আসগর থেকে আয়লান এবং আরবরা আজো বর্বর

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 10 Sept 2015, 05:13 AM
Updated : 10 Sept 2015, 05:13 AM


ছেলেটা ভীষণ চতুর। সে তার মাকে বলল মা এখন থেকে আমি প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করব। ধর্মপ্রাণ মা' শুনে তো বেশ খুশি। আল্লাহ্‌ ছেলেটার সুমতি দান করেছেন। তো যাই হোক, ছেলে প্রতিদিন মাগরিব আর এশা'র নামাজ পড়তে মসজিদে যায়। কিন্তু মা লক্ষ করে দেখলেন ছেলেটা অন্য তিন ওয়াক্ত নামাজের কাছে থেকেও যায়না। বিষয়টা তিনি বুঝতে পারলেন। উদ্দেশ্য তো নামাজ পরা নয় উদ্দেশ্য পড়া ফাঁকি দেয়া। তিনি মহাবিপদে পরে গেলেন ছেলেকে মসজিদে যেতে নিষেধও করতে পারছেন না পাছে আল্লাহ্‌ রাগ করেন। আবার নামাজের নাম করে এভাবে পড়া ফাঁকিও মেনে নিতে পারছেন না। শেষে পাড়ার ঈমামকেই একদিন ডেকে পাঠালেন পরামর্শ করার জন্য। ঈমাম সাহেব সব শুনে বললেন যেহেতু আমি ওকে মসজিদে আসতে দেখি না কাজেই আপনি বলুন। হয় সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করবে নয়ত মাগরিব আর এশার নামাজ তাকে বাসায় বসেই আদায় করতে হবে। বলা বাহুল্য এই নির্দেশ জারীর পর থেকে আর ছেলেটার মাগরিব এবং এশার নামাজ আদায়ের উৎসাহ দেখা যায়নি।

গল্পটা এ জন্যেই বললাম, মহানবী সঃ এর জন্মস্থান-আবাস স্থান এবং ওফাত স্থান বলে যারা মক্কা-মদিনাকে সম্মানের পাশাপাশি এর শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন। তাদের শত অন্যায় আচরণকেও মেনে নেন তারা কি কাজটা ঠিক করছেন? মহান আল্লাহ্‌ কি তাদের এই অন্ধভক্তিকে মেনে নেবেন?

আপনারা কেন ভুলে যাচ্ছেন, নবী মুহাম্মদ (সা) এর নাতি হোসেইন ইবন আলীকে কারবালায় কারা হত্যা করেছিল। তারা কি অনারব ছিল? আপনি কি তাদেরকেও সমর্থন করবেন? কারবালার প্রান্তরের আলী রা: এর সেই শিশুপুত্র আসগরের পরিণতি আর আজকের সিরিয় কুর্দি শিশু আয়লানের পরিণতির মধ্যে কি পার্থক্য আপনি খুঁজে পান।

সেদিনের ইয়াজিদ এর সাথে কি আপনি আজকের আরব শাসকদের কোন পার্থক্য খুঁজে পান? উভয়ে ইসলামের আবরণে নিজেদের আড়াল করে আপন স্বার্থ সিদ্ধি করে যাচ্ছে। অনেকটা পিকে ছবিতে আমির খান যেমন ভগবানের ছবি অঙ্কিত স্টিকার গালে লাগিয়ে ধর্মান্ধদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছিল। সেদিন মহানবীর (সঃ) দৌহিত্র আফসোস করে বলেছিলেন তোমাদের মধ্যে কি একজনও মুসলমান নেই! অথচ তারা সবাই ছিলেন তথাকথিত মুসলিম। ঠিক একই ভাবে আজ আয়লানের বাবাও হয়ত একই প্রশ্ন আউরেছেন, উত্তর মেলেনি।

মুসলমানের বংশধর, ইসলামে লেবাস এবং মহানবী (সঃ) এর পবিত্র ভুমি কখনোই এর উপরে দাপিয়ে বেড়ানো অনাচারিদের দায়মুক্তি দেয় না। আপনি ধর্মান্ধ কাকে বলছেন যে না জেনে না বুঝে অন্যের ঘারে চাপাতি চালায় তাকে অথচ আপনি আমিই বা কম কিসে? আমরাও তো আরবদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছি না। এটা কি ধর্মান্ধতা নয়? আমাদের এটাও মনে রাখা উচিৎ মহানবি (সঃ) এর আগমন ঘটেছিল আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়ে আর সে স্থানটি ছিল এই আরব ভূমিই। আর মহানবীর (সঃ) এর ওফাতের পর পৃথিবীকে খুব বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়নি ইয়াজীদ বাহিনির অমানবিকতা দেখার জন্য।

ইয়াজিদের যখন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে মহানবীর দৌহিত্রকে পর্যন্ত তার শিশু সন্তান সহ হত্যা করতে বাধেনি আজকের আরব শাষকদের রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে গোটা আরব শ্মশান করতে বাধবে কেন? যারা এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছেন তাদের বলব যুক্তরাষ্ট্রের কাজই এটা কিন্তু আরব শাষকরা তাদের ব্যবহার করছে বা সুযোগ করে দিচ্ছে নিজেদের স্বার্থে। এখানে উভয়ই এক অ অভিন্ন।

kmgmehadi@gmail.com