ICETCESD2012-Online Discussion…আজকের বিষয়:Coastal Engineering

সাঈদ তাশনিম মাহমুদ
Published : 4 March 2012, 05:52 AM
Updated : 4 March 2012, 05:52 AM

শাবিপ্রবিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া International Conference এবং গত ১৩ই ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হয়েছে সেই অনলাইন আলোচনা। চলুন এই আলোচসায় অংশ নিয়ে নিজের মতামতকে সিদ্ধান্তে পরিনত করি।
আজকের বিষয়: Coastal Engineering
এই লেখাটি তৈরী করেছেন।: মোঃ কামরুল হাসান, ১৩তম ব্যাচ, সিইই বিভাগ, শাবিপ্রবি

আমাদের দেশে নদী ভাঙ্গনের ফলে হাজার হাজার মানুষ হারাচ্ছে তাদের বসত ভিটা। কমে যাচ্ছে আমাদের দেশের মোট আয়তন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড বঙ্গোপসাগর থেকে ভুমি উদ্ধারের মাধ্যমে দেশের পরিধি বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। সুধুমাত্র দেশের দক্ষিন ও পূর্ব উপকুলাঞ্ছলে প্রতি বছর প্রায় ৩৬ বর্গকিলমিটার নতুন জমি মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। বিগত ৫০ বছরে প্রাকৃতিকভাবে বঙ্গোপসাগরের বুকে প্রায় ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার নতুন ভুমি জেগে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে ভুমি উদ্ধার করা সম্ভব হলে দেশের মানচিত্র খানিকটা লম্বালম্বী হয়ে যাবে। উপকুল দক্ষিন দিকে বেড়ে যাবে।
ব্রাহ্মপুত্র, মেঘনা ও গঙ্গা এই তিন নদী দিয়ে বছরে প্রায় ১.৫ থেকে ২ বিলিয়ন টন পলি বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে পরিবাহিত হচ্ছে। এই পলি ভারত মহাসাগর হয়ে শ্রীলংকার পূর্বদিকে গিয়ে জমা হয়। পানি বিশেষজ্ঞ ডঃ আইনুন নিশাত বলেছেনঃ এই পলি যদি কোন ভাবে ধরে রাখা সম্ভব হয় তাহলে প্রতি বছর হাতিয়া বা সন্দীপের মত ৩ থেকে ৫ টি করে দ্বীপ গড়ে তোলা সম্ভব।
জেগে উঠা চরগুলোতে বর্তমানে একটি ফসল হচ্ছে। চতুর্দিকে বেড়িবাঁধ দিলে সেখানে তিনটি ফসল হবে। তবে এই জমির পূর্ণাঙ্গতা পেতে ৮/১০ বছর সময় লাগবে। এই তথ্য জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রাহমান।
বঙ্গোপসাগর থেকে ভুমি উদ্ধার করতে উন্নত প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত পদ্ধতি অবলম্বন করলে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুন ভুমি উদ্ধার করে দেশের পরিধি বাড়ানো সম্ভব। জেগে উঠা ভুমি পরিকল্পিত ভাবে উর্বরা করে তোলার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে জেগে উঠা জমিতে কৃষি কাজ, বনায়ন ও মাছ চাষের জন্য উর্বরা করে তুলতে ব্যর্থ হলে নতুন এই সম্পদ জনকল্যাণে কোন কাজে আসবে না।
ডঃ আইনুন নিশাত জানিয়েছেন , প্রায় চল্লিশ বছর আগে নয়াখলী সোনাপুরের দক্ষিন দিক থেকে গিয়ে উত্তর হাতিয়ার উপর দিয়ে সন্দীপ চ্যানেলে প্রবাহিত হত বমানি নদী। এটি ক্রমশ ভরাত হতে শুরু করে। পঞ্চাশের দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ক্রসড্যাম নাম্বার ওয়ান এবং ক্রসড্যাম নাম্বার টু নির্মাণ করে উত্তর হাতিয়া দেশের মূল স্থলভাগের সাথে যুক্ত করা হয়। এ কারনে সেখানে বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড জেগে উঠে। সুবর্ণগ্রাম নামে এখন সেখানে নতুন একটি থানা। এগুলোর প্রভাবে বামনী নদীর প্রবাহ সন্দীপ চ্যানেল থেকে আরেকটু পশ্চিম দিকে সরে আসে হাতিয়া এবং সন্দীপের মাঝামাঝি। বর্তমানে এটি আরো পশ্চিমে সরে হাতিয়া, ভোলা ও পটুয়াখালী চ্যানেলর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। প্রাক্রিতিকভাবে মাত্র ১ শতাংশ পলি জমে চর পড়ে, যদি আমরা কোন প্রযুক্তি ব্যবহার না করি।
শাবিপ্রবি এর সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক ডঃ জি এম জাহিদ হাসান বলেছেনঃ পরিকল্পনার জন্য ভৌত মডেল তৈরি করা ব্যয় সাপেক্ষ ও জটিল। এ ব্যাপারে গানিতিক মডেলের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে ডাচ বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বহু গানিতিক মডেল তৈরি করা হয়েছিল। এই মডেলের মাধ্যমে বিস্তারিত ডাঁটা সংগ্রহ করা হয়েছে। যেমনঃ বঙ্গপসাগরের পানির স্তর কেমন, গভীরতা কথায় কত ও স্রোত কোন দিকে যাচ্ছে তা পরিস্কার নির্ণয় করা আছে। এই তথ্য সংগ্রহের জন্য অন্বেষা নামের একটি জাহাজ এখনও কাজ করছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা গেছে যে, ভুমি উদ্ধারের ক্ষেত্রে সন্দীপের উত্তরে উড়িরচর এবং ফেনী ও নোয়াখালীর ভূখণ্ড বেশ সম্বাবনাময়।
আমাদের দেশের বর্তমান নানা সমস্যা সমাধানে এই ভুমি উদ্ধার হতে পারে একটি যুগোপযোগী সমাধান। তাই সর্বশেষে শুধু এতটুকু বলার আছে, এই কাজটি কারো বাক্তিগত উদ্যোগে করা সম্ভব নয়। আমাদের সরকারে উচিৎ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বঙ্গপসাগর থেকে ভুমি উদ্ধার কাজ শুরু করা।