বেগম জিয়ার সিদ্ধান্তটি শেষ পর্যন্ত স্মার্ট থাকবে তো?

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 12 August 2015, 04:58 AM
Updated : 12 August 2015, 04:58 AM


বেগম জিয়া ইদানীং স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছেন। অন্য সব দিকে তিনি অনেক আগে থেকেই বেশ স্মার্ট। তবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ততটা স্মার্টনেসের পরিচয় দিতে তিনি আজো সক্ষম হননি। রাজনীতিতে এই দলটি বিশেষ করে বেগম জিয়া যতটা সাফল্য লাভ করেছেন তার অনেকটাই ভাগ্য গুনে এবং রাজনৈতিক শূন্যতার ফলে। যদিও দুর্জনেরা বলে ষড়যন্ত্রে সিদ্ধ হস্ত হওয়ার ফলেই বিএনপির এত সাফল্য।

যে যাই বলুক আর যে কারণেই হোক। বিএনপির সফলতা তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এটা ঠিক যে বিএনপির অতিবড় শুভাকাঙ্ক্ষীও এই দলটিকে স্মার্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধান্বিত হবেন।
রাজনীতিতে নাটকীয়ভাবে সাফল্য লাভ মাঝে মাঝেই দেখা যায় তবে সেই সাফল্য ধরে রাখতে হলে অনেক বেশী উদার নৈতিক এবং স্মার্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরী। যা বিএনপি কখনোই নিতে পারেনি। না ক্ষমতায় থাকতে না ক্ষমতার বাইরে গিয়ে। শুধুমাত্র অন্যের দোষকে পুঁজি করেই এগিয়ে যাওয়া যায় না। সাথে নিজেদের কিছু গুণাবলীও দৃশ্যমান হতে হয়। সেই গুনটি তারা কখনোই দেখাতে পারেননি। বরং বিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির ত্রুটি সমূহ বিএনপি নেতৃত্বের ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছিল। যা তাদের ছুঁড়ে ফেলেছিল ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে। তথাপিও দলটির বোধোদয় হয়নি। এক গুয়েমী আর বিদেশী প্রভুদের তারা যতটা হিসেবে নিয়েছিল তার সিকিভাগও সাধারণ মানুষকে নেয়নি। মিথ্যে জুজুর ভয় দেখিয়ে যা শত্তুরের দশকে সম্ভব ছিল তা এই সময়েও সম্ভব এটা ভাবাই তোঁ একটি বড় পশ্চাৎমুখিতা।

এত কাঠখড় পুড়িয়ে এত জ্বালাও পোড়াও শেষে তবু যদি এই দলটি ও তাদের নেত্রীর বোধোদয় হয় সেটা অবশ্যই স্বস্তির।
বেগম জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় কলঙ্ক এই মিথ্যে জন্মদিন পালনের বিরক্তিকর খায়েশ। বঙ্গবন্ধু কোন ব্যক্তি বিশেষ নন তিনি একটি প্রতিষ্ঠান তিনি এ জাতির জনক শুধু নন একটি উন্নত সমৃদ্ধ জাতির স্বপ্নদ্রষ্টাও বটে। তার হত্যাকারীদের সহযোগিতা করা তার মৃত্যু দিবসটিকে মিথ্যে জন্মদিনের নামে উল্লাস করা এটা কোন সুস্থ মস্তিষ্ক প্রসূত ভাবনা হতে পারে না। এ তো নিজেকে ঐ হত্যাকাণ্ডের একজন সমর্থক হিসেবে প্রমাণ করারই নামান্তর। এত গুলি বছর বিএনপি নামক দলটি এই লজ্জাস্কর কাজটি অবলীলায় করে আসছিল। আজ যখন তারা ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তখন আত্ম রক্ষার্থে হোক আর আত্মপলব্ধির কারণেই হোক এই দিনটিকে এড়িয়ে যেতে চাইছেন। আমি একে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।
আর সে কারণেই বলছি বিএনপি বহুদিন পরে একটি স্মার্ট রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর সেটি হল পনের আগস্ট বিএনপি নেত্রীর দেশে না থাকার সিদ্ধান্ত অর্থাৎ ভয়ঙ্কর ভুয়া জন্মদিনটি দেশের মাটিতে পালন না করার সিদ্ধান্ত।

তবে তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে তিনি যেখানেই থাকুন ক্যামেরার ফ্ল্যাশ তাকে ঘিরেই থাকবে। সেদিন তিনি যেখানেই থাকুন না কেন যে কোন কৌশলেই হোক না কেন এই কেক কাটাকে যদি পরিহার করতে পারেন তবেই এটি হবে তার সময়োপযোগী একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। বলার অপেক্ষা রাখে বিএনপির সমর্থক গোষ্ঠী অনেক দিন পড়ে তাদের নেত্রী সম্পর্কে একটি ইতিবাচক কথা বলার সুযোগ পাবে। আর তা না করে তিনি যদি বিদেশের মাটিতে বসেও ঐ একই কাজ করেন তাহলে এই স্মার্ট সিদ্ধান্তটিই একটি আনস্মার্ট সিদ্ধান্তে পর্যবসিত হবে। যা হবে তার পলায়নপর মনোবৃত্তির পরিচায়ক।

কাজেই আমরা আশা করব ১৫ আগস্ট দিনটিতে তিনি যে দেশের মাটিতেই অবস্থান করুন না কেন এই অনৈতিক কাজটি যেন সেখানে বসে না করেন। আমরা চাই আমাদের নেতৃবৃন্দ মানবিক হোন। সৎ ও নিষ্ঠাবান হোন। তারা যেন পূর্বসূরিদের যোগ্য সম্মান দেন। হীনমন্যতা-স্বার্থপরতা সর্বোপরি তারা যেন প্রতিহিংসাপরায়নতা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন। এ কথা আজ তারা অস্বীকার করতে পারবেন না এ দেশে সামাজিক যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে আমরা প্রতিনিয়ত যে অমানবিকতার সাক্ষী হচ্ছি তার পেছনে রাজনীতিবিদদের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। যা দূরীকরণেও তাদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

অনেককেই বলতে শুনেছি আপনার ১৫ আগস্ট শিশু জন্ম বন্ধ করার আইন করুন। যারা এ দিনে জন্ম গ্রহণ করেছেন তাদের বলে দিন তারা যেন এই দিনে জন্মদিন পালন না করে ইত্যাদি। যারা এই কথাগুলো বলেন আসলে তারা কতটা সুস্থ চিন্তার অধিকারী সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ, তারা আসল সত্যিটা চাপা দিতেই এ কথাটি বলেন। ১৫ আগস্ট যদি বেগম জিয়ার সত্যিই জন্মদিন হত তাহলে হয়ত এই প্রসঙ্গটার উদ্ভবই হত না। কেউ কেউ হয়ত এ দিনটিতে উল্লাস প্রকাশে বড়জোর মানসিক কষ্ট পেত কিন্তু তাকে কেউই নিষেধ করতে যেত না। আজ আমাদের প্রতিবাদটা মূলত একটি মিথ্যে দিয়ে একটি শোক দিবসকে ব্যঙ্গ করার বিরুদ্ধেই। বেগম জিয়ার জন্মদিন পালনের বিরুদ্ধে নেই। একজন নেত্রী হয়ে তিনি আজ পর্যন্ত তার পাঁচটি জন্মদিনের কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন? যারা এর সপক্ষে তাদের কাছেই বা এর কি ব্যাখ্যা আছে? অতএব অন্ধ না হয়ে চক্ষুষ্মান হন। সত্যকে স্বীকার করে নিন।

kmgmehad@gmail.com