আমাদের ব্যস্ত জীবন ঘুরে।জীবনের রঙ কি এবার কিছু মলিন হয়ে এলো? না,আমাদের চেনা পথগুলো এখন কৃষ্ণচূড়া,রাধাচূড়া,কনকচূড়া আর সোনালুর রঙে সেজেছে। বসন্তের শেষেই ফুলেফুলে সেজে উঠে কৃষ্ণচূড়া,রাধাচূড়া,কনকচূড়া। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়া তার রূপে আমাদের সবাইকে বিমোহিত করে রাখে। তার লাল আভায় জগত রাঙিয়ে দেয়। দূর থেকে দেখে মনে হয় কৃষ্ণচূড়া নয় এ যেন মায়াবী কোন অপ্সরী দাঁড়িয়ে আছে। কাছে এলে মনে হয় জীবনান্দের বনলতা সেন। তার ছায়ায়,রঙে দুদণ্ড শান্তির পরশ পেতে মন যেন আর মানেনা। পথের ধারে কৃষ্ণচূড়ার দেখা পেলে সারা জীবন যাযাবর পথিক হয়ে থাকতেও যেন কোন আপত্তি নেই। নগর জীবনে প্রশান্তি এনে দেয়া ফুলগুলো তপ্ত দুপুরে শীতল হাওয়ার মত।চোখে পড়লেই হৃদয় যেন ঠাণ্ডা হিম হয়ে আসে।

কখনো কখনো কৃষ্ণচূড়া,রাধাচূড়া,কনকচূড়া নিয়ে দ্বিধায় পরে যাই আমরা।

কৃষ্ণচূড়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Delonix regia।এটি Fabaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ । কৃষ্ণচূড়া গাছে শীতে পাতা ঝরে পরে। গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত নিষ্পত্র থাকে এবং নিষ্পত্র গাছেই ফুল ফুটতে শুরু করে।  কৃষ্ণচূড়া গুলমোহর নামেও পরিচিত।

রাধাচূড়া কৃষ্ণচুড়ার মত দেখতে হলেও হলুদ-লাল মিশ্রণের এই ফুলটির নাম রাধাচূড়া। তবে কি কৃষ্ণচুড়ার প্রেয়সী রাধাচূড়া? রাধাচূড়ার আরও অনেক নামের মাঝে রত্নগণ্ডি, সিদ্ধেশ্বর, গুলেটুর নাম গুলো বেশি শোনা যায়। Peacock Flower বা Red Bird of Paradise নামে পরিচিত এই ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম Caesalpinia pulcherrima। স্বভাবে ক্রিস গেইলের মত এই গাছটির আদি নিবাসও ঐ একই দেশে, ওয়েস্ট-ইন্ডিস। যদিও ভারত উপমহাদেশের সর্বত্র দেখা যায় গাছটি।বাগানে এবং রাস্তার ধারে শোভাবর্ধনের জন্য গাছটি লাগানো হয় থাকে। ফুল কখনো হলুদ কখনো লাল কখনোবা লাল হলুদের মিশ্রণ।

কনকচূড়া (বৈজ্ঞানিক নাম peltophorum pterocarpum) লেগুমিনোসি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত উদ্ভিদ। এটি চারপাশে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়ে বেড়ে ওঠে। গাছ ও পাতার আকৃতি কৃষ্ণচূড়াগাছের মতোই। কনকচূড়ার শীতের শেষভাগে পাতা ঝরে যায়। গ্রীষ্মে নতুন কচি পাতা আর ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। ফুলে পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি ও পাপড়িগুলো কুঞ্চিত। ফুল ফোটে শাখার ডগার লম্বা মঞ্জরিতে। কনকচূড়ার ফুল উজ্জ্বল কমলা রঙের ও সুরভিময়, দূর থেকে হলুদ দেখায়।

সোনালু গ্রীষ্মের আরেক দীপ্তি ছড়ানো ফুল। এর গাছ আকারে তেমন বড় নয়। সোনালু ফুটতে শুরু করে বৈশাখের শুরু থেকেই। কাঁচা সোনার রঙে সজ্জিত হয় পুরো গাছ।ফুল ফুটলে খোলা নীল আকাশের নীচে যেন আগুন লেগে থাকে সাড়া গাছ জুড়ে।

এইসব তাত্ত্বিক কথাগুলো ফুলগুলোকে কতটুকুই বা প্রকাশ করতে পারে? কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কনকচূড়া, সোনালু ফুলগুলোর সাথে আমাদের জীবনের কত বিশেষ স্মৃতি জড়িয়ে থাকে! কখনো কখনো এক একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ হয়ে থাকে কালের সাক্ষী, জীবন্ত ইতিহাস।

"এই সেই কৃষ্ণচূড়া
যার তলে দাঁড়িয়ে
চোখে চোখ হাতে হাত
কথা যেত হারিয়ে"

বিখ্যাত একটি বাংলা গানের কয়েকটি লাইন । এই গানে বেদনা মিশে থাকলেও, কৃষ্ণচূড়া যে একদিন সোনালি দিনের নিত্য সঙ্গী ছিল তা প্রতিয়মান। কৃষ্ণচূড়া, জারুল,সোনালু ফুলের কথা মনে পড়লেই মনে আসে ফেলে আসা অতীতের কথা। রাবি চত্ত্বরে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছ গুলো হৃদয়ে মনের মানুষের মত জেগে আছে, থাকবে আজীবন।  কাজলা গেটে আছে সোনালু,জারুল।আহ কত রঙিন সব স্মৃতি! আমি নিশ্চিত আপনাদের ক্যাম্পাসো  কৃষ্ণচূড়াময় ছিল, ছিল কৃষ্ণচূড়ার সাথে হাজারো স্মৃতি। আমাদের শহুরে জীবনেও যেটুকু সাবলীল সজীবতা আছে তার অনেকখানি জুড়ে আছে গ্রীষ্মের কৃষ্ণচূড়া,রাধাচূড়া,কনকচূড়া আর সোনালু ফুল।

ব্লগে প্রতিবছরই কৃষ্ণচূড়া আড্ডা হয় জেনেছি।আমার সুযোগ হয়নি কখনও সেই সব রঙিন মূহুর্তে উপস্থিত থাকার। এবার সেই আকাঙ্খা পূরণ করতে চাই।আমরা সবাই একত্রিত হয়ে একটি বিকেল আমাদের করে রাখতে পারি কৃষ্ণচূড়ার সাথে। গল্প,আড্ডা,কবিতা,ছবি তোলা নিয়ে নির্ভেজাল আড্ডা কি দিতে পারিনা এবারো? কৃষ্ণচূড়ার রূপের সাথে সঙ্গী হতে পারে ফুচকা, চটপটি, আইসক্রিম, চিপস, বাদাম, ঝালমুড়ি (আমাদের হৃদয়বান ব্লগাররা নিশ্চিত এ দায়িত্ব নিতে দ্বিধাবোধ করবেন না)।

=================================================

তারিখ: শুক্রবার, ১৩ মে, ২০১৬
সময়: ৩:৩০ মিনিট
চন্দ্রিমা উদ্যান  
লেকের উপরে ঝুলন্ত ব্রীজের উপর আমরা প্রথমে সমবেত হতে পারি
=======================================================

আগামি ১৩ মে শুক্রবার কৃষ্ণচূড়া আড্ডার জন্য উপযুক্ত একটি দিন।ঢাকা শহরে চন্দ্রিমা উদ্যান কৃষ্ণচূড়ার হৃদয় গ্রাস করা রূপ দেখার সবচেয়ে ভাল জায়গা মনে হয়।সংসদ ভবন ও চন্দ্রিমা উদ্যানের মাঝের রাস্তা দিয়ে কখনও কেউ যেতে নিলে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া দেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকবেন না তা হতেই পারেনা।একবার কোন এক বৃষ্টির দিনে এই রাস্তাতে সিএনজিতে যাচ্ছিলাম। বৃষ্টিতে ভেজা ফুলগুলো যে কতটা হৃদয়গ্রাহী হতে পারে যে দেখেনি সে কোন দিনই বুঝবে না। যদিও আমাদের আড্ডার দিন বৃষ্টি প্রত্যাশা করছি না।

কৃষ্ণচূড়া আমার মনে বিশেষ স্থান নিয়ে আছে তার সৌন্দর্যের জন্য নয় শুধু, বরং আরো কিছু কারনে! আপনাদের মনে কেন বিশেষ হয়ে আছে তা জানতে চাই। চলুন তাহলে কৃষ্ণচূড়ায় মেতে উঠি আগামি ১৩ মে শুক্রবার ৩.৩০ মিনিটে চন্দ্রিমা উদ্যানে।

আসছেন তো? না করবেন না কিন্তু!

***
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া