আইন হাতে তুলে নেয়ার শাস্তি যেন হয় ভয়াবহ এবং দৃষ্টান্তমূলক

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 16 July 2015, 03:34 PM
Updated : 16 July 2015, 03:34 PM

গতকাল বেলা ২ টা কমলাপুর রেল ষ্টেশন থেকে মুল সড়কে উঠেছি। পুরো রাস্তা রিকশার জ্যাম। হঠাত দেখতে পেলাম একটি ১০/১১ বছরের ছেলের (যাকে আমরা সাধারণত টোকাই বলে চিনি) এক হাত ধরে আছড়ে ফেলল এক রিকশাওয়ালা। মাথায় রক্ত উঠে গেল, দৌড়ে গিয়ে ছেলেটাকে ওর হাত থেকে ছাড়ালাম। চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এই ওকে এভাবে মারছিস ক্যান? ছেলেটার হাতে একটা কাঠের ব্রাশ নির্দেশ করে সে উল্টো জানতে চাইল দেখেছেন কত জোড়ে আমার রিকশাটার উপর বাড়ি মারছে?

বললাম, তাই বলে ওকে মেরে ফেলবি?

বাচ্চা ছেলেটা ততক্ষণে ছুটে পালিয়েছে রিকশাওয়ালা রাগে গজগজ করে চলে গেল। ২/৩ মিনিটের নাটকটি আশেপাশে অন্তত শ'খানেক লোক ভাবলেশহীন উপভোগ করল।

যদি ঐ মুহুর্তে ঐ দানবটাকে নিবৃত্ত করতে না পারতাম কে জানে আরেকটা রাজন কাহিনীর জন্ম হত না। যদি তেমনি মর্মান্তিক কিছু হত। আমরা অনলাইনে-অফলাইনে প্রতিবাদে ফেটে পড়তাম। নিজেদের মানবিক সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। অথচ চোখের সামনে একটি ঘটনা ঘটতে দেখে আমরা কেমন নির্বিকার হয়ে যাই।

ময়না তদন্তের রিপোর্টে রাজনের শরিরে চৌষট্টিটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এটা তো অল্প সময়ের ঘটনা হতে পারে না। ঐ এলাকায় কি একজন মানবিক মানুষ ছিল না যে শুরুতেই দানবদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতে পারত। তাহলে তো শিশুটিকে এমন নির্মম মৃত্যুর স্বীকার হতে হত না। আমরা এত অমানবিক কেন ?

কেন এতটা এককেন্দ্রিক হয়ে উঠেছি? আমরা কিছুতেই অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তান ভাবতে পারছি না। অন্যের ভাইকে ভাবতে পারছি না নিজের ভাই বলে।

আজ একটি আন্দোলন গড়ে তোলা খুব জরুরী, আর তা হল মানবিক হয়ে ওঠার আন্দোলন। তবে তারও আগে আসুন আমি-আপনি আমরা মানবিক হই।

আমাদের রাজনীতি, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এমনকি পরিবার থেকে পর্যন্ত মানবতা বোধ ভয়াবহ আকারে লোপ পেয়েছে। এর থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে এ সমাজ মানুষের বাসযোগ্যতা হারাবে।

আজ আই এস এর নৃশংসতা দেখে। ইসরাইলের নৃশংসতা দেখে আমরা আঁতকে উঠি। প্রতিবাদে ফেটে পড়ি। অথচ আমার ঘরের পাশেই অথবা আমার ঘরেই লালন করছি একই রকম নৃশংস ঠাণ্ডা মাথার খুনি!

পচন ধরেছে আমাদের বোধে, তাই প্রাণের স্পর্শ নেই কোথাও। ভব্যতা আমাদের ভালবাসতে উদ্বুদ্ধ করছে না অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে উদ্বুদ্ধ করছে। আমাদের প্রতিবাদ আমাদের প্রতিরোধ পর্যন্ত আজ যন্ত্র নির্ভর! এতটাই যান্ত্রিক হয়ে পড়েছি আমরা। রাজনকে মেরে ফেলা হয়েছে প্রকাশ্যে। আমি ভয়ে আজ অবধি ভিডিওটা দেখিনি শুধু স্থির চিত্র গুলো দেখেছি। আর সেখানেই দেখা গেছে উপস্থিত দর্শকরা শিশুটির মৃত্যু যন্ত্রণা দেখে হাসছে! তারা কি মানুষ? তারাও কি খুনি নয়?

বাংলাদেশে এমন ঘটনাও কি এই প্রথম ঘটল?
আমরা ভুলে গেছি ২০১১ সালের ১৭ জুলাই সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামে গণপিটুনিতে ছয় ছাত্র নিহতের কথা। সূত্রঃ প্রথম আলো।
একই বছর ৯ আগস্ট নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে কিশোর শামছুদ্দিন মিলনকে (১৬) পুলিশের একটি গাড়ি থেকে নামিয়ে জনতার হাতে তুলে দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সূত্রঃ প্রথম আলো।

২৮ জুলাই, ২০১৪ – ক্ষুব্ধ জনতার হাতে তুলে দিয়ে গণপিটুনির মাধ্যমে এক ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায় পুলিশের বিরুদ্ধে। এ সময় ছেলেহারা বাবা সাইফুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বুক চাপড়ে বলছিলেন, 'আমার চোখের সামনেই পুলিশ রবিনকে লোকজনের হাতে তুলে দিল। সূত্রঃ কালের কণ্ঠ।

আজ আমি মহামান্য সর্বোচ্চ আদালতের কাছ থেকে এমনতর একটি নির্দেশনা চাই, যেখানে যে কোন গণপিটুনির সাথে জড়িত প্রত্যেককে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। আইন হাতে তুলে নেয়ার শাস্তি যেন হয় ভয়াবহ এবং দৃষ্টান্তমূলক।

সেই সাথে এই ধরনের ঘটনার চার্জশীট প্রদানের ক্ষেত্রে কোন রকমের কোন শৈথিল্যের বিরুদ্ধেও যেন একই রকম শাস্তির বিধান রাখা হয়। কোন জাতি বর্বর হয়ে উঠে তাদেরকে মানবিক করতে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের বিকল্প থাকে না। যদি নিজে থেকে মানবিক না হতে পারি সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র তার সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে এ সমাজকে এ রাষ্ট্রকে বাসোপযোগী করবে রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের প্রাণের দাবী।

kmgmehadi@gmail.com