মাননীয় অর্থমন্ত্রী কি সত্যি-ই দুঃখিত?

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 7 Sept 2012, 12:31 PM
Updated : 7 Sept 2012, 12:31 PM

হল মার্ক গ্রুপের ঋণের অঙ্ক নিয়ে করা "চার হাজার কোটি টাকা তেমন কিছু না, মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তা প্রত্যাহার করেছেন। কথা হচ্ছে তিনি কি সত্যিই দুঃখিত? না তোপের মুখে পরে বাধ্য হয়ে দুঃখ প্রকাশ করে আত্মরক্ষা করেছেন? প্রশ্নটা এ জন্য এসেছে কারণ দুঃখ প্রকাশের খবরের সাথে সাথে আরও একটি খবর এসেছে আর তা হল।

বাংলাদেশ ব্যাংক হল মার্ককে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে। পরিচালনা পর্ষদ বিশেষ করে চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল দায়ী বলে মনে করে; যে পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়ার সুপারিশ করেন সেই পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো হচ্ছেই না বরং স্বপদেই বহাল রাখা হল এর চেয়ারম্যান কাজী বাহারুলকে।

অথচ তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। জানা যায় পরিচালনা পর্ষদের সভায় কোনও ঋণ প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে সেটি অধিকাংশ সদস্যের অমতেও তিনি পাস করাতে বাধ্য করতেন। এমনকি কাজী বাহারুলের ভয়ে অন্য পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সর্বদাই তটস্থ থাকেন।

সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুলের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:

•রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে স্মরণকালের ভয়াবহ ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশও মানেননি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম।

•হলমার্ক গ্রুপকে দফায় দফায় ঋণ দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এলে গভর্নর ড. আতিউর রহমান কাজী বাহারুল ইসলামকে একাধিকবার হলমার্কের ব্যাপারে খোঁজ
নিতে বললেও তিনি তা শোনেননি। বরং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তির রেফারেন্স দিয়েছেন। বলেছেন সব নিয়ম মেনেই করা হচ্ছে।

•ঋণের বিপরীতে হলমার্কের কাছ থেকে মর্টগেজ না নেওয়া হলেও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবীর ও চেয়ারম্যান কাজী বাহারুলের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন রূপসী বাংলা শাখাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ফলে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণের অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে হলমার্কের হাতে।

•তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়াতে আধিপত্য বজায় রেখে নিজের পছন্দ ও আত্নীয়স্বজনদের নিয়োগ দিয়েছেন কাজী বাহারুল। গত তিন বছরে তার রেফারেন্স নিয়ে আবেদন করা অন্তত শতাধিক নতুন কর্মকর্তাকে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছে।

•তার বিরুদ্ধে ব্যাংকের পরিচালক ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজী বাহারুলকে বার বার সতর্ক করলেও তিনি নিজেকে শোধরাননি। বরং তার স্বেচ্ছাচারিতা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এখনো অব্যাহত।

•জানা গেছে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদন ও ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে কাজী বাহারুল ইসলাম অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন অহরহ।

•যখন তখন কর্মকর্তাদের ফোন করে নিজ রুমে ডেকে নিয়ে তার পছন্দের ব্যক্তিদের ঋণ প্রস্তাবের ফাইল দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন।

•ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও পরিচালকেরা সায় না দিলেও তিনি ঋণ মঞ্জুরে চাপ প্রয়োগ করতেন। যেসব কর্মকর্তা তা যাচাই-বাছাই করতেন তাদের ভালো রিপোর্ট দিতে প্রলুব্ধ করতেন। বিনিময়ে তাদের প্রমোশন, বেতন বৃদ্ধিসহ আর্থিক সুবিধা দেওয়ার লোভ দেখাতেন।

•জানা গেছে, তার স্বেচ্ছাচারিতার ফলেই এক বছরের ব্যবধানে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

•যেসব ঋণগ্রহীতা কাজী বাহারুলের রেফারেন্সে ঋণ নিতেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাদের ঋণ পরিশোধের তাগাদা দিলে ঋণগ্রহীতারা তার (চেয়ারম্যানের) কথা বলে সময় বাড়িয়ে নেন।

•জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক শুধু হলমার্ক গ্রুপকেই অনৈতিকভাবে ঋণ সুবিধা দেয়নি, এ ধরনের অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে সুবিধা দিয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছেন চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল। আলোচিত হলমার্ক ছাড়াও আরও কয়েকটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠান দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ চেয়ারম্যানের যোগসাজশে সোনালী ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছে।
তবু কি বিশ্বাস করব, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আন্তরিক? তিনি তার ভুল বুঝতে পেড়েছেন? যদিও কোনটি ভুল তা নিয়ে যথেষ্ট তর্কযুদ্ধের সুযোগ রয়েছে। ১৬কোটি মানুষের চিন্তাধারা ভুল না মাননীয়'দের চিন্তাধারা ? যা হোক যেহেতু প্রথম দলের কাতারের নাদান একজন আমি। তাই ১৬ কোটি মানুষের চিন্তাধারাকেই সঠিক বলে মনে করেই বলছি। আমরা এর পূর্বে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি দেখেছি। তার মুখ থেকে "ফটকা বাজার" নামে নতুন অভিধাও পেয়েছি। আর তার পরিণতি তো দেখছিই। পদ্মা সেতু নিয়ে তার মুখ নিঃসৃত যে অমীয়বানী আমরা নিত্য শ্রবণে ধন্য হচ্ছি তা নিশ্চয়ই পরবর্তী অর্থমন্ত্রীরা নথিভুক্ত করে রাখবেন এবং এ ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যাবহার করবেন। সবই করলেন সব শেষ করে। না করলেই পারতেন? কথাটা পদ্মা সেতু নিয়েই বলছি। হাত পেতে বসে আছেন। মুখে চোর বলে অপবাদ দিচ্ছেন। সত্যিই বড় জটিল এই সূত্র।

পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে না দেওয়ার যুক্তি দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, "তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত যেন চলতে পারে, সেজন্য পর্ষদ থাকা দরকার।"

যখন যেমন সুবিধা তাই বলে যান। নাদান আমরা শুনে যাই। আমাদের কথা বলতে নেই কারণ শুনবেটা কে? তাই পূর্বে যেমন কায়মনোবাক্যে সমবেত আবেদন ছিল আল্লাহ তাঁকে সংযত কথা বলার ক্ষমতা দান করুন। মহান আল্লাহ তাকে সুমতি দান করেছেন। তেমনি আজ আর একবার সমবেত আবেদন জানাই আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন যেন আরএকবার আমাদের সহযোগীতা
করেন।

kmgmehadi@yahoo.com
সূত্র: বিডিনিউজ২৪.কম, বাংলাদেশ প্রতিদিন।