‘৭১: ইতিহাস চুরির উৎকৃষ্ট উদাহরণ

তাসনীম
Published : 14 March 2012, 01:09 PM
Updated : 14 March 2012, 01:09 PM

মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে। শত ইতিহাস অধ্যয়ন করে। ম্যারথন নাটক-সিনেমা দেখে। মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণকে যথার্থ ভাবে বুঝা, সঠিকভাবে অনুধাবন করা যারা আমরা যুদ্ধোত্তর প্রজন্ম তাদের পক্ষে কতটুকু সম্ভব এটা আপেক্ষিক ব্যাপার। এর কয়েকটা উল্লেখযোগ্য কারণ হল:

১.আওয়ামী লীগ কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সীমাহীনভাবে বিবৃতি ও চুরি। তারা সবসময় নিজেদের 'মুক্তিযুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন'দল দাবি করে আসছে। আজো তারা লজ্জাহীন ভাবে এ কথা প্রমাণের জন্য হরদম সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে যে ,

আওয়ামী লীগ না হলে এ দেশ স্বাধীন হত না। তারাই এ দেশের জনগণকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আরো সংক্ষেপে বলতে গেলে শেখ মুজিবুর রহমান না হলে মুক্তিযুদ্ধ , স্বাধীনতা কিচ্ছুই হত না। তাই মুজিব পরিবার এবং আওয়ামী লীগের প্রতি এ দেশ বাসির জনম জনম কৃতজ্ঞ থাকতেই হবে।

২.মু্ক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় মুক্তিযোদ্ধাদের কম আংশ গ্রহন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা এ কাজে এগিয়ে আসলে জাতি উপকৃত হত। লিখতে সক্ষম মুক্তিযোদ্ধারা যদি তাদের কাহিনীগুলো তুলে ধরত বা ধরে তাইলে নিশ্চিতভাবে আামরা অন্য এক গণযুদ্ধের মহাকাব্যিক ইতিহাস জানব।সম্প্রতি রণাঙ্গনের নায়কদের দিয়ে ইতিহাস লিখিয়ে নেয়ার একটা প্রচেষ্টা 'সংহতি' প্রকাশনী কর্তৃক লক্ষ্যণীয়। তাদের ধন্যবাদ।

৩.সৎ, নির্ভীক বুদ্ধিজীবীর নিদারুণ অভাব। শ্রদ্ধেয় আহমদ ছফা 'র মানের বুদ্ধিজীবী কয় জন আছে আমাদের? কলকতায় নেতাদের বিলাসী জীবন-যাপন নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র বানাতে গিয়ে খুন হয়ে যায় একটা যুগ- জহির রায়হান।

গত রাতে ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় – ঢাকা কলেজ সংঘর্ষে সাধারণ ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন, ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ এবং বিভিন্ন বাম সংগঠনের ভূমিকা দেখতে দেখতে আমার বার বার মুক্তিযুদ্ধের কথা ভাবতে ইচ্ছা হচ্ছিল। তার মানে এই নয় যে, '৭১ কে আমি গত রাতের ঘটনার সথে তুলনা করছি।বরং আমি যা চাইছি তা হল, ঘটনা দিয়ে ঘটনা বুঝার একধরনের চেষ্টা মাত্র। কখনো '৭১ 'র তীব্রতা বুঝার অপচেষ্টা নয়। ঘটনার ব্যাপ্তি, ইতিহাস, পরিসর, পরিবেশ-পরিস্থিতি, পক্ষ যতই অমিল হউক না কেন, উভয় ঘটনার মধ্যে আমরা মোটা দাগে কিছু মিল খুঁজে পাব। যেমন:

ক.'৭১ এর সময়টাতে আওয়ামী লীগ সংগত কারনে যেমন নেতৃত্বে ছিল, বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগেও সে রকম অবস্থায়।

খ.মুক্তিযুদ্ধের জন্য আওয়ামী লীগ যেমন অপ্রস্তুত ছিল গত রাতের পরিস্থিতির জন্য ছাত্রলীগও ছিল অপ্রস্তুত।

গ.মুক্তিযুদ্ধে যেমন আওয়ামী লীগে একক ভাবে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ ছিল না বরং রাজাকাররা ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের পামর জনগণই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতিপক্ষ। ঠিক তেমনি ছাত্রলীগ নয় বরং ঢা.বি এর সাধারণ ছাত্ররাই ছিল ঢাকা কলেজের প্রতি পক্ষ।

ঘ.যুদ্ধের শেষের দিকে আওয়ামী লীগ যেমন আস্তে আস্তে পুরা পরিস্থিতির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে, গত রাতে ছাত্রলীগও তাই করে।

ঙ.যুদ্ধ চলাকলে মুক্তিবাহিনী এবং 'আওয়ামী সার্টিফাইড' বাহিনীর মধ্যে যেমন যুদ্ধ হয়েছিল, গত রাতে সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সাধারণ ছাত্ররা ছাত্রলীগের নেতাদের পিঠাইছে।

চ.কিছু বামপন্থী মুক্তিযুদ্ধকে যেমন দু' কুকুরের লড়াই বলে যুদ্ধ থেকে বিরত ছিল , গত রাতের ঘটনাইও কিছু বাম ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বের অবস্থান ঠিক তেমন। অবশ্যই অনেকের অবস্থান ভিন্ন ছিল।

ছ.মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ জনগণের যেরকম স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন ছিল গত রাতের ঘটনাতেও সাধারন ছাত্রদের অংশগ্রহন ছিল অনেকটা সেরকম।

জ.যুদ্ধে মাঠে ছিল না আওয়ামী লীগ নেতারা। ছিল নিরাপদ বিলাস বহুল বাস ভবনে। ঢা.বি.ছাত্রলীগের অবস্থাও ছিল অনেকটা সে ধরনের।

গত রাতের ঘটনার সাথে '৭১ 'র কাহিনী মিলিয়ে ভাববার চেষ্টা করতেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ নিয়মিত কি পরিমাণ মিথ্যাচার করে আসছে তা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করছি।