আমাদের টিভি চ্যানেলে শিশুরা উপেক্ষিত

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 20 August 2015, 05:26 AM
Updated : 20 August 2015, 05:26 AM


আমার ছেলেকে দেখলাম একটি কাগজের টুকরো হাতে নিয়ে কিছু একটা দেখল তারপরে আবার কাগজটি খুব যত্ন করে রেখে দিচ্ছে। বেশ কৌতূহল নিয়েই সেটা দেখতে চাইলাম ও চিৎকার করে বলল বাবা ওটা ফেল না ফেল না। বললাম ফেলছি না এখানে কি আছে তাই দেখছি। দেখলাম ওর কাচা হাতে পেন্সিল দিয়ে কয়েকটি সংখ্যা লিখে রেখেছে। জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো কিসের নাম্বার? ও মাথা নিচু করে বলল, কার্টুন চ্যানেলের। বুঝলাম চ্যানেলের নাম্বারগুলি ভুলে যাওয়ার ভয়ে সে লিখে রেখেছে। বলা বাহুল্য চ্যানেলগুলির একটিও বাংলাদেশের নয়। মনে মনে বেশ বিরক্ত হচ্ছিলাম এই ভেবে যে, দেশে এতগুলি টিভি চ্যানেল অথচ একটিও শিশুতোষ চ্যানেল নেই কেন? কেন আমার ৬ বছরের শিশুটি বাংলার চেয়ে হিন্দিতে বেশি পারদর্শী হতে শিখবে?

এই টিভি চ্যানেলগুলির টার্গেট দর্শকই বা কারা? এতগুলি চ্যানেল অথচ একটি চ্যানেলের অনুষ্ঠানেও কোন নতুনত্ব নেই। একই টক শো, একই গল্পের নাটক। কিছু বিদেশি চ্যানেলের নকল অনুষ্ঠান। কোন মানে হয়?

শিশুদের টার্গেট করে আপনি পণ্য তৈরি করছেন। সেই পণ্যের বিজ্ঞাপন বানাচ্ছেন সারাদিন প্রচার করছেন অথচ শিশুতোষ অনুষ্ঠান তৈরি করছেন না। শিশুদের টার্গেট করে তৈরি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন বড়দের জন্য তৈরি অনুষ্ঠানে। কি অদ্ভুত আপনাদের বিচার বুদ্ধি!

অনেককে এও বলতে শুনেছি, শিশুদের জন্য তৈরি পণ্যের ক্রেতা তো তার মা কাজেই বিজ্ঞাপন বড়দের জন্য তৈরি অনুষ্ঠানে প্রচার করলেও ফল মেলে। যারা এই তত্ত্বে বিশ্বাসি তাদের বলছি, একটি জরিপ চালিয়ে দেখুন এ দেশের মায়েরা স্টার প্লাস, জিটিভি আর জলসা নিয়েই বেশির ভাগ সময় কাটান। এক চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেলে যেতে যদি কোনভাবে এ দেশের কোন টিভি চ্যানেলের কয়েক সেকেন্ডের সুযোগ হয় সেই অনেক। কাজেই ঐ তত্ত্বটিও সঠিক নয়।

সবচেয়ে হাস্যকর লাগে একটি চ্যানেলে সিসিমপুর কবে কয়টায় হবে সেই বিজ্ঞাপন দিতে দেখে। তাও আবার সময়টা শিশুদের জন্য আদর্শ সময় নয়। যেখানে একটি শিশু চ্যানেল পালটালেই তার প্রিয় কার্টুন চ্যানেলগুলি পেয়ে যায়। সেখানে আপনি তাকে বলছেন, বাবা দু'দিন অপেক্ষা কর আমরা তোমার জন্য এক ঘণ্টার একটি ধার করা অনুষ্ঠান দেখাব! এই মেধা এই মানসিকতা নিয়ে আপনারা টিভি চ্যানেল চালাচ্ছেন!

ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালে দেখলাম ভারতের একটি টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের খেলার বাংলা ধারা বিবরণী প্রচার করছে। বেশিরভাগ মানুষ তখন সব ছেড়ে ঐ চ্যানেলটিতে চোখ রাখছে। এ দেশের মাথা মোটা চ্যানেলের কর্তা ব্যক্তিদের কি এ সব চোখেও পড়ে না। আরে নিজের মাথায় না থাকলে অন্যদেরটা দেখেও তো শিখতে হয় না কি?

এ ক্ষেত্রে জি বাংলা একটি অনন্য উদাহরন সৃষ্টি করেছে যারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আইডিয়া দিচ্ছে। যেখানে সাধারন মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। নানামুখি প্রতিভার বিচ্ছুরন ঘটছে। আসলে এটা করতে হলে যে সাহস যে মেধা এবং সর্বোপরি প্রতিনিয়ত নিজেকে ছারিয়ে যাওয়ার যে সংকল্প থাকতে হয় আমাদের চ্যানেলগুলির কর্তাব্যক্তিদের সেই ঘাটতিটাই সবথেকে বেশি অনুভুত হচ্ছে। তবে এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি এই চ্যানেলগুলি এভাবে খুব বেশদিন চলতে পারবে না। হয় তাদের অনেক বেশি সৃজনশীল হতে হবে নয়ত অচিরেই পাততারি গোটাতে হবে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের এখন একটি চ্যানেলের অনুমতি দেয়ার আগে তাদের মেধাটা যাচাই করে দেখা উচিৎ। সেই সাথে এমন একটি নির্দেশনা প্রদান জরুরি যাতে দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় শিশুতোষ অনুষ্ঠান প্রচার বাধ্যতামূলক করা যায়। সম্ভব হলে দু'একটি শিশুতোষ চ্যানেলের ব্যবস্থা করা। আমি চাই না আমার ছেলে বলতে থাকুক, পাকিস্তান হোসমে আও। আমি চাই সে বলুক, জয় বাংলা। সে আপন মনেই গেয়ে উঠুক আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।

kmgmehadi@gmail.com